ডোবা-নালার বদ্ধ পচা পানিতে কাঁচা সুপারি মজিয়ে তাতে বিষাক্ত রাসায়নিক হাইড্রোস মিশিয়ে বাজারজাত করছে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীরা।
এই সুপারি খেয়ে নানা ধরনের পেটের অসুখসহ স্বাস্থ্য ঝুঁকির শঙ্কা দেখছেন চিকিৎসকরা।
দেশের সীমান্ত অঞ্চল পঞ্চগড় জেলা। এ জেলায় প্রচুর পরিমাণে বিভিন্ন জাতের সুপারি উৎপাদিত হয়। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি হয়ে থাকে দেশের বিভিন্ন এলাকায়।
সারা বছর সুপারি বেচাকেনার ধুম লেগে থাকে পঞ্চগড় জেলার বিভিন্ন হাটবাজারে। ঐতিহ্যগত কারণে এ জেলার ৮০ শতাংশ মানুষ মজা সুপারিতে আসক্ত।
অনেক আগ থেকে স্থানীয় লোকজন কাঁচা সুপারি মাটির নিচে বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে ৬ মাস পর্যন্ত পুঁতে রাখতেন। এ-গুলোই মজা সুপারি হিসেবে পরিচিত। কাঁচা সুপারির চেয়ে এর বাজারমূল্য বেশি। যুগ যুগ ধরে এই সুপারি খাওয়ার চল এই জেলায়।
কিন্তু কয়েক বছর ধরে এসেছে সুপারি মজানোর নতুন পদ্ধতি। এক শ্রেণির ব্যবসায়ীরা ডোবা নালার পানিতে প্লাস্টিকের বস্তায় করে কাঁচা সুপারি পচিয়ে নিচ্ছেন। সেই সুপারিকে আকর্ষণীয় করতে মেশাচ্ছেন বিষাক্ত হাইড্রোস কেমিক্যাল।
৪ থেকে ৫ মাস পর্যন্ত এই সুপারি নোংরা পানিতে পচতে থাকার ফলে বিষাক্ত পানির নির্জাস ধারণ করছে। সুপারির রং হচ্ছে কালো এবং দুর্গন্ধযুক্ত। তবে হাইড্রোস মেশানোর ফলে সেই কালো সুপারি হয়ে যাচ্ছে সুন্দর এবং দুর্গন্ধমুক্ত।
চিকিৎসকরা বলছেন, হাইড্রোসসহ বিষাক্ত পানির নির্জাসযুক্ত এই সুপারি মানবদেহের জন্যে ক্ষতিকর। এই সুপারি খেলে নানা ধরণের রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের চিকিৎসক সিরাজউদৌল্লাহ জানান, এই পদ্ধতিতে সুপারি মজিয়ে খাওয়া মানবদেহের জন্যে ক্ষতিকর। বিষাক্ত রাসায়নিক মেশানো সুপারি খেলে মুখে ক্ষতসহ নানা ধরনের রোগ হতে পারে।
ডোবায় মজানো সুপারি বিক্রির জন্য হাটে আনা হয়েছে। ছবি: নিউজবাংলা
একই উপজেলার সুপারি ব্যবসায়ী আবদুল লতিফ বলেন, কাঁচা সুপারির চেয়ে মজা সুপারির দাম দ্বিগুণ। ব্যবসায় লাভের আশায় তিনি ১ যুগ ধরে এই পদ্ধতিতে সুপারির ব্যবসা করে আসছেন।
পঞ্চগড় পৌরসভার স্বাস্থ্য পরিদর্শক মো. হুমায়ুন কবির বলেন, মুনাফার লোভে মানুষ নীতি-নৈতিকতা হারিয়ে ফেলেছে। আইন প্রয়োগ করে এদের প্রতিরোধ করা কঠিন। দরকার জনসচেতনতা তৈরি করা। নিরাপদ খাদ্য বিপণন নিয়ে আমরা বিভিন্ন মহলে কাজ করছি। তার পরও মানুষকে সচেতন করা যাচ্ছে না।