বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সাংগঠনিক শক্তি বাড়ানোর দিকে নজর আওয়ামী লীগের

  •    
  • ২১ নভেম্বর, ২০২২ ১১:৪৬

বিএনপির আন্দোলনের জবাবে দল গোছানোর কৌশল নিয়েছে আওয়ামী লীগ। মূল দল ছাড়াও সহযোগী ও শাখা সংগঠনগুলোতে কোন্দল মিটিয়ে নতুন সাংগঠনিক কমিটি তৈরি করা হচ্ছে। ডিসেম্বর মাসজুড়ে সংগঠন নিয়ে ব্যস্ত থাকবে শাসকদল।

সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি এবং দলের ভেতর সুদৃঢ় ঐক্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই বিএনপির আন্দোলনের জবাব দিতে চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। মূল দল আওয়ামী লীগসহ সহযোগী এবং শাখা সংগঠনগুলোকে হালনাগাদ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। অন্তঃকোন্দল মিটিয়ে দলীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা হচ্ছে।

আগামী ২৪ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সম্মেলন। তার আগে চলতি মাসে মহিলা লীগ, ৮ ডিসেম্বর ছাত্রলীগ এবং ১৫ ডিসেম্বর যুব মহিলা লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া অন্যান্য যেসব সহযোগী সংগঠনের মেয়াদ পার হয়েছে, সেগুলোরও সম্মেলন করা হবে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহ্‌মুদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দলের নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবেই মূল দল এবং অন্য সংগঠনগুলোর সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। কেননা আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে, গণতন্ত্র চর্চা করে। তাই দেশের রাজনীতি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আগে নিজ দলে গণতন্ত্র থাকাটা জরুরি। আর তার দল সেটাই করছে।’

মন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বিএনপির কর্মসূচির বিপরীতে কোনো কর্মসূচি দিচ্ছে না, কিন্তু শুধু সম্মেলনকে কেন্দ্র করেই যত মানুষের সমাগম হচ্ছে, তাতেই তাদের তথাকথিত আন্দোলন ম্রিয়মাণ হয়ে যাচ্ছে।’

আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সম্মেলনের আগে তৃণমূলের (জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড শাখা) সম্মেলন সম্পন্ন হতে হবে। আর এ প্রক্রিয়া দলটি শুরু করেছে প্রায় দুই বছর আগে। ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও উপজেলাপর্যায়ের সম্মেলন শেষ করে দলটি এখন জেলা সম্মেলন করছে। এরই মধ্যে শাসকদলের ৭৮টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ৩২টি জেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়েছে। সম্মেলন হয়েছে আরও চারটি জেলার। জেলা সম্মেলন শেষ করার লক্ষ্যে আরো ২০টির বেশি জেলায় তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। আর এসব জেলায় যাচ্ছেন এবং যাবেন শাসকদলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ কেন্দ্রীয় নেতারা।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা কারো কর্মসূচির পাল্টা কর্মসূচি দিচ্ছি না। সংগঠনকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করছি। নিজেদের মধ্যে যে মতভেদ রয়েছে, সেগুলো দূর করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগ গড়ে তুলতে কাজ করছি। এর অংশ হিসেবেই কেন্দ্রীয় নেতারা তৃণমূলে যাচ্ছেন। এর মাধ্যমে যেমন নেতা-কর্মীরা চাঙ্গা হচ্ছেন, দলের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে তারা কাছাকাছি আসছেন, নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছেন। যার ফলে মতভেদ দূর হয়ে ইস্পাতকঠিন ঐক্য গড়ে উঠছে আর দলও শক্তিশালী হচ্ছে।’

গত ২৩ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে ওবায়দুল কাদেরসহ কেন্দ্রীয় নেতারা অতিথি হিসেবে অংশ নেন। সেদিন সম্মেলন মঞ্চের পাশাপাশি বসেন ওই জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে দুই মেরুতে থাকা নারায়ণগঞ্জ সিটি মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী ও সংসদ সদস্য শামীম ওসমান।

আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, সংগঠনের পাশাপাশি ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর-দক্ষিণ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ, তাঁতী লীগ, মৎস্যজীবী লীগ, ওলামা লীগ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগসহ সমমনা সংগঠনগুলোকেও গুছিয়ে আনার কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের তিন অংশের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে একটি ঐক্যবদ্ধ কমিটি করে দেয়া হয়েছে। এতে নায়ক আলমগীরকে সভাপতির দায়িত্ব, অভিনেত্রী ফাল্গুনী হামিদকে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব এবং গায়ক রফিকুল ইসলামকে কার্যকরী সভাপতির দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

ওলামা লীগের সব পক্ষের নেতা-কর্মীকে নিয়ে বৈঠক করেছেন আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ। ওলামা লীগের একাংশের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আবু হাসান শরীয়তপুরী নিউজবাংলাকে জানান, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে গত ১২ অক্টোবর বুধবার ওলামা লীগের সব গ্রুপের সঙ্গে বৈঠক করেন আব্দুস সোবহান গোলাপ। গোলাপ তাদের জানান, প্রধানমন্ত্রী তাকে (গোলাপ) আলেম-ওলামাদের কাছে এ বার্তা পৌঁছে দিতে বলেছেন যে, সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে ওলামা লীগের একটি কমিটি করা হবে। তার আগে এ সংগঠনের একটি গঠনতন্ত্র তৈরি করা হবে। মৎস্যজীবী লীগের সহসভাপতি মোহাম্মদ আলম নিউজবাংলাকে জানান, তাদের মধ্যেও সম্মেলন অনুষ্ঠানের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

গত ১৮ নভেম্বর রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে সৈনিক লীগের সম্মেলন হয়ে। সম্মেলন শেষে এর কমিটিও গঠন করা হয় ওই দিনই।

এসবের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বধীন মৌলিক জোট ১৪ দলকে আরো সক্রিয় ও গতিশীল করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

সূত্র জানায়, দলের কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আগে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সম্মেলন করা হবে। ২০১৯ সালের ৩০ নভেম্বর ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়। সে অনুযায়ী আগামী ২৯ নভেম্বর ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হবে। মহিলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল ২০১৭ সালের ৪ মার্চ। তিন বছর মেয়াদি এই কমিটির মেয়াদ শেষ হয় ২০২০ সালের ৪ মার্চ। একই বছর ১১ মার্চ অনুষ্ঠিত হয় যুব মহিলা লীগের সম্মেলন। তাদের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০২০ সালের ১১ মার্চ। তেমনি তাঁতী লীগের মেয়াদ হয়েছে ২০২০ সালের ১৯ মার্চ।

১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস এবং ২৪ ডিসেম্বর দলের সম্মেলনে ব্যাপক গণজমায়েতের পরিকল্পনা রয়েছে ক্ষমতাসীন দলের। দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক একাধিক কর্মসূচিতে প্রকাশ্য বক্তব্যে বলেছেন, ডিসেম্বর মাস হবে আওয়ামী লীগের। এটি বিজয়ের মাস। আওয়ামী লীগ সাড়ম্বরে রাজপথে উপস্থিত থাকবে।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, প্রকাশ্য ঘোষণা না দিলেও এসব আসলে বিএনপির কর্মসূচির জবাব। কেননা আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক কর্মসূচির পাশাপাশি ইতোমধ্যে ঢাকায় শান্তি সমাবেশের নামে দুটি বড় জমায়েত করেছে। ব্যাপক মানুষের উপস্থিতিতে ঢাকা জেলার সম্মেলন করেছে। আর এসব কর্মসূচিকে ভালো করে তুলে ধরার জন্য গণমাধ্যমের সহযোগিতাও চেয়েছে। যে কারণে মনে করা যেতে পারে, কিছু কর্মসূচি আন্দোলনের জবাব হিসেবেই গ্রহণ করা হয়েছে।

এ বিভাগের আরো খবর