বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের অর্থ কোথায় ব্যয় হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে সেই ব্যাখ্যায় সরকারের রক্ষণশীল অবস্থান দেশকে পেয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, এখন সাধারণ মানুষের কাছে গেলে সবাই বলবে, ‘এই সরকার চোর।’
সোমবার রাজধানীতে এক আলোচনায় দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা তুলে ধরতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৫৮তম জন্মদিন উপলক্ষে এই আলোচনার আয়োজন করে বাংলাদেশ ছাত্র ফোরাম ও উত্তরবঙ্গ ছাত্র ফোরাম নামে দুটি সংগঠন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে বিএনপি নেতা বলেন, ‘রিজার্ভের টাকা তো লোপাট করে ফেলেছে আগে থেকেই এবং এত বেশি লোপাট করেছে যে নিজেই ডিফেন্সিভ হয়ে বলছেন, না আমরা রিজার্ভ চিবিয়ে খাইনি। আপনারা চিপিয়ে খাননি আমরা জানি, আপনারা গিলে ফেলেছেন এবং সেগুলো আবার পাচার করে দিয়েছেন, এখানে নাই তো। প্রমাণিত সত্য।
‘এত কথা বলার আমার দরকার নাই। আপনি সাধারণ মানুষের কাছে যান, রিকশাশ্রমিকের কাছে যান, হকারের কাছে যান সেই বলবে যে এই সরকার চোর।’
ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ক্রমহ্রাসমান রিজার্ভ রাজনীতিতে আলোড়ন তৈরি করছে। বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হচ্ছে, সরকারের দুর্নীতির কারণেই এই ঘটনা ঘটেছে।
গত বছরের আগস্টে রিজার্ভ ছিল ৪৮ বিলিয়ন ডলার আর এখন নেমেছে ৩৪ বিলিয়নে।
সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানান, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ দ্বিতীয় দফায় সরকার গঠনের সময় দেশের রিজার্ভ ৫ বিলিয়ন ডলার ছিল। সেই রিজার্ভ তারা ৪৮ বিলিয়নের কাছাকাছি ওঠাতে পেরেছিলেন।
তিনি বলেন, ‘এই টাকা ব্যবহার করেছি মানুষের কল্যাণে। আজকে করোনা যেতে পারেনি, শুরু হলো ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, স্যাংশন। প্রত্যেকটা জিনিসের দাম সারা বিশ্বে বেড়ে গেছে। আপনি চাল বলেন, গম বলেন, ভোজ্যতেল, জ্বালানি তেল, গ্যাস—সবকিছুর দাম এমনভাবে বেড়ে গেছে। শুধু জিনিসের দাম যে আন্তর্জাতিক বাজারে বেড়ে গেছে তা নয়, সঙ্গে সঙ্গে পরিবহন খরচ।
‘এখন অতি বেশি মূল্য দিয়ে আমাকে খাদ্য কিনতে হচ্ছে। আমাকে তেল কিনতে হচ্ছে, গ্যাস কিনতে হচ্ছে, ভোজ্যতেল কিনতে হচ্ছে, জ্বালানি তেল কিনতে হচ্ছে, গম, ভুট্টা সবই আনতে হচ্ছে। আমি টাকা নিয়ে বসে থাকলে তো হবে না। আমার দেশের মানুষের জন্য খরচ করতে হবে।’
ফখরুল বলেন, ‘বলার চেষ্টা করে যে রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধের কারণে নাকি এটা হচ্ছে। হয়তোবা কিছুটা আছে। কিন্তু শুরুটা করেছ তুমি অনেক আগে থেকে। দেশের সমস্ত সম্পদকে লুট করছ, ১০ বছরের ৮ লক্ষ ৬০ হাজার কোটি টাকা পাচার করেছ। গত এক বছরেই শুধুমাত্র ৭৮ হাজার কোটি টাকা পাচার করেছ।
‘যে দেশের অর্থনীতিতে সরকারের লোকেরা পুরো সম্পদ লুট করে পাচার করে নিয়ে যায়, সেই দেশের অর্থনীতি কী থাকতে পারে?’
সরকারের ‘অপশাসনে’ ব্যবসায়ীরা খুব খারাপ সময় পার করছে বলেও মন্তব্য করেন ফখরুল। বলেন, ‘আজকে একটি খবরের কাগজে বড় বড় ব্যবসায়ীরা সমস্যা কথা উঠেছে। প্রত্যেক বড় বড় ব্যবসায়ী একটা কথা বলছেন, তারা খুব খারাপ সময়ে মধ্যে আছেন। ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এখন এমন অবস্থা হয়েছে যে, শ্রমিকদেরকে মজুরি দেয়ার টাকা পর্যন্ত থাকছে না।’
এ অবস্থা থেকে উত্তরণে সবাইক ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিএনপি নেতা বলেন, ‘মানুষ জেগে উঠেছে। মানুষ কিন্তু পিছিয়ে নেই। প্রত্যেকটা সমাবেশে আমার এই বৃদ্ধ বয়সে আমাকে যে অনুপ্রাণিত করেছে যে, এখন আরেকটা মুক্তিযুদ্ধ সেই যুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমাদেরকে এদের পরাজিত করতে হবে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্যসচিব কাদের গনি চৌধুরী, ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল হাসান, ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু আফসার মোহাম্মদ ইয়াহিয়াও আলোচনায় বক্তব্য রাখেন।