কনস্যুলেট অফিস খুলে ঢাকা থেকে পর্তুগালগামীদের ভিসা দেবে লিসবন। আরও বেশিসংখ্যক বাংলাদেশি কর্মী নেয়ার পাশাপাশি ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করতেও রাজি হয়েছে দেশটি।
ঢাকা সফরে আসা পর্তুগালের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ফ্রান্সিসকো আনদ্রে শুক্রবার এ কথা জানান।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্রাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) আয়োজিত এক মতবিনিময়ে বক্তব্য রাখছিলেন তিনি। আয়োজনের বিষয় ছিল ‘বাংলাদেশ-পর্তুগাল রিলেশন্স: কোয়েস্ট ফর ডিপার বাইলেটারাল কো-অপারেশন।’
পর্তুগিজ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘পর্তুগালের শ্রমবাজার সারা বিশ্বের জন্য উন্মুক্ত। বাংলাদেশি শ্রমিকরা যাতে সেই বাজারে সহজে প্রবেশ করতে পারে, সে জন্য ভিসা প্রক্রিয়া আরও সহজ করাসহ সব ধরনের উদ্যোগ নেবে লিসবন।’
কনস্যুলেট অফিস খুললে বাংলাদেশ থেকে আরও বেশি শ্রমিক নেয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হবে বলেও মনে করেন তিনি। জানান, কৃষি খাত ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতে জনবলের বহু চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশ তার দেশের বিনিয়োগকারীদের জন্য আকর্ষণীয় বলেও জানান তিনি।
শুক্রবার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্রাটেজিক স্টাডিজ আয়োজিত মতবিনিময় সভায় পর্তুগালের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ফ্রান্সিসকো আনদ্রে ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। ছবি: নিউজবাংলা
বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের বেশি হারে বৃত্তি পাওয়ার ব্যবস্থা করতে পর্তুগাল সরকার কাজ করছে বলেও জানান দেশটির প্রতিমন্ত্রী।
পর্তুগালে বর্তমানে ১০ হাজার বাংলাদেশি বসবাস করছে এবং সংখ্যাটি ক্রমেই বাড়ছে। এই অধিবাসীদের মধ্যে কেউ কেউ কিছু সমস্যায় আছেন। তাদের সেই সমস্যার সমাধানে সে দেশের সরকার কাজ করছে বলেও জানান পর্তুগালের নেতা।
ফ্রান্সিসকো আনদ্রে বলেন, ‘পাঁচ শ বছর আগে পর্তুগিজদের এ দেশে আগমন। দুই দেশ সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি পালন করছে। বাংলাদেশে আমিই প্রথম কোনো উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি হিসেবে এসেছি। আশা করি, এতে সম্পর্কের নতুন জানালা খুলেছে। এই সফরের মাধ্যমে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে অনন্য উচ্চতায় নিতে চায় আমার দেশ।’
পর্তুগাল নিজের ৬০ শতাংশ জ্বালানি চাহিদা নবায়নযোগ্য উৎস থেকে পূরণ করে জানিয়ে এই জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের আগ্রহও প্রকাশ করেন প্রতিমন্ত্রী। সৌরবিদ্যুৎ ও বায়ুবিদ্যুৎ সহযোগিতার বড় ক্ষেত্র হতে পারে বলে মনে করেন তিনি।
পর্তুগিজ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘অর্থনীতির চলমান সংকট নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। সর্বত্রই জ্বালানিসংকট একটি বড় সমস্যা হিসেবে হাজির হচ্ছে। আমাদের আলোচনায় এটাকেই গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।’
রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানে বাংলাদেশের সঙ্গে পর্তুগাল একমত বলেও জানান তিনি। তার দেশ বাংলাদেশের পাশে থাকবে বলেও আশ্বাস দেন। বলেন, ‘আমরা মনে করি, শরণার্থী সংকটের সমাধান শুধু একটি দেশের একার দায়িত্ব নয়, এটা এ অঞ্চলের সব দেশের দায়িত্ব।’
সামরিক ক্ষেত্রেও বাংলাদেশকে সব ধরনের সহযোগিতা দিতে পর্তুগাল সরকার রাজি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নৌবাহিনীসহ সব বাহিনীর প্রয়োজন মেটাতে আগ্রহী আমরা।’
বাংলাদেশকে খেলাধুলায় সহায়তা করতেও তার দেশ প্রস্তুত বলে জানান ফ্রান্সিসকো আনদ্রে।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে পর্তুগালের ভিসা করার বিষয়টি আমরা মে মাস থেকে বলে আসছি। অচিরেই সেই সুসংবাদ পাব। এখন আমাদের জনগণকে দিল্লি গিয়ে ভিসা করতে অনেক টাকা, সময় ও শ্রম ব্যয় করতে হয়, সেই সঙ্গে থাকে অনিশ্চয়তা।’
আমরা দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগ বাড়ানোর পাশাপাশি চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সরাসরি জাহাজ চলাচল নিয়েও কাজ হচ্ছে বলে জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে বক্তব্য দেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পশ্চিম) সাব্বির আহমেদ চৌধুরী। সভাপতিত্ব করেন বিআইআইএসএস চেয়ারম্যান রাষ্ট্রদূত কাজি ইমতিয়াজ হোসেন। স্বাগত বক্তব্য দেন বিআইআইএসএসের মহাপরিচালক শেখ পাশা হাবিব উদ্দিন।
বক্তারা বলেন, এই অঞ্চলের সঙ্গে পর্তুগালের বাণিজ্যের শুরু ষোড়শ শতাব্দীতে। মাঝে ভাটা পড়লেও নতুন ক্ষেত্র চিহ্নিত করার মাধ্যমে অর্থনৈতিক সম্পর্ককে এগিয়ে নেয়ার সুযোগ আছে।
নবায়নযোগ্য জ্বালানি, পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি, টেকসই উন্নয়ন, মানবসম্পদ রপ্তানি, সমুদ্র প্রযুক্তি, সুনীল অর্থনীতি, নারীর ক্ষমতায়ন, শিক্ষা, ডিজিটাইজেশন এবং জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে দুই দেশ কাজ করতে পারে বলে মত দেন তারা।
ঢাকায় পর্তুগালের কূটনৈতিক মিশন খোলার গুরুত্বও তুলে ধরা হয় মতবিনিময়ে।