এক বিচারকের সঙ্গে বাগবিতণ্ডার ঘটনায় খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সাইফুল ইসলামসহ তিন আইনজীবীকে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছে হাইকোর্ট।
বুধবার বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ তাদের সতর্ক করে ক্ষমা করে দেয়। এ সময় আদালত বলেছে, ভবিষ্যতে বিচারকদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করলে ক্ষমা নয়।
সভাপতি সাইফুল ইসলাম ছাড়া বাকি যে দুই আইনজীবীকে হাইকোর্ট সতর্ক করেছে তারা হলেন খুলনা বারের সদস্য আইনজীবী শেখ নাজমুল হোসেন ও শেখ আশরাফ আলী পাপ্পু।
এ সময় সব জেলা আইনজীবী সমিতিকে সতর্কবার্তা দিতে বার কাউন্সিলকে নির্দেশ দেয় আদালত। বিচারকের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের ঘটনায় নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ায় ওই তিন আইনজীবীকে আদালত অবমাননার অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।
গত ২২ সেপ্টেম্বর খুলনার যুগ্ম জেলা জজ নির্মলেন্দু দাশের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের ঘটনায় তিন আইনজীবীর বিরুদ্ধে নালিশ জানিয়ে প্রধান বিচারপতিকে চিঠি দেন ওই বিচারক। এরপর তিন আইনজীবীকে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দিতে আদেশ দেয় হাইকোর্ট।
আদেশ অনুযায়ী মঙ্গলবার তিন আইনজীবী হাইকোর্টে হাজির হন। পরে তাদের পক্ষে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকিরসহ একাধিক আইনজীবী। এ সময় তিন আইনজীবীকে ভর্ৎসনা করে উচ্চ আদালত। পরে বুধবার আদেশের জন্য রাখে।
তিন আইনজীবীর পক্ষে সুপ্রিম কোর্ট বার সভাপতি ছাড়াও সম্পাদক আব্দুন নূর দুলাল, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা, নাহিদ সুলতানা যুথি, রবিউল আলম বুদু আদালতে উপস্থিত ছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।
১ নভেম্বর খুলনা ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালের সাবেক বিচারক (বর্তমানে যুগ্ম জেলা জজ) নির্মলেন্দু দাশের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের ঘটনায় খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সাইফুল ইসলামসহ তিন আইনজীবীকে তলব করে আদেশ দেয় হাইকোর্ট। একই সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করা হয়।
প্রধান বিচারপতির কাছে ওই বিচারকের পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, ২ সেপ্টেম্বর একটি মোকদ্দমায় আইনজীবী পিযুষ কান্তি দত্ত জেরা করছিলেন। সে সময় খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সাইফুল ইসলাম শেখ আশরাফ আলী পাপ্পু, শেখ নাজমুল হোসেন, জেসমিন পারভিন, এম এম সাজ্জাদ আলী, এস এম তারিক মাহমুদ তারা (সাধারণ সম্পাদক), সুস্মিতা, সাদিক সাদ, মিল্টন বাগচী, রাজুসহ একাধিক আইনজীবীকে সঙ্গে নিয়ে আদালতকক্ষে প্রবেশ করেন এবং সামনে দাঁড়িয়ে গুঞ্জন করতে থাকেন।
ওই সময় বিচারক বলেন, ‘আপনারা বসেন’। কিন্তু তারা তার কথায় কর্ণপাত না করে তাদের মতো গুঞ্জন করতে থাকেন। একপর্যায়ে বারের সভাপতি সাইফুল ইসলাম কৈফিয়ত তলবের সুরে বলেন, ‘আমরা একটা মোকদ্দমায় উভয় পক্ষ সময়ের দরখাস্ত করেছিলাম, আপনি সেই দরখাস্ত নামঞ্জুর করেছেন। এরপর জিপি সাহেব হাতে লেখা দরখাস্ত দিয়েছেন। তারপর সাক্ষী হয়েছে। পরে আমরা সময়ের দরখাস্ত দিলে নেয়া হয়নি। কেন নেয়া হয়নি এবং সময়ের দরখাস্ত কেন নামঞ্জুর করলেন, আমাকে বলতে হবে।’
এ নিয়ে বিচারকের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়ান আইনজীবীরা।