ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত প্রাঙ্গণ থেকে দুই জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনায় আদালত এলাকার নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। জঙ্গিদের আদালতে আনার দিন নিরাপত্তাব্যবস্থা আরও জোরদার হওয়া উচিত ছিল বলে মন্তব্য করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মো. গোলাম ছারোয়ার খান জাকির।
জাগৃতি প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী ফয়সল আরেফীন দীপন হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামি মইনুল হাসান শামীম ওরফে সামির ওরফে ইমরান এবং আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব ওরফে সাজিদ ওরফে শাহাব রোববার বেলা ১২টার দিকে পুলিশের চোখমুখে গ্যাস স্প্রে করে পালিয়ে যান। দুজনই আনসার আল ইসলামের সদস্য।
ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল থেকে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া এই দুই আসামি পালিয়ে যান বলে নিউজবাংলাকে জানান ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) উপকমিশনার (মিডিয়া) ফারুক হোসেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পুলিশকে স্প্রে করে আগে থেকে প্রস্তুত একটি মোটরসাইকেলে চড়ে দ্রুত পালিয়ে যান তারা। মোটরসাইকেলের চালক ছিলেন আরেকজন।
ঘটনার পর আদালত প্রাঙ্গণ নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
বেলা পৌনে ৩টার দিকে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান আদালত এলাকায় যান। এর আগে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে করেন গোয়েন্দা পুলিশ প্রধান মোহাম্মদ হারুন-অর-রশিদ।
আদালত এলাকা পরিদর্শন শেষে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান ও অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার হারুন অর রশীদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গায় চেকপোস্ট বসিয়েছি। আমাদের ডিবির প্রত্যেকটা টিম কাজ করছে। আশা করছি তাদের (পালিয়ে যাওয়া জঙ্গি) দ্রুত গ্রেপ্তার করতে পারব।
‘জঙ্গিরা বিভিন্ন কৌশল নিয়ে কাজ করে। এবার তারা নতুন একটি কৌশল নিয়েছে। আমরা শুনেছি আদালতের গেটে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের চোখে স্প্রে করে দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নিয়েছে অপর জঙ্গিরা। চোখে স্প্রে করার কারণে দায়িত্বরতরা কিছু দেখতে পারেননি।’
অন্যদিকে জঙ্গিদের আদালতে আনার দিন নিরাপত্তাব্যবস্থা আরও জোরদার হওয়া উচিত ছিল বলে মন্তব্য করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মো. গোলাম ছারোয়ার খান জাকির।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘মোহাম্মদপুর থানার সন্ত্রাসবিরোধী আইনে করা একটি মামলার আজ শুনানি ছিল। সেই মামলার আসামি ২০ জন, এর মধ্যে ৬ জন পলাতক। ১২ জন জেলহাজতে ছিলেন ও দুজন জামিনে ছিলেন।
‘এই মামলার চারটি শুনানি হয়। আজ ওই মামলার শুনানি শেষে বের হওয়ার পর মূল ফটকের সামনে দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেয়া হয়।’
তিনি বলেন, ‘ছিনিয়ে নেয়া দুই জঙ্গিই দীপন হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। সাকিবুর অভিজিৎ হত্যা মামলারও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। মোহাম্মদপুর থানায় করা আরেকটি মামলায় শুনানির জন্য তাদের আদালতে আনা হয়েছিল।’
আদালতের নিরাপত্তার ঘাটতি আছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলতে পারবে। তবে অবশ্যই নিরাপত্তাব্যবস্থা আরও জোরদার হওয়া উচিত ছিল। তাদের কীভাবে নামিয়ে আনা হয়েছিল তা জানি না।’
এদিকে ঘটনার পর আদালত প্রাঙ্গণ ও আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে যান চলাচল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। সোয়াট টিম সদস্যরাও টহল দিচ্ছেন। ঘটনাস্থলে রয়েছে এপিসি ও সাঁজোয়া যানসহ বম্ব ডিসপোজাল ইউনিট।