বিএনপি আগামী ১০ ডিসেম্বর রাজধানীতে যে সমাবেশ ডেকেছে, সেটি পূর্বাচলে হওয়া উচিত বলে মনে করেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, যদিও বিএনপি নয়াপল্টনে সমাবেশটি করার অনুমতি চেয়েছে।
১০ ডিসেম্বরের এই সমাবেশ নিয়ে রাজনীতিতে দুই প্রধান দলের কথার লড়াইয়ের মধ্যে রোববার সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
মন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি যে ধরণের গণসমাবেশ করতে চায় সে জন্য উপযুক্ত জায়গা হচ্ছে পূর্বাচল। এছাড়া মিরপুর ও বুড়িগঙ্গা নদীর পাড়েও জায়গা আছে, সেগুলোও অনেকে বলছে। বিএনপি যে সভা সমাবেশ করছে, সরকার তাদেরকে সর্বোতভাবে সহায়তা করছে।’
নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবি আদায়ে গত ৮ অক্টোবর থেকে বিএনপি ধারাবাহিকভাবে প্রতি শনিবার বিভাগীয় সমাবেশ করছে। ঢাকায় ১০ লাখ মানুষ জমায়েতের ঘোষণা আছে দলটি। তারা সেই সমাবেশটি নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে করতে পুলিশের কাছে অনুমতি চেয়েছে।
পুলিশ এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে সিদ্ধান্ত না জানালেও বিভিন্ন গণমাধ্যম খবর প্রকাশ হয়েছে, তাদেরকে পূর্বাচল অথবা টঙ্গীর ইজমো ময়দান, অথবা মিরপুরের কালসীতে সমাবেশ করতে মৌখিকভাবে বলা হয়েছে। তবে বিএনপি তাতে রাজি নয়।
এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রশ্ন তুলেছেন, নয়াপল্টনে কীভাবে ১০ লাখ মানুষের জমায়েত সম্ভব।
১০ ডিসেম্বর বিএনপি কোনো বিশৃঙ্খলা করলে কঠোর হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমরা অতীতেও দেখেছি বিএনপি সমাবেশের নামে নানা জায়গায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে, বাস-ট্রাক পুড়িয়েছে, মানুষ পুড়িয়েছে। আর ডিসেম্বরের ১৬ তারিখে পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করেছিল।
‘বিজয়ের মাসে ১০ ডিসেম্বর যদি পাকিস্তানপন্থি বিএনপির লোকজন, মির্জা ফখরুলরা ঢাকায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার অপচেষ্টা চালায়, জনগণ তাদেরকে পাকিস্তানিদের মতোই আত্মসমর্পণ করাবে।’
সরকার ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ নিয়ন্ত্রণ করতে চায় কি না, এমন প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কোনো সমাবেশ নিয়ন্ত্রণ করতে চাই না নিয়ন্ত্রণ করি না করাও হবে না। কিন্তু সমাবেশের নামে যদি কেউ বিশৃঙ্খলা করে তাহলে সরকারকে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে জনগণের স্বার্থে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়।
‘গতকাল সিলেট শহরের মোড়ে মোড়ে পুলিশ ছিলো, যাতে তারা নির্বিঘ্নে সভা সমাবেশ করতে পারে। আর আমরা যখন সভা সমাবেশ করতাম, তখন পুলিশ আমাদের ওপর লাঠিপেটা করত, কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করত আর বিএনপি আমাদের সমাবেশে বোমা ছুঁড়ত। এটিই হচ্ছে তাদের সাথে আমাদের পার্থক্য।’
বিএনপি যতই তারেক রহমানের কথা বলে ততই জনগণ থেকে দূরে সরে যায় বলেও মন্তব্য করেন হাছান মাহমুদ।
বিএনপির সমাবেশ আসলে পিকনিক
সিলেটে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশের দুই দিন আগে থেকে মাঠে নেতা-কর্মীদের উপস্থিতি আর সেখানে রান্না করা নিয়ে দলটিকে খোঁচাও দেন তথ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘আমরা দেখতে পাচ্ছি বিএনপির সমাবেশগুলো আসলে বড় পিকনিক। সিলেটের সমাবেশে তারা তিনদিন আগে গেছে, হোটেলে খাওয়া দাওয়া, তাস খেলা আবার মাঠের মধ্যে তাবু টানিয়ে রান্নাবান্না করে খেয়েছে- এটা একটা বড় পিকনিক।’
মন্ত্রী বলেন, ‘শীতের সময় আমরা যেমন পিকনিকে যেতাম, বিএনপির নেতাকর্মীরাও শুধু সিলেট অঞ্চল থেকে নয়, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ, ঢাকা থেকেও গেছে এবং সেখানে গিয়ে সমাবেশের নামে বড় পিকনিক করেছে।
‘এবং এগুলোর জন্য সারাদেশে চাঁদাবাজি করছে। অনেক ব্যবসায়ী আমাদেরকে অভিযোগ দিয়েছেন- বিএনপি ভয়ভীতি প্রদর্শন করে তাদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করছে বা করার চেষ্টা করছে।’
গত ৮ অক্টোবর থেকে প্রতি শনিবার বিএনপি যে বিভাগীয় সমাবেশ করছে তাতে চট্টগ্রামের জমায়েতটি কেবল নির্বিঘ্নে হয়েছে। এরপর ময়মনসিংহ, খুলনা, রংপুর, বরিশাল, ফরিদপুর এবং সবশেষ সিলেটে নানা দাবিতে ডাকা হয় পরিবহন ধর্মঘট। আর দলটির নেতা-কর্মীদের একটি অংশ অন্য জেলা থেকে ধর্মঘট শুরুর আগেই চলে যায় সমাবেশের এলাকায়।
গত শনিবার সিলেটের সমাবেশের দুই দিন আগেই নেতা-কর্মীর আলিয়া মাদ্রাসায় অবস্থান করতে থাকে। সেখানেই রান্নার আয়োজন ছিল। সময় কাটাতে দিনভর আড্ডা ও গল্প গুজবও করেন তারা। এই বিষয়টি নিয়েই কথা বলেন মন্ত্রী।
‘গণমাধ্যম রাজনীতি করছে’
ধর্মঘটের বাধা সত্ত্বেও বিএনপির সমাবেশগুলোতে নেতা-কর্মীদের উপস্থিতি ছিল ব্যাপক। তবে এই উপস্থিতি দেখানোয় মন্ত্রী গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে এনেছেন পক্ষপাত ও রাজনীতি করার অভিযোগ।
তিনি বলেন, ‘সাংবাদিকতার নামে কারও রাজনীতি করা উচিত নয়। গতকাল সিলেটে বিএনপির এবং গাজীপুরে আওয়ামী লীগেরও সমাবেশ হয়েছে। উপস্থিতির বিচারে দুটি সমাবেশেই সমপরিমাণ লোক সমাগম হয়েছে বরং গাজীপুরের সমাবেশে কারো কারও মতে বিএনপির সিলেটের সমাবেশের চেয়ে বেশি মানুষ হয়েছে, যদিও বা সেটি কোনো বিভাগীয় বা জেলা সমাবেশ নয়, সেটি ছিল জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন।
‘কিন্তু কোনো কোনো কাগজে, অনলাইনে দেখলাম যে গাজীপুরের সমাবেশের ছবিটা দিয়েছে মঞ্চের এবং দর্শকের একটা অংশ মাত্র। আর বিএনপির সমাবেশের ছবিটা দূর থেকে নিয়ে দেয়া হয়েছে যাতে মনে হয় অনেক লোক হয়েছে।
‘অবশ্যই বিএনপির সমাবেশ হবে সেটি পত্রপত্রিকায় প্রচার পাবে। কিন্তু এ ধরণের উপস্থাপনা সমীচীন কি না আপনাদের কাছে প্রশ্ন।…আমি আশা করব যে, শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যম এ ধরনের অপসাংবাদিকতা করা উচিত নয় বা সাংবাদিকতার নামে রাজনীতি করা সমীচীন নয়।’
এই পক্ষপাত গণমাধ্যমের কর্তা ব্যক্তিদের জন্য হয়ে থাকে বলেও মনে করেন মন্ত্রী। বলেন, ‘অনেক সময় দেখা যায়, সাংবাদিকরা হাউজে যে রিপোর্ট, যে ছবি দিয়েছেন সেটি এডিটিং প্যানেলে গিয়ে পরিবর্তন হয়ে যায়। এ বিষয়গুলো খেয়াল রাখা প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।’