বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

শিশু পর্নোগ্রাফি: গুগলের তথ্যে ধরা বরগুনার মাদ্রাসাছাত্র

  •    
  • ২১ নভেম্বর, ২০২২ ১২:২৫

গত ১৯ জুলাই রাতে সিআইডির কাছে একটি গোয়েন্দা তথ্য শেয়ার করে আমেরিকান প্রতিষ্ঠান এনসিএমইসি। সেই তথ্যের ভিত্তিতে তদন্ত করে বায়েজীদকে গ্রেপ্তারের পাশাপাশি তার মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়। সেই ফোনে শিশুদের ব্যবহার করে পর্নোগ্রাফিক কনটেন্ট তৈরির প্রমাণ পাওয়া যায়। এরপর তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।

বরগুনা সদরের ৯ নম্বর বালিয়াতলী ইউনিয়নের দক্ষিণপাতা গ্রামের বায়েজীদ হোসাইন। মাদ্রাসায়পড়ুয়া এই তরুণ দীর্ঘদিন ধরে শিশুদের ব্যবহার করে পর্ন ভিডিও তৈরি করে আসছিলেন। ছবি ও ভিডিওগুলো সংরক্ষণ করতেন গুগলের ড্রাইভে। মাঝেমধ্যে প্রচার করতেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।

গুগল বায়েজীদের সংরক্ষণ করা এসব কনটেন্ট শিশু সুরক্ষায় কাজ করা যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সামাজিক সংগঠন ‘ন্যাশনাল সেন্টার ফর মিসিং অ্যান্ড এক্সপ্লয়টেড চিলড্রেন বা এনসিএমইসিকে জানিয়ে দেয়। পরে এই সংস্থাটি তা জানায় বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত সংস্থাকে (সিআইডি)। এরপর বায়েজীদকে গ্রেপ্তার করলে জানাজানি হয় তার অপকর্ম।

সিআইডির সাইবার ক্রাইম বিভাগের পুলিশ সুপার রেজাউল মাসুদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যৌন নির্যাতন, শিশু পর্নোগ্রাফি বন্ধসহ শিশুদের অধিকার রক্ষায় কাজ করে এনসিএমইসি। ফেসবুক, টুইটার, টিকটক গুগল, মাইক্রোসফটসহ প্রযুক্তি ও সামাজিক মাধ্যমের ব্যবহারকারীরা যদি শিশুদের যৌনকাজে ব্যবহার, যৌন নিপীড়নের তথ্য সংগ্রহ ও সরবরাহ করে থাকে, তাহলে তারা এ-সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য এনসিএমইসিকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়।

‘গত ১৯ জুলাই রাতে সিআইডির কাছে একটি গোয়েন্দা তথ্য শেয়ার করে এনসিএমইসি। সেই তথ্যের ভিত্তিতে তদন্ত করে বায়েজীদকে গ্রেপ্তারের পাশাপাশি তার মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়। সেই ফোনে শিশুদের ব্যবহার করে পর্নোগ্রাফিক কনটেন্ট তৈরির প্রমাণ পাওয়া যায়। এরপর তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।’

বায়েজীদের বাড়িটি মুসল্লি বাড়ি হিসেবে পরিচিত। এই তরুণ ২০১৫ সালে স্থানীয় সোনাতলা দাখিল মাদ্রাসা থেকে দাখিল, ২০১৮ সালে খাকবুনিয়া মাদ্রাসা থেকে আলিম পাসের পর বরগুনা আলিয়া মাদ্রাসায় ফাজিল প্রথম বর্ষে পড়ছেন। বাবা রোগাক্রান্ত হয়ে পড়লে সংসারের হালও ধরেছেন। বাড়িতে থেকে কৃষিকাজও দেখাশোনা করেন।

বাড়ির সামনে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পেছনে একটি হাফেজি মাদ্রাসা রয়েছে। স্থানীয়দের ধারণা, যদি এমন কিছু ঘটে থাকে তবে ওই মাদ্রাসা ও বিদ্যালয়ের শিশুদের সঙ্গে ঘটতে পারে। তবে অভিভাবকদের কেউ এ বিষয়ে জানেন না।

কী কারণে ছেলেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে জানেন না বায়েজীদের বাবা আবদুল হক। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমরা ধার্মিক পরিবার। আমার ছেলে মাদ্রাসায় পড়েছে। আমরা ভেবেছিলাম ফেসবুকে কোনো ছবি বা লেখা দেয়ার জন্য তাকে ধরেছে। কিন্তু এখন যা শুনছি, এটা আসলে খারাপ বিষয়। আমার ছেলে অপরাধ করলে শাস্তি হোক।’

বায়েজীদের বাড়ির সামনের দোকানি জাকির হোসেন বলেন, ‘বায়েজীদকে কখনই কোনো আড্ডায় দেখা যায়নি। সে কিছুটা আনমনা ও চুপচাপ স্বভাবের।’

প্রতিবেশী সাব্বির আহমেদ বলেন, ‘সে যে এমন কাজ করছে, তা আমরা ধারণাও করতে পারিনি। আমরা শুনেছি বায়েজীদ সাইবার ক্রাইম করেছে, তাই পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছে।’

আরেক প্রতিবেশী আবুল বাশার বলেন, ‘এলাকার কোনো শিশুর বা অভিভাবকদের কাছে বায়েজীদের ব্যাপারে এমন কিছু শুনিনি। তাদের পরিবারটি এলাকায় ধার্মিক পরিবার হিসেবে পরিচিত। এই বাড়ির নারীরা পর্দা করে, নামাজ-রোজা করে। যে কারণে মুসল্লি বাড়ি হিসেবে পরিচিত। এসবের মধ্যেও বায়েজীদ এমন কাজ কেমন করে করেছে, তা আমরা বুঝতে পারছি না।’

সিআইডির বরগুনার সাইবার ক্রাইম বিভাগের সাইবার পুলিশ সেন্টার (সিপিসি) উপপরিদর্শক (এসআই) আসাদুজ্জামান বায়েজীদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। সেই মামলায় এই তরুণ ছাড়া অজ্ঞাতপরিচয় আরও দুই-তিনজনকে আসামি করা হয়।

গুগলের তথ্যের ভিত্তিতে দেশে চাইল্ড পর্নোগ্রাফির এটিই প্রথম মামলা নয় উল্লেখ করে সিআইডির সাইবার ক্রাইম বিভাগের পুলিশ সুপার রেজাউল মাসুদ বলেন, ‘এই ধরনের অভিযোগ আমাদের কাছে প্রায়ই আসে। আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। এখন পর্যন্ত আমরা ১০টিরও বেশি মামলা করেছি।’

২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে শিশু অধিকার রক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে সিআইডি কাজ শুরু করে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

এ বিভাগের আরো খবর