কিশোরগঞ্জ শহরে বখাটেদের উৎপাতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নতুন একটি টিম গঠনের মাধ্যমে কাজ করছে পুলিশ। সাধারণ মানুষ এ টিমের নাম দিয়েছে ‘হোন্ডা পার্টি’।
প্রতিদিন বিকেলে ও সন্ধ্যায় প্রায় বিশটি মোটর সাইকেলে করে শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে টহল দিচ্ছে পুলিশের কয়েকটি দল।
শহরের বিভিন্ন অলিতে-গলিতে বখাটের আড্ডার স্থানগুলোতে অভিযান পরিচালনা করছে বাহিনীটি। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে উঠতি বয়সী বখাটেদের উৎপাত ও অপরাধ দমনে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে এই উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে এবং সেটি অব্যাহত থাকবে।
এক মাস ধরে পুলিশের এই টহলে শহরবাসীর মধ্যে কিছুটা স্বস্তিও এসেছে।
গুরুদয়াল সরকারি কলেজের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জান্নাত মিশু বলেন, ‘কিছুদিন আগেও কলেজের ফটকে উঠতি বয়সী ছেলেদের আড্ডা থাকত। সেখান দিয়ে যাওয়াই ছিল বিব্রতকর। এখন বাজে আড্ডা আর চোখে পড়ে না৷ সন্ধ্যার পরে কলেজের মাঠে মুক্তমঞ্চে বসে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সময় কাটানো যায়। এজন্য পুলিশকে ধন্যবাদ দেয়াই যায়।’
একই কলেজের মাস্টার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী শরীফ আহমেদ বলেন, ‘কিছুদিন আগেও সন্ধ্যার পরে বাসা থেকে বের হলে দেখতাম গলিতে উঠতি বয়সী ছেলেদের জটলা। অনেক সময় এসব অলিতে-গলিতে ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটেছে। এখন গলি একদম ফাঁকা থাকে। কিশোর অপরাধ অনেকটাই কমে এসেছে। রাত ৮টা বা ১০টাতেও বের হলে আমাদের মধ্যে একটা স্বস্তি কাজ করে।’
চরশোলাকিয়া এলাকার এক মুদি দোকানি জানান, তার দোকানের পাশেই একটি ফাঁকা জায়গা রয়েছে। উঠতি বয়সীরা দলবদ্ধভাবে দিনভর আড্ডা দিত, চলত মাদক সেবন। ফলে এদিক দিয়ে আসা-যাওয়া করতে অনেকে সমস্যার পড়তেন। পুলিশের অভিযানে এখন সেখানে আড্ডাবাজি আর নেই।
ওয়ালীনেওয়াজ খান কলেজের প্রভাষক মনিরুল ইসলাম ফয়সাল বলেন, ‘পুলিশের পাশাপাশি অভিভাবক এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেকেও এ বিষয়ে এগিয়ে আসতে হবে। সামাজিক ক্ষেত্রে সচেতনতারও অনেক গুরুত্ব রয়েছে।’
কিশোরগঞ্জের ইতিহাস ও ঐতিহ্য নিয়ে কাজ করেন কবি ও লোকজ সংস্কৃতি গবেষক জাহাঙ্গীর আলম জাহান বলেন, ‘কয়েক বছর ধরে কিশোরগঞ্জ শহরে কিশোর অপরাধ, মাদক, ইভটিজিং মারাত্মক আকার ধারণ করেছিল। এতে শহরবাসী ছিল অতিষ্ট। এসব বিষয়ে অনেক লেখালেখি, অভিযোগ হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। অতি সম্প্রতি নতুন পুলিশ সুপার একটি কার্যকর উদ্যোগ নিয়েছেন।’
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মোস্তাক সরকার জানান, প্রায় দেড় মাস ধরে তাদের এই বিশেষ টহল চলছে। এ সময়ে ছিনতাইয়ের দুটি, মোটরযান আইনে শতাধিক মামলা হয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আটকদেরকে মুচলেকা নিয়ে অভিভাবকের জিম্মায় দেয়া হয়েছে।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ বলেন, ‘কিশোরদের মোটরবাইক দিয়ে মহড়া এবং দলগতভাবে আড্ডা দেয়া বন্ধে করতে পুরো শহরে পুলিশি নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
‘কোনো কিশোরকে আটক করার পর অভিভাবকের মুচলেকা নিয়ে হস্তান্তর করা হচ্ছে। অপরাধী হিসেবে নয়, প্রথম অবস্থায় সর্তক করার জন্য ধরা হচ্ছে। তবে কেউ অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থাও নেয়া হচ্ছে। অভিভাবকদের সচেতন করা হচ্ছে কিশোরদের সব বিষয়ে যেন তারা খোঁজ খবর রাখেন।’