মেহেরপুরের দুটি উপজেলায় সহকারী কমিশনার (ভূমি) না থাকায় জমির নামজারি করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন হাজারও মানুষ। এর মধ্যে একটি উপজেলা হলো গাংনী, অন্যটি মুজিবনগর।
এসি ল্যান্ড না থাকায় দিনের পর দিন ঘুরতে হচ্ছে এ দুটি উপজেলার সেবা প্রত্যাশীদের।
৯টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত গাংনী উপজেলা। এ উপজেলায় ৩ লাখেরও বেশি মানুষের বসবাস। তাদের জমিসংক্রান্ত সেবা দেয়া হয় উপজেলা ভূমি অফিস থেকে। অথচ দুই মাস আগে এখানকার সহকারী কমিশনার (এসি ল্যান্ড) বদলি হয়ে অন্য উপজেলায় চলে গেছেন।
এরপর থেকে এ পদে কোনো কর্মকর্তা না থাকায় জমির নামজারি করতে বিপাকে পড়েছেন হাজারও মানুষ। দিনের পর দিন ঘুরেও তারা কোনো সমাধান পাচ্ছেন না। অথচ তাদের কেউ কেউ জমি বিক্রি করে যাবেন বিদেশে, কেউ করাবেন চিকিৎসার মতো জরুরি কাজ।
কর্মকর্তা না থাকায় গত দুই মাসে গাংনী উপজেলা ভূমি অফিসে জমির নামজারি করার আবেদন জমা পড়েছে আড়াই হাজারেরও বেশি।
গাংনী ভূমি অফিসে জমি খারিজ করতে আসা কাজিপুর গ্রামের লতা রানি বলেন, ‘আমার একটা খারিজের কেস আছে এসি ল্যান্ড অফিসে। স্বামী অসুস্থ। তাই সে আসতে পারে না। আমি দুই মাস ধরে ঘুরছি। খারিজের কাগজ পাচ্ছি না। একটা থানায় যদি অফিসার না থাকে তাহলে অফিস চলে কীভাবে? জমিটা বায়না হয়ে গেছে। খারিজের কাগজ না থাকায় রেজিস্ট্রি করাতে পারছি না।’
একই উপজেলার আব্দুল আলিম বলেন, ‘এসি ল্যান্ড না থাকায় আমাদের খুব ভোগান্তি হচ্ছে।’
বাহারাইন থেকে ছুটিতে দেশে ফেরা গাংনীর ছাতিয়ান গ্রামের আবুল কালাম জানান, তিনি বিদেশে থাকা অবস্থায় ব্যাংকের মাধ্যমে বাড়িতে টাকা পাঠিয়ে এক বিঘা জমি কিনেছেন। দুই মাসের ছুটিতে তিনি এখন বাড়িতে আছেন। ভেবেছিলেন এই সময়ের মধ্যে জমিটি খারিজ করে নেবেন। কিন্তু ছুটি শেষ হয়ে যাচ্ছে। এসি ল্যান্ড না থাকায় জমি খারিজ না করেই আবারও বিদেশে চলে যেতে হবে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি।
অন্যদিকে ৪টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত মুজিবনগর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) পদটি শূন্য হয়ে আছে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে। বতর্মানে মুজিবনগর ভূমি অফিসে অতিরিক্তি দায়িত্ব পালন করছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। এ উপজেলায় দ্রুত এসি ল্যান্ড নিয়োগ দিয়ে দুর্ভোগ কমানোর দাবি সেবা প্রত্যাশীদের।
মুজিব নগর উপজেলার বাসিন্দা ফারুক হোসেন বলেন, ‘আমার ছেলেকে বিদেশে পাঠাবো। টাকা দরকার। তাই একটা জমি বিক্রি করবো। কিন্তু জমিটা খারিজ না থাকায় ক্রেতা পেয়েও বিক্রি করতে পারছি না।’
নতুন এসি ল্যান্ড যোগদানের বিষয়ে গাংনী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মৌসুমী খানম বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে গাংনীতে অ্যাসিল্যান্ড যোগদানের বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছি। তার সঙ্গে মোবাইলে আমার কথাও হয়েছে। হয়তো আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে তিনি কর্মস্থলে এসে যোগদান করবেন।’
এ বিষয়ে মেহেরপুর-১ আসনের সাংসদ ও জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন মোবাইল ফোনে জানান, ‘নাম খারিজের বিষয়টি এখন অনলাইনে এবং খুব দ্রুত দেয়ার ব্যবস্থা আছে। ডিজিটাইজেশন হয়েছে অনেকটা। কতদিন ধরে পড়ে আছে সেটি এবং ইউএনও কী ব্যবস্থা নিয়েছে তা জানা দরকার। জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলি। দ্রুত সময়ের মধ্যে যেন এসি ল্যান্ড নিয়োগ হয় সে বিষয়টিও দেখছি।’