বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র ফারদিন নূর পরশের মৃত্যু হয় মাথায় রক্তক্ষরণের কারণে। ভোঁতা কোনো দেশীয় অস্ত্র বা লাঠি দিয়ে তার মাথায় আঘাত করা হয় বলে মনে করছেন ময়নাতদন্তকারীরা।
নারায়ণগঞ্জ সদর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক শেখ ফরহাদ হোসেনের উপস্থিতিতে ময়নাতদন্ত করেন ডা. মফিজ উদ্দিন। এসংক্রান্ত চূড়ান্ত প্রতিবেদন বৃহস্পতিবার জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ে জমা দেয়া হয়েছে।
বুয়েট ছাত্র ফারদিন নিখোঁজ হওয়ার তিন দিন পর ৭ নভেম্বর সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদী থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে নৌ পুলিশ। বর্তমানে হত্যা মামলাটির তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। পাশাপাশি র্যাবসহ আরও কয়েকটি সংস্থা ছায়াতদন্ত করছে।
মৃতদেহের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের একটি অনুলিপি পেয়েছে নিউজবাংলা। এতে বলা হয়, ফারদিনের মাথার সামনে, পেছনে, ডানে, বামে অর্থাৎ পুরো মাথায়ই আঘাতের কালশিটে দাগ রয়েছে। একইভাবে পাঁজরের ডান ও বাম পাশে কালশিটে দাগ রয়েছে।
মদনাতদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী ফারদিনের শরীরের কোনো হাঁড় ভাঙেনি। ফুসফুসে জমাট বাঁধা কিছুর উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. এ এফ এম মশিউর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ফারদিনের মাথায় ৪-৫টি এবং বুকের দুই পাশে ২-৩টি ভোঁতা দেশীয় অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণেই তার মৃত্যু হয়।
‘তার পাকস্থলীতে খাবারের সঙ্গে অন্য কিছু ছিল কি না সেটা পুলিশ জানতে চেয়েছিল। এ জন্য আমরা কেমিক্যাল অ্যানালাইসিস ও ভিসেরা রিপোর্টের জন্য নমুনা পাঠিয়েছি।’
ফারদিন হত্যা মামলার তদন্ত কর্তৃপক্ষ ডিবি প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘ঘটনার রাত সোয়া ২টার দিকে যাত্রাবাড়ী মোড়ে ফারদিনকে দেখা গেছে। সাদা গেঞ্জি পরা অবস্থায় এক যুবক তাকে একটি লেগুনায় তুলে দেয়। ওই লেগুনায় আরও চারজন ছিল। লেগুনাটি তারাবোর দিকে নিয়ে যায়। ওই লেগুনার চালক ও সহযোগীদের নজরদারিতে রাখা হয়েছে।’
হারুন অর রশীদ বলেন, ‘ফারদিনের মৃত্যুর কারণ এখনও জানা যায়নি। কোথায় তাকে হত্যা করা হয়েছে, সে বিষয়ে এখনও নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায়নি।’
অন্যদিকে র্যাব কর্মকর্তাদের ধারণা, রূপগঞ্জের চনপাড়ায় খুন হন ফারদিন। মামলার সার্বিক তদন্তের বিষয়ে জানতে চাইলে র্যাবের গোয়েন্দা শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মশিউর রহমান গত রোববার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এটা একেবারেই ক্লুলেস একটা ঘটনা। অনেক প্রশ্নের উত্তরই মিলছে না। ফারদিনের মোবাইল ফোনের লাস্ট লোকেশন থেকে বডি পাওয়া গেছে