আদালত থেকে পালিয়ে যাওয়া দুই জঙ্গিকে গ্রেপ্তারে রাজধানীতে রেড অ্যালার্ট জারি করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। প্রতিটি থানা ও অন্যান্য ইউনিটকে চেকপোস্ট বসানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক নিউজবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা রেড অ্যালার্ট জারি করেছি। এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি হয়েছে।’
দুই জঙ্গির ছবি, তাদের শরীরের বিবরণ জানিয়ে ডিএমপির প্রতিটি ইউনিটকে কাজ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিএমপির এই কর্মকর্তা।
রোববার এ নির্দেশনা পাওয়ার পর নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে তল্লাশি বসিয়েছে থানা পুলিশ। পাশাপাশি র্যাব, ডিবি, কাউন্টার টেররিজম ইউনিটসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ইউনিটগুলো তৎপর হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নিউমার্কেট থানা পুলিশ টিচার্স ট্রেনিং কলেজের সামনে চেকপোস্ট বসিয়েছে। রোববার বেলা ১টা থেকে একাধিক পয়েন্টে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন নিউমার্কেট থানার পরিদর্শক (পেট্রল) আল মামুন ভূইয়া।
একইকথা জানিয়েছেন উত্তরা পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জঙ্গিরা যাতে শহর ছেড়ে যেতে না পারে সেইজন্য একাধিক পয়েন্টে চেকপোস্ট বসিয়েছি। সন্দেহভাজন জায়গাতে তল্লাশিও চলছে।’
থানা পুলিশের পাশাপাশি র্যাবের গোয়েন্দা ও ব্যাটেলিয়নের সদস্যরা কাজ করছে বলে নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন বাহিনীটির মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের ইন্টেলিজেন্স ও ব্যাটেলিয়নের সদস্যরা পালিয়ে যাওয়া জঙ্গিদের গ্রেপ্তারে তৎপর রয়েছে।’
এদিকে, ঢাকার আদালত থেকে পালিয়ে যাওয়া দুই জঙ্গিকে ধরিয়ে দিলে ২০ লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এই দুই জঙ্গি হলেন প্রকাশক দীপন হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামি মইনুল হাসান ও আবু সিদ্দিক।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল দুই জঙ্গিকে ধরিয়ে দেয়ার বিনিময়ে পুরস্কারের এই ঘোষণা দিয়েছেন।
সচিবালয়ে রোববার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনায় কারও গাফিলতি থাকলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তিনি বলেন, ‘দুই জঙ্গিকে ফাঁসির নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। তারা আনসার আল ইসলামের সদস্য আবু সিদ্দিক ও মইনুল হাসান। তাদের আনা হয়েছিল আদালতে। কোর্ট হাজত থেকে নিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশকে কেমিক্যাল ছুড়ে অজ্ঞান করে। কয়েকজন সমর্থক তাদের নিয়ে পালিয়ে যায়।’
এর আগে, দুপুর ১২টার দিকে জাগৃতি প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী ফয়সল আরেফীন দীপন হত্যা মামলায় আদালতে আনার পর পুলিশের চোখমুখে গ্যাস স্প্রে করে পালিয়ে যান নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের দুই সদস্য।
ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল থেকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এ দুই আসামি পালিয়ে যান বলে নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) উপকমিশনার (মিডিয়া) ফারুক হোসেন।
পালিয়ে যাওয়া দুই আসামি হলেন আবু সিদ্দিক সোহেল ও মইনুল হাসান শামীম।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পুলিশকে স্প্রে করে আগে থেকে প্রস্তুত একটি মোটরসাইকেলে চড়ে দ্রুত পালিয়ে যান তারা। মোটরসাইকেলের চালক ছিলেন আরেকজন।
পালিয়ে যাওয়া দুই জঙ্গিকে ধরতে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় চেকপোস্ট বসানো হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
দীপন হত্যায় ৮ জনের মৃত্যুদণ্ড
গত বছর ১০ ফেব্রুয়ারি, প্রকাশক ফয়সল আরেফীন দীপন হত্যায় আট আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেয় আদালত। মৃত্যু নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তাদের ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে রাখতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে তাদের ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।
ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমান বুধবার দুপুর ১২টার পর এ রায় দেন। এ সময় দীপনের স্ত্রী রাজিয়া রহমান আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- মইনুল হাসান শামীম, আ. সবুর, খাইরুল ইসলাম, আবু সিদ্দিক সোহেল, মোজাম্মেল হুসাইন ওরফে সায়মন, শেখ আব্দুল্লাহ, সেনাবাহিনীর চাকরিচ্যুত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক ও আকরাম হোসেন ওরফে হাসিব। তারা সবাই জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য।
তাদের মধ্যে জিয়াউল হক এবং আকরাম হোসেন পলাতক।
পরে এই সংগঠনটি (আনসারুল্লাহ বাংলা টিম) আনসার আল ইসলাম নামে আত্মপ্রকাশ করে।
মামলার ছয় আসামিকে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে কাশিমপুর কারাগার থেকে এনে আদালতপাড়ার একটি গারদখানায় রাখা হয়। বেলা ১১টার দিকে তাদের আদালতে তোলা হয়।
২০১৫ সালের ৩১ অক্টোবর আজিজ সুপার মার্কেটে নিজ অফিসে দীপনকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ওই দিনই তার স্ত্রী শাহবাগ থানায় হত্যা মামলা করেন।
রায়ে বলা হয়, জিহাদের অংশ হিসেবে নিষিদ্ধ সংগঠন আনসাল আল ইসলাম বা আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্যদের লক্ষ্য ছিল ব্লগার, লেখক ও প্রকাশকদের হত্যা করে মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে বন্ধ করা এবং রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক ও অসম্প্রদায়িক চরিত্র ধ্বংস ও নস্যাৎ করা।
আসামিদের উদ্দেশ্য ছিল মানুষের কণ্ঠ স্তব্দ করে দেয়া এবং মানুষের মনে আতঙ্ক তৈরি করে জননিরাপত্তা বিঘ্নিত করা বা হুমকির মুখে ফেলে সামাজিক বিশৃঙ্খলা তৈরি করা।