নীলফামারীতে এক কিশোরীকে ধর্ষণের মামলায় বিজিবি সদস্য মো. আকতারুজ্জামানের বিরুদ্ধে নতুন করে তদন্ত করতে পিবিআইকে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। একইসঙ্গে এ মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে পুলিশ প্রধানকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এছাড়া ধর্ষণের শিকার কিশোরীকে মানসিক চিকিৎসা দিতে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথ অ্যান্ড মেন্টাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
সোমবার বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মো. বশির উল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।
আদালতে কিশোরীর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মুহাম্মদ শিশির মনির ও সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইডের প্যানেল আইনজীবী বদরুন নাহার। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন।
পরে আইনজীবী বদরুন নাহার নিউজবাংলাকে বলেন, মামলাটিতে পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। আদেশপ্রাপ্তির ৬০ দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। এছাড়া আগের তদন্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ওই নারীকে চিকিৎসা সেবা দিতে নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
এ সংক্রান্ত এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২৯ জুন বিজিবির এক সদস্যকে মামলা থেকে অব্যাহতির আদেশ ছয় মাসের জন্য স্থগিত করে আদেশ দেয় হাইকোর্ট। একইসঙ্গে বিজিবির ওই সদস্যকে চার সপ্তাহের মধ্যে নীলফামারীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এ আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেয়া হয়।
জানা যায়, এরপর ওই বিজিবির সদস্য আত্মসমর্পণ করে নিম্ন আদালত থেকে জামিন নিয়েছেন।
১৫ জুন মাকে নিয়ে নীলফামারী থেকে হাইকোর্টে এসে বিচার চান ওই কিশোরী। আদালতে তিনি বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ, টাকাপয়সা নাই। আমি ধর্ষণের শিকার। একজন বিজিবি সদস্য আমাকে ধর্ষণ করেছেন। নীলফামারীর আদালত তাকে খালাস দিয়ে দিয়েছেন। আমি বিচার চাই।’ কিশোরীর বক্তব্য শুনে সেদিন হাইকোর্টের বেঞ্চ সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইডের মাধ্যমে কিশোরীর মামলাটি নিতে সংশ্লিষ্ট আইনজীবীকে বলেন।
এরপর সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইডের প্যানেল আইনজীবীর মাধ্যমে ২৬ জুন ট্রাইব্যুনালের আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন কিশোরীর মা।
মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, ১৪ বছর বয়সী ওই কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগে তার মা নীলফামারীর সৈয়দপুর থানায় ২০২০ সালের ২১ নভেম্বর মামলা করেন।
নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের ৯(১) ও দণ্ডবিধির ৩২৮ ধারায় আকতারুজ্জামান নামের বিজিবির এক সদস্যকে আসামি করে মামলাটি করা হয়। মামলায় নেশাজাতীয় দ্রব্য খাইয়ে কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগ আনা হয়। তদন্ত শেষে পুলিশ চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়, যেখানে আসামিকে অব্যাহতি দেয়ার সুপারিশ করা হয়। এর বিরুদ্ধে না-রাজি দেন মামলার বাদী। এরপর ১৭ মে নীলফামারীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ বিজিবি সদস্যকে মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়ে ও বাদীর না-রাজি আবেদন খারিজ করে আদেশ দেয়। এ আদেশের বিরুদ্ধে কিশোরীর মা হাইকোর্টে আপিল আবেদন করেন।