রাজধানীতে আগামী ১০ ডিসেম্বর বিএনপির যে সমাবেশ ডাকা হয়েছে, সরকারের সঙ্গে ফয়সালা তার আগেই হতে পারে বলে জানিয়েছেন দলটির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু।
তিনি বলেছেন, দেশে যে আলামত ও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে, এতে এক মুহূর্ত ভাবার উপায় নাই যে, এ সরকার টিকবে। সরকার যে ক্ষমতায় থাকতে পারবে না, সে আলামত তারা বুঝতে পেরেছে।
১০ ডিসেম্বর নিয়ে বিএনপির বিশেষ কোনো পরিকল্পনা নেই বলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বক্তব্য রাখার পরদিন শুক্রবার উল্টো এ বক্তব্য দেন দুদু।
জাতীয় প্রেস ক্লাবে বিএনপি-জামায়াতপন্থি সংগঠন বাংলাদেশ ইয়ূথ ফোরামের এক আলোচনায় তিনি বলেন, ‘ফয়সালা ১০ তারিখে হতে পারে, আগেও হতে পারে। গণঅভ্যুত্থান যে হবে, এটা নিশ্চিত থাকেন। তার আলামত ও লক্ষণ আপনি যদি রাজনীতি করে থাকেন, তাহলে বুঝতে পারবেন।’
আলামতগুলো সরকারও বুঝতে পেরেছে বলে মনে করেন দুদু। তিনি বলেন, ‘তাই আগামী দিন বিএনপির দিন।’
১০ ডিসেম্বর নিয়ে উত্তেজনায় ফখরুলের পানি
নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবিতে গত ৮ অক্টোবর থেকে বিএনপি ধারাবাহিক যে বিভাগীয় সমাবেশ করছে তাতে রাজধানীতে সমাবেশের পরিকল্পনা আছে ১০ ডিসেম্বর।
সেটি নিয়ে বাড়তি আলোচনার কারণ দলটির কেন্দ্রীয় নেতারাই। একাধিক ভাইস চেয়ারম্যান ও সাংগঠনিক সম্পাদক ঘোষণা দিয়েছিলেন, সেদিন থেকে দেশ চলবে বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নির্দেশে। এমনকি ১০ ডিসেম্বর যুক্তরাজ্য থেকে তারেক রহমান ‘বীরের বেশে ফিরবেন’ এমন ঘোষণাও এসেছে দলটির সমাবেশ থেকে।
আওয়ামী লীগ নেতারাও এখন ১০ ডিসেম্বর নিয়ে নিয়মিত কথা বলছেন। এই মাসে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে পরাজিত করে বাংলাদেশের স্বাধীন হওয়ার কথা তুলে ধরে ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিএনপিকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘ডিসেম্বর আপনাদের নয়, ডিসেম্বর আমাদের।’
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামীকে যেভাবে দমন করা হয়েছিল, ১০ ডিসেম্বর বাড়াবাড়ি করলে বিএনপিকেও একইভাবে দমন করা হবে।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাদের মধ্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বৃহস্পতিবার উত্তেজনায় পানি ঢালেন। তিনি বলেন, ‘আমরা পরিষ্কারভাবে বলছি ঢাকায় হচ্ছে বিভাগীয় সমাবেশ। আমরা যে কর্মসূচি দিয়েছিলাম ১০টি বিভাগ নিয়ে, তার সর্বশেষ কর্মসূচি হচ্ছে ঢাকায়। ঢাকা থেকে হয়তো আমাদের পরবর্তী কর্মসূচি, দাবিদাওয়া নিয়ে আরও বৃহত্তর আন্দোলন নিয়ে জনগণের সামনে আসব। এটা আমাদের চূড়ান্ত কর্মসূচি নয়, এটা হচ্ছে স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি।
‘এমন কোনো কর্মসূচি আমরা নেব না, যেটাতে জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত হবে, বিপদগ্রস্ত হবে। আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে জনগণের দাবিগুলো নিয়ে আন্দোলন করছি শান্তিপূর্ণভাবে। আর শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করে যাব।’
‘নয়াপল্টন না পেলে বিএনপির সমাবেশ গোটা শহরে’
ফখরুলের বিপরীত বক্তব্য দিয়ে দুদু বলেন, তাদের দাবি অনুযায়ী ১০ ডিসেম্বর নয়াপল্টন বরাদ্দ না দিলে পরিণতি ভালো হবে না।
তিনি বলেন, ‘আমরা নির্দিষ্ট একটা জায়গা চেয়েছি, দিলে ভালো। আর টালবাহানা করে কোনো লাভ নাই। সারা ঢাকা শহরে মানুষ দিয়ে সয়লাব হয়ে যাবে। নির্দিষ্ট কোনো জায়গায় তখন সমাবেশ হবে না। সারা ঢাকা শহরেই তিন-চারদিন ধরে সমাবেশ হবে। আমার মনে হয় ঢাকা শহরে সপ্তাহব্যাপী সমাবেশ হবে। কারণ, অন্যান্য বিভাগে তিন চার দিন ধরে হয়েছে।’
‘বিএনপির কর্মীরা এখন আর ভয় পায় না’ উল্লেখ করে দুদু এও বলেন, ‘গত ছয়টা সমাবেশে তা প্রমাণিত হয়েছে। আগামীকাল সিলেটের সমাবেশে জনসমুদ্র হবে।’
বিএনপি ক্ষমতায় গেলে কী কী করবে, তারও উল্লেখ করেন বিএনপি নেতা। তিনি বলেন, ‘পুলিশ প্রশাসনে যারা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে চাকরিচ্যুত হবে, বিএনপি সরকার ক্ষমতায় আসলে তাদের শুধু চাকরি ফেরত দেয়া হবে না, যথাযথ ক্ষতিপূরণও দেয়া হবে। আর যারা আমাদের নেতা-কর্মীদের অন্যায়ভাবে নির্যাতন করছে মামলা দিচ্ছে, জেলখানায় নিয়ে যাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধেও যথাযথ উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
দেশে গণতন্ত্র নেই অভিযোগ করে দুদু বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে অন্য কারো সাথে তুলনা করা যায় না। তিনি হলেন আপসহীন নেত্রী। তিনি থাকতে এই দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হবে না, এটা মানা যায় না, স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা হবে না, এটা মানা যায় না। সে জন্য সবাইকে রাস্তায় নেমে আসতে হবে।’
‘গোপালগঞ্জ থেকেও জিতবেন তারেক’
বিএনপির দাবি মেনে নিয়ে নির্দলীয় সরকার বা জাতীয় সরকারের অধীনে ভোট হলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আওয়ামী লীগের ঘাঁটি গোপালগঞ্জ থেকেও জিতবেন বলে মনে করেন দুদু।
তিনি বলেন, ‘যদি প্রধানমন্ত্রীর আসনে শেখ হাসিনা না থাকেন আর সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আমার ধারণা গোপালগঞ্জ থেকেও তারেক রহমান জিতবেন।’
তারেক রহমান খুব সাধারণ জীবনযাপন করেন দাবি করে তিনি বলেন, ‘বিরোধী দলে থাকা অবস্থাতেই আওয়ামী লীগ নেত্রী আমাদের নেতার বিরুদ্ধে এমন কোনো অপপ্রচার নাই যে, তিনি করেন নাই।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী জুবাইদা রহমানের নামে মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে এ আলোচনার আয়োজন করা হয়।
আয়োজক সংগঠনের উপদেষ্টা এম নাজমুল হাসানের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুস সালাম, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মোহাম্মদ শাহজাদা মিয়া, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ।