দিনাজপুর শহর থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরের গ্রাম কমলপুর। এখানকার কৃষক শরিফুল ইসলাম শুক্রবার ভোর ৫টায় ২৫০ আঁটি কলমিশাক নিয়ে এসেছেন শহরের বাহাদুর বাজারে। আসা-যাওয়ায় ইজিবাইকে ভাড়া পড়েছে ১২০ টাকা।
দিনাজপুর শহরের সবচেয়ে বড় বাজার বাহাদুর বাজারে পাইকারি দরে কলমিশাক বিক্রি করলেন প্রতি আঁটি ১ টাকা দরে ২৫০ টাকায়। ১২০ টাকা ইজিবাইকের ভাড়া দিয়ে তার হাতে অবশিষ্ট থাকে ১৩০ টাকা। এর মধ্যে ৩০ টাকা দিয়ে চা-নাশতা। অবশেষে সকাল ৮টায় ১০০ টাকা হাতে বাড়ির পথ ধরেন শরিফুল।
অথচ এই কলমিশাক মাত্র ৩ ঘণ্টা পরই সেই ৫ টাকা আঁটি দরে বিক্রি করেন দোকানদার।
বাহাদুর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, শুক্রবার ভোর ৫টায় এই বাজারে কলমিশাক ১ টাকা, সরিষাশাক ৩ টাকা, পুঁইশাক ৭ টাকা, মুলাশাক ৩ টাকা, লালশাক ৬ টাকা ও পাটশাক ৪ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
ফুলকপি ১৫ টাকা, বাঁধাকপি ১৫ টাকা, বেগুন প্রকারভেদে ১৫ থেকে ২৫ টাকা ও শিম ২৫ টাকা দরে বিক্রি হয়।
জেলার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে কৃষকরা নিজেদের উৎপাদিত শাক-সবজি প্রতিদিন ভোরে এই বাজারে নিয়ে আসেন। আর এখানকার স্থায়ী সবজি বিক্রেতা ও শহরের বিভিন্ন পাড়ায় গিয়ে ফেরি করে বিক্রি করা সবজি বিক্রেতারা এ শাক-সবজি কিনে নিয়ে যান।
ভোর ৫টায় এই বাজারে পাইকারি হিসেবে শাক-সবজি বিক্রি করা হলেও মাত্র ৩ ঘণ্টার ব্যবধানে তা বেড়ে যায় কয়েক গুণ। কলমিশাক তখন বিক্রি হয় প্রতি আঁটি ৫ টাকা, সরিষারশাক ৭ টাকা, পুঁইশাক ১৫ টাকা, মুলাশাক ৫ টাকা, লালশাক ১২ থেকে ১৫ টাকা ও পাটশাক ১০ টাকা দরে বিক্রি হয়। এ ছাড়া ফুলকপি ৩০ টাকা, বাঁধাকপি ৩৫ টাকা, বেগুন প্রকারভেদে ২৫ থেকে ৩০ টাকা ও শিম ৪০ টাকা দরে।
সবজি বিক্রেতা শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘বাড়ির পাশে অল্প একটু জমি আছে। সেই জমিতে আমি বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি ফলাই। আজকে ২৫০টি কলমিশাকের আঁটি বাজারে নিয়ে আসছি। কিন্তু বাজারে ১ টাকা করে আঁটি বিক্রি করলাম। বিক্রির পর আসা-যাওয়া, নাশতার টাকা বাদ দিয়ে ১০০ টাকা নিয়ে বাড়ি যাচ্ছি। অথচ আমাদের এই শাক কিছুক্ষণ পরই কয়েকগুণ দাম বেড়ে যায়। লাভ করেন বাজারের স্থায়ী সবজি ব্যবসায়ীরা ও ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীরা। কী আর করার আছে, সব কপালের দোষ।’
কৃষান বাজারের সবজি বিক্রেতা জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘আমি প্রতিদিন শাক-সবজি বাজারে বিক্রি করতে আসি। কিন্তু আমরা সব সময় কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হই। বাজারের অন্য ব্যবসায়ীরা আমাদের কাছ থেকে কম দামে কিনে, পরে বেশি দামে বিক্রি করেন। তাহলে তো সাধারণ ক্রেতারা বলবেনই, সবজির দাম বেশি।’
সবজি ক্রেতা আব্দুর রশিদ বলেন, ‘কয়েক দিনের তুলনায় আজকে বাজারে সবজির দাম একটু কম। আজ ১০০ টাকা দিয়ে ব্যাগভর্তি সবজি বাজার করতে পারলাম। কয়েক দিন আগে এই টাকায় ব্যাগের অর্ধেকই ভরে না। এভাবে বাজারে সবজির দাম কম থাকলে আমাদের মতো গরিব মানুষ সবজি খেয়ে বেঁচে থাকতে পারব।’
বাহাদুর বাজারের সবজি বিক্রেতা কাশেম হোসেন বলেন, ‘ভোরে এই বাজারে পাইকারি দরে শাক-সবজি কিনে বাজারেই সারা দিন বিক্রি করি। ভোরে কম দামে শাক-সবজি কিনি। কিন্তু একটু বেশি দামে বিক্রি না করলে তো পোষাবে না। কারণ বাজারের ট্যাক্স ও সারা দিনের শ্রমিক আছে। তার ওপর অনেক সময় সারা দিনে সবজি বিক্রি না হলে সেই সবজি নষ্ট হয়ে যায়। সেটাতে তো লোকসান আছে।’