মোবাইল ফিন্যানশিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) ব্যবহার করে কোটি কোটি টাকার হুন্ডি ব্যবসা করছে একাধিক চক্র। এমএফএসের এজেন্টদের সহযোগিতায় চক্রের সদস্যরা অনলাইন জুয়া, মাদক কেনাবেচাসহ প্রচুর অবৈধ ব্যবসাও পরিচালনা করছে।
মঙ্গলবার দুপুরে মালিবাগে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে সিআইডিপ্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়া এ তথ্য জানান।
এর আগে সোমবার রাতে সিআইডির ফিন্যানশিয়াল ক্রাইম এবং সাইবার ক্রাইম ইউনিট কুমিল্লা ও ঢাকায় অভিযান চালিয়ে এই চক্রের ছয়জন মীর মো. কামরুল হাসান শিশির, খোরশেদ আলম, মো. ইব্রাহিম খলিল, কাজী শাহ নেওয়াজ, মো. আজিজুল হক তালুকদার ও মো. নিজাম উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে। তাদের কাছ থেকে ১১টি মোবাইল, ১৮টি সিমকার্ড, একটি ল্যাপটপ ও একটি ট্যাব উদ্ধার করা হয়।
মোহাম্মদ আলী মিয়া বলেন, এমএফএস প্রতিষ্ঠান ডিস্ট্রিবিউশন হাউস অনুমোদন দিয়েছে, তাদের ডিস্ট্রিবিউশন হাউস অবশ্যই মনিটর করবে। যদি মনিটর না করে তাহলে আমরা বাধ্য হব তাদের আইনের আওতায় আনার জন্য।
সিআইডিপ্রধান বলেন, সংঘবদ্ধ হুন্ডিচক্র প্রবাসী বাংলাদেশিদের উপার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহ করে তা বাংলাদেশে না পাঠিয়ে ওই বৈদেশিক মুদ্রার সমপরিমাণ মূল্যে স্থানীয় মুদ্রায় পরিশোধ করে। এ কাজে অপরাধীরা তিনটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে কাজটি করে থাকে।
তিনি জানান, প্রথম গ্রুপ বিদেশে অবস্থান করে প্রবাসীদের কাছ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহ করে দেশ থেকে যারা টাকা পাচার করতে চায় তাদের দেয়। দ্বিতীয় গ্রুপ পাচারকারী ও তার সহযোগীরা দেশীয় মুদ্রায় ওই অর্থ এমএফএসের এজেন্টকে পাঠায়। তৃতীয় গ্রুপ অর্থাৎ এমএফএসের এজেন্ট কর্তৃক বিদেশে অবস্থানকারীর কাছ থেকে প্রাপ্ত এমএফএসের নম্বরে দেশীয় মুদ্রায় মূল্য পরিশোধ করে।
পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, এই চক্র প্রতিনিয়ত অবৈধভাবে এমএফএস ব্যবহার করে ক্যাশ ইনের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হুন্ডি করছে। গত এপ্রিল মাস থেকে আগস্ট পর্যন্ত প্রতিটি চক্র প্রায় ৩ কোটি টাকা হুন্ডি করেছে।
মোহাম্মদ আলী মিয়া বলেন, মোহাম্মদ খোরশেদ আলমের মালিকানাধীন কুমিল্লার লাকসামে অবস্থিত বিকাশ ডিস্ট্রিবিউশন হাউস জে এ এন্টারপ্রাইজের দুই হাজার এজেন্ট সিমের মাধ্যমে প্রতি মাসে ২০০ থেকে ৩০০ কোটি টাকার লেনদেন হয়। সিআইডি সন্দেহজনক দুটি এজেন্ট সিম নিয়ে কাজ করে, যার মাধ্যমে গত ৬ মাসে ৩ কোটি টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য পায়।
তিনি জানান, এই দুটি সিম নিয়ে কাজ করতে গিয়ে এ রকম আরো ১১টি এজেন্ট সিমের সন্ধান পায় সিআইডি, যাদের মাধ্যমে এ রকম সন্দেহজনক তথা ডিজিটাল হুন্ডির তথ্য রয়েছে। ২ হাজার এজেন্ট সিমের বেশ কিছু এজেন্ট সদস্য হুন্ডির মতো অবৈধ কাজে সরাসরি জড়িত। ডিজিটাল হুন্ডির কাজকে সহজ, নির্ভুল ও দ্রুততম উপায়ে সম্পন্ন করার জন্য তারা বেশ কিছু সফটওয়্যার ব্যবহার করছে।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে তিনি জানান, ফ্রিডমফ্লেক্সি২৪ডটকম এমন একটি সফটওয়্যার, যার মাধ্যমে সৌদিপ্রবাসী হুন্ডি কারবারিরা বাংলাদেশে যে নম্বরগুলোতে টাকা পাঠানো হবে, সেই নম্বরগুলো ইনপুট দিত এবং বাংলাদেশে থাকা বিভিন্ন এমএফএস এজেন্টদের সহায়তায় বাংলাদেশি হুন্ডির এজেন্টদের মাধ্যমে টাকাগুলো সরাসরি ডিস্ট্রিবিউশন হয়ে প্রাপকের কাছে যেত।
সিআইডিপ্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়া আরও বলেন, এমএফএসের এজেন্টদের সহযোগিতায় চক্রের সদস্যরা বিদেশে স্থানীয় সম্পদ অর্জনসহ অনলাইন জুয়া, ভিডিও স্ট্রিমিংয়ের ভার্চুয়াল মুদ্রা কেনাবেচা, মাদক কেনাবেচা, স্বর্ণ চোরাচালান, ইয়াবা ব্যবসাসহ প্রচুর অবৈধ ব্যবসাও পরিচালনা করছে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে তিনি বলেন, সব মোবাইল ফিন্যানশিয়াল সার্ভিসের আওতায় অনেক ডিস্ট্রিবিউশন হাউস আছে। এই ডিস্ট্রিবিউশন হাউসের মালিক ও কর্মচারী তাদের উচিত অধীন যেসব এজেন্ট আছে, এই এজেন্টদের কর্মকাণ্ড মনিটর করা। যদি মনিটর না করে তাহলে তারা আইনের আওতায় আসবে।
সিআইডিপ্রধান বলেন, পাশাপাশি বিকাশ, রকেট ও নগদের কর্তৃপক্ষ যারা ডিস্ট্রিবিউশন হাউস অনুমোদন দিয়েছে, তাদের ডিস্ট্রিবিউশন হাউস অবশ্যই মনিটর করবে। তারা যদি মনিটর না করে তাহলে আমরা বাধ্য হব তাদের আইনের আওতায় আনার জন্য। প্রবাসীরা যেন তাদের ব্যাংকিং চ্যানেলে পাঠায়, সে ক্ষেত্রে দেশের উন্নতি হবে ও তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর নজরদারিতে থাকবে না।