বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

কীভাবে মসজিদের টাকা চেয়ারম্যানের পেটে

  •    
  • ১৭ নভেম্বর, ২০২২ ১৬:২৭

প্রকল্পের পুরো বরাদ্দ ৫৫ হাজার টাকার হিসেব চাইলে মসজিদ কমিটির সভাপতি মাহবুবর রহমান বলেন, ‘ছয় জন ইউপি সদস্যকে ৩ হাজার করে টাকা দিছি। চেয়ারম্যানকে পাঁচ হাজার। মসজিদে ১৪ হাজার আর বাকি টাকা আমি খাইছি।’

গাইবান্ধা সদর উপজেলায় দু’টি মসজিদের নামে সরকারি বরাদ্দের টাকা তুলে আত্নসাতের অভিযোগ উঠেছে রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. মোসাব্বীর হোসেনের বিরুদ্ধে।

মসজিদ কমিটি ও প্রকল্পের সভাপতির সঙ্গে যোগসাজশ করে যৎসামান্য অর্থ মসজিদে দিয়ে বাকি টাকা আত্মসাতের এমন ঘটনায় এলাকায় সমালোচনা শুরু হয়েছে। তবে এ নিয়ে কেউ লিখিত অভিযোগ না করলেও চেয়ারম্যানসহ অভিযুক্তদের শাস্তি ও অর্থ ফেরতের দাবি জানিয়েছেন মুসল্লি ও এলাকাবাসী।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, সদর উপজেলার রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের রোস্তমের মোড়ে নূরে রহমত জামে মসজিদের নামে ২০২১-২২ অর্থবছরে গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর) দ্বিতীয় পর্যায়ে উপজেলা ভিত্তিক উন্নয়ন প্রকল্পে সংস্কার বাবদ বরাদ্দ দেয়া হয় ৫৫ হাজার টাকা।

এরপর মসজিদের বর্তমান সভাপতি মাহবুবর রহমান মসজিদ কমিটি কিংবা কোনো মুসল্লিকে না জানিয়ে নিজেই প্রকল্প সভাপতি হয়ে পুরো টাকা তুলে নেন।

পরে মসজিদ কমিটির হাতে মাত্র ১৪ হাজার দিয়ে বাকি টাকা ইউপি মেম্বার ও চেয়ারম্যানসহ তিনি ভাগবাটোয়ারা করে নেন।

মুসল্লিরা জানায়, গত এক বছরে মসজিদে কোন সরকারি অনুদান আসেনি। কিছুদিন আগে মসজিদ কমিটির সভাপতি মাহবুবর রহমান অযুখানা নির্মাণ করার জন্য ১৪ হাজার টাকা দেন। এই টাকা দেয়ার সময় মাহবুবর রহমান দান হিসেবে মুসল্লিদের অবগত করেন। আর প্রকল্পের ৫৫ হাজার টাকার কথা তিনি গোপন রাখেন।

এ নিয়ে মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক হাবিজার রহমান বলেন, ‘গত এক বৎসরের মধ্যে কোন টাকা পয়সা পাইনি আমরা। মসজিদের বরাদ্দের টেকা কেটা (কে) কি করল; তা তো হামরা জানি নে। মসজিদের টাকা খালো( খেলো) কেটা; হামরা (আমরা) তার শাস্তি চাই!’

মসজিদ কমিটির তৎকালীন সভাপতি মো. নূর ইসলাম বলেন, ‘পাঁচ-ছয় মাস আগে মাহবুবরের কাছে থেকে আমরা ১৪ হাজার টাকা পেয়েছি তা দিয়ে কাজ করছি। আর কোন টাকা তো আমরা পাইনি। কোন প্রকল্প আসছে কি না; তাও তো জানি না।’

তবে অভিযুক্ত মাহবুবর রহমান প্রথমে অর্থ আত্নসাতের বিষয়টি অস্বীকার করলেও গোপন ক্যামেরায় সব অকপটে স্বীকার করেন।

তিনি বলেন, ‘প্রকল্পটা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে পাইছি। আমার বউ এই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য। আমাদের একটা ফোরাম আছে। সেখানে সিস্টেম আছে একটা। সবাইকে পাঁচ হাজার করে টাকা দেয়া লাগে।’

