বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

স্কুল-শিক্ষক-শিক্ষার্থী নেই, জাতীয়করণে এমপির সুপারিশ

  •    
  • ১৮ নভেম্বর, ২০২২ ১৭:০৫

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস বলছে, এমন কোনো বিদ্যালয় তাদের তালিকায় নেই। আর সংসদ সদস্য বলছেন, না বুঝে জাতীয়করণের জন্য সুপারিশ করেছেন তিনি। পরে সেটি বাতিলও করেছেন। এলাকায় গিয়েও কোনো স্কুল খুঁজে পাওয়া যায়নি।

বিদ্যালয়ের কোনো অস্তিত্ব নেই, নেই শিক্ষার্থী-শিক্ষকও। অথচ ২১ বছরের পুরোনো বিদ্যালয় দেখিয়ে অস্তিত্বহীন এই প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করতে জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন হবিগঞ্জের নবীগঞ্জের এক ব্যক্তি। বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ করতে হাইকোর্টে মামলাও লড়ছেন এক যুগ ধরে। এমনকি জাতীয়করণের জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্যও করেছেন সুপারিশ।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস বলছে, এমন কোনো বিদ্যালয় তাদের তালিকায় নেই। আর সংসদ সদস্য বলছেন, না বুঝে জাতীয়করণের জন্য সুপারিশ করেছেন তিনি। পরে সেটি বাতিলও করেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার পূর্ব জাহিদপুর ও বরকতপুর গ্রামে কোনো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই। ফলে এই দুই গ্রামের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের অন্তত এক কিলোমিটার দূরের নহরপুর ও ঋণকারিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যেতে হয়। গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে পূর্ব জাহিদপুরে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্মাণের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত আবেদন করেন সাবেক ইউপি সদস্য চুনু মিয়া।

তার আবেদনের পর ওই গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপনের জন্য শিক্ষা অফিসের তথ্য সংগ্রহ শুরু হলে দেখা যায় কোনো তথ্যই সঠিক দেয়া হয়নি।

শিক্ষা অফিসের তথ্য বলছে, ‘পূর্ব জাহিদপুর মাস্টার চৌর চৌধুরী বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’ নামে একটি স্কুল রয়েছে সেই গ্রামে। স্কুলটির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান শিক্ষক পাশের শিবপাশাপা গ্রামের আলমগীর হোসেন চৌধুরী। তিনি তার বাবা চৌর চৌধুরীর নামে স্কুলটির নামকরণ করেছেন। ২০১২-১৩ অর্থবছরে দেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয় একযোগে জাতীয়করণ করে সরকার।

তখন ‘পূর্ব জাহিদপুর মাস্টার চৌর চৌধুরী বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’ জাতীয়করণ না হওয়ায় হাইকোর্টে মামলা করেন আলমগীর হোসেন চৌধুরী। এরপর থেকে এক যুগ ধরে হাইকোর্টে মামলা চালাচ্ছেন তিনি।

সম্প্রতি অস্তিত্বহীন এই বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ করতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে একটি সুপারিশ (ডিও) করেছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য গাজী মো. শাহ নওয়াজ মিলাদ।

তবে আসলেই কি গ্রামে এই বিদ্যালয়টি আছে? গ্রামবাসী বলছেন, স্বাধীনতার পর থেকে ওই গ্রামে কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয় ছিল না। ফলে গ্রামের শিশুদের শিক্ষা গ্রহণের জন্য যেতে হয় এক কিলোমিটার দূরের কণকারিপাড়া গ্রামের স্কুলে।

গ্রামের শিশু শিক্ষার্থী সুমন মিয়া বলে, ‘ধামরার গ্রামে কোনো স্কুল নাই। তার লাগি আমরা কণকারিপাড়া গিয়ে লেখাপড়া করি। অনেকদূর হওয়ায় নিয়মিত স্কুলে যাইতে পারি না। বৃষ্টির দিন হইলে স্কুলে যাই না।’

গ্রামের তরুণ সেজু আহমেদ বলেন, ‘আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন থেকে দেখছি গ্রামে কোনো বিদ্যালয় নেই। যে কারণে আমাদেরও কণকারিপাড়া গিয়ে লেখাপড়া করতে হয়েছে। এখন আমাদের ছোট ভাই-বোনেরাও সেই স্কুলেই পড়ছে। আমরা চাই আমাদের গ্রামে একটি সরকারি স্কুল হোক।’

সাবেক ইউপি সদস্য চুনু মিয়া বলেন, ‘স্বাধীনতার পর থেকে আমাদের গ্রামে কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয় হয়নি বা ছিল না। এ কারণে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য আমি ইউএনও মহোদয়ের কাছে লিখিত আবেদন করেছি। এখন শুনলাম এই গ্রামে নাকি একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। তাহলে সেটি কোথায়?’

আলমগীর হোসেন চৌধুরী ‘পূর্ব জাহিদপুর মাস্টার চৌর চৌধুরী বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’ নামের যে স্কুলটি জাতীয়করণ করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, সেটি কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি। আলমগীর হোসেনের দেখানো স্থানে গিয়ে দেখা যায়, একটি টিনশেড ঘরে একটি পরিবার বসবাস করছে।

পরিবারের প্রধান সাহেদ আলী বলেন, ‘আমরা এই জায়গা কয়েক বছর আগে কিনেছি। পরে ঘর বানিয়ে এখানে চার বছরের বেশি সময় ধরে বসবাস করছি। এখানে কোনো স্কুল ছিল না।’

বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান শিক্ষক দাবিদার আলমগীর হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘শিক্ষা অফিসে গেলেই স্কুলটি আছে কি না তা জানা যাবে। সেখানে স্কুলের যাবতীয় কাগজপত্র জমা রয়েছে। স্কুল না থাকলে আমি জাতীয়করণ করব কীভাবে? ২০১২ সালে আমি স্কুলটি জাতীয়করণ করতে কমপ্লিট ফাইল মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছি।’

তবে শেষ মুহূর্তে আলমগীর হোসেন স্বীকার করেন যে সেখানে বর্তমানে কোনো স্কুলঘর নেই। তবে কিছুদিন আগেও ছিল।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কাজী সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘জাহিদপুর গ্রামে কোনো স্কুল আছে বলে শিক্ষা অফিসের কাগজপত্রে উল্লেখ নেই। এমনকি “পূর্ব জাহিদপুর মাস্টার চৌর চৌধুরী বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়” নামে কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে কখনও কোনো শিক্ষার্থী সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নেয়নি। শিক্ষা অফিস থেকে ইস্যু হয়নি কোনো বই।’

জাতীয়করণের জন্য সংসদ সদস্যের দেয়া সুপারিশে উল্লেখ করা হয়েছে, “২০০১ সাল থেকে ‘পূর্ব জাহিদপুর মাস্টার চৌর চৌধুরী বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’ ৫ জন শিক্ষক দিয়ে অদ্যাবদি মানসম্মত শিক্ষা দিয়ে আসছে। ২০০৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত অসংখ্য শিক্ষার্থী প্রাথমিক সমাপনী পরিক্ষায় অংশ নিয়ে আসছে। জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তারাও বিভিন্ন সময় স্কুল পরিদর্শনে গিয়েছেন এবং লেখাপড়ার মানে তারা সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সংসদ সদস্য গাজী মো. শাহ নওয়াজ মিলাদ বলেন, ‘না বুঝে আমি জাতীয়করণের জন্য সুপারিশ করেছি। পরে জানতে পারি, সেই গ্রামে কোনো স্কুল নেই। পরে আবার চিঠি দিয়ে সেই সুপারিশ বাতিলও করেছি।’

তিনি বলেন, ‘আমি চাই এই গ্রামে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হোক। এর জন্য যাবতীয় ব্যবস্থা আমি গ্রহণ করব।’

এ বিভাগের আরো খবর