কিশোরগঞ্জের নিকলীতে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়ে গৃহবধূর মৃত্যুর অভিযোগে মামলা করে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বাদী ও তার স্বজনরা। হাট-বাজারে চলাফেরায়ও বাধা দেয়া হচ্ছে তাদের।
পুলিশ চারজনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠালেও বাকি আসামিরা এলাকায় প্রকাশ্যে মামলা তুলে নিতে চাপ সৃষ্টি করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
মামলার বাদীর অভিযোগ, গত ২৭ জুন রাত ৮টার দিকে বাবার বাড়ি থেকে স্বামীর বাড়ি যাওয়ার পথে মুখে গামছা প্যাঁচিয়ে সেই গৃহবধূকে তুলে নেয়া হয়। সাত থেকে আটজন মিলে ২০ বছর বয়সী ওই নারীকে ধর্ষণ করে। দুই দিন পর রাত ২টার দিকে কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে মৃত্যু হয় তার।
এ ঘটনায় সেই নারীর মামা সাতজনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও তিন থেকে চারজনকে আসামি করে নিকলী থানায় মামলা করেন।
সেই নারীকে হাসপাতালে নিয়েছিলেন তার প্রতিবেশী এক নারী। তিনি জানান, মৃত্যুর আগে সেই নারী যাদের নাম বলে গেছেন, তাদের নামেই মামলা হয়েছে।
তিনি জানান, পুলিশ চারজনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠালে তাদের স্বজন এবং অন্য আসামিরা তাদের মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। তাদের দাবি, মামলা তুলে নিতে হবে।
প্রাণ হারানো গৃহবধূর মা বলেন, ‘আমরা অসহায় মানুষ। দিন আইন্যা দিন খাই। আমার ছেরিডারে (মেয়ে) ধর্ষণ কইরা মাইরালচে। মামলা কইরা আরও বড় বিফদে ফড়ছি। মামলা করছে দেইখ্যা আমার ভাই বাইত আইতারে না। আসামি আর হেরারা আত্মীয়স্বজন কয়, মাইরালব বুলে। আমি বিচার চাই।’
মামলার বাদী জানান, বিয়ের পর থেকেই তার ভাগ্নিকে যৌন পেশায় নামতে চাপ দিতেন তার স্বামী। আসামিরাও তাকে নানা সময়ে আপত্তিকর ইঙ্গিত দিত। রাজি না হওয়ায় তাকে ধর্ষণ করা হয়।
তিনি জানান, মামলার ৩ নম্বর আসামি সুকন মিয়ার বোনজামাই চান মিয়া ৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি মামলা তুলে নেয়ার জন্য চাপ দিচ্ছেন, আবার হুমকিও দিচ্ছেন। পুলিশকে জানালে তারাও গুরুত্ব দেয় না৷
তিনি বলেন, ‘আমি মামলার বাদী হয়ে বাড়িতে থাকতে পারছি না, অথচ আসামিরা ঘুরে বেড়াচ্ছে দিব্যি আরামে।’
এই অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ নেতা চান মিয়া বলেন, ‘৩ নম্বর আসামি আমার শ্যালক ঠিক আছে। তবে মামলা তুলে নেয়ার জন্য বাদীকে আমি কিছুই বলিনি।’
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গত ২৭ জুন রাত ৮টার দিকে বাবার বাড়ি থেকে স্বামীর বাড়ি যাচ্ছিলেন ভুক্তভোগী নারী। আসামিরা তার মুখে গামছা প্যাঁচিয়ে ধরে নিয়ে যায়। মেয়েটির স্বামীর সহযোগিতায় তারা পালাক্রমে ধর্ষণ করে।
পরদিন সকাল ৮টার দিকে স্থানীয়রা সেই নারীকে বিবস্ত্র অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে বাড়িতে খবর দেন। পরে তারা গিয়ে উদ্ধার করে নিকলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। অবস্থা গুরুতর দেখে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে পাঠান।
ভুক্তভোগী নারী মারা গেলে নিকলী থানায় মামলা করেন তার মামা।
নিকলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনসুর আলী আরিফ ভুক্তভোগী পরিবারটির অভিযোগ স্বীকার করতে চাননি। তিনি বলেন, ‘মামলার পরই চারজনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’
তদন্তের অগ্রগতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কিছুদিনের মধ্যেই চার্জশিট দেয়া হবে।’
আসামি যারা
এজাহারে যাদের নাম উল্লেখ আছে, তারা হলেন সাহাপুর গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য রনি মিয়া, রমচান মিয়া, দক্ষিণ জাল্লাবাদ গ্রামের সুকন মিয়া, নাছির মিয়া, ভুনা নয়াহাটি গ্রামের মো. শরীফ, লাল চান মিয়া ও সাহাপুর গ্রামের একদিল মিয়া।
এদের মধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছেন লাল চান মিয়া, রমচান মিয়া, মো. শরীফ ও নাছির মিয়া।