প্রকল্পের পুরো বরাদ্দ ৫৫ হাজার টাকার হিসেব চাইলে তিনি বলেন, ‘ছয় জন ইউপি সদস্যকে ৩ হাজার করে টাকা দিছি। চেয়ারম্যানকে পাঁচ হাজার। মসজিদে ১৪ হাজার আর বাকি টাকা আমি খাইছি।’

অপরদিকে একই ইউনিয়নের জগৎ রায় গোপালপুরের জাবালে রহমত জামে মসজিদের নামে ২০২১-২২ অর্থবছরে গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর) প্রথম পর্যায়ে উপজেলাভিত্তিক উন্নয়ন প্রকল্পে সংস্কার বাবদ বরাদ্দ দেয়া হয় ৫৭ হাজার টাকা। ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে প্রকল্পটির দেখভালের দায়িত্ব পান ইউপি চেয়ারম্যান। এই মসজিদ কমিটির সভাপতি আবুল হোসেনকে প্রকল্প সভাপতি বানিয়ে পুরো টাকা হাতে নেন চেয়ারম্যান মুসাব্বীর হোসেন। পরে কমিটির হাতে মাত্র ২৫ হাজার টাকা দিয়ে বাদবাকি টাকা আত্মসাৎ করেন তিনি।

মুসল্লিরা জানায়, কিছুদিন আগে সভাপতি আবুল হোসেন চেয়ারম্যানের মাধ্যমে মসজিদ সংস্কার বাবদ ২৫ হাজার টাকা দেন। তবে সেই টাকা প্রকল্পের কি না তা জানা নেই মুসল্লিদের।

মসজিদে ৫৭ হাজার টাকা বরাদ্দ হয়েছে; আপনারা পেয়েছেন মাত্র ২৫ হাজার টাকা এমন প্রশ্নে স্থানীয় মুসল্লি চাঁন মিয়া বলেন, ‘শুনছি চেয়ারম্যান সাহেব একটা বরাদ্দ দিবি। খরচা বাদে ২৫ হাজার টেকা টিকবে। এখন ফির শুনি বরাদ্দ আছিল ৫৭ হাজার। তাইলে কি বাকি টেকাটা চেয়ারম্যান খাইছে।

এ নিয়ে মসজিদ কমিটির সভাপতি ও প্রকল্প সভাপতি আবুল হোসেন বলেন, ‘এই প্রকল্পের ৫৭ হাজার টাকা চেকের মাধ্যমে আমি তুলেছি আমাকে দুই দফায় ২৫ হাজার টাকা দিছে চেয়ারম্যান। বাকি টাকা নাকি চেয়ারম্যানের পারপাসে খরচ হবে; এটা বলে বাদবাকি টাকা চেয়ারম্যান নিছে।’

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে ইউনিয়ন পরিষদে তিন দফায় গিয়েও পাওয়া যায়নি চেয়ারম্যান মুসাব্বীর হোসেনকে। সব অভিযোগ অস্বীকার করে মুঠোফোনে তিনি বলেন, ‘সব টাকাই মসজিদে দেয়া হয়েছে। মসজিদ বিষয়ে আমি কোন টাকা পয়সা ইয়ে (আত্মসাৎ) করি নাই। তবে রাস্তা-ঘাটের কাজে একটু উনিশ-বিশ হতে পারে।’

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সভাপতিরাই আপনার বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তুলেছেন, এমন প্রশ্নে চেয়ারম্যান বলেন, ‘সভাপতি সাহেব হয়তো না জেনে এটা বলেছেন। আমি কোন মসজিদের টাকা উল্টাপাল্টা করিনি ভাই।’

এ নিয়ে সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) আনিছুর রহমান বলেন, ‘এমনটা হওয়ার সুযোগ নেই। আমরা সংশ্লিষ্ট মসজিদের সভাপতির নামে চেক দিয়েছি। তারা যদি টাকা মসজিদে না দিয়ে অন্য কাউকে দিয়ে দেয়; সেটার দায়ভার সভাপতিকেই নিতে হবে। এটা নিয়ে কোন অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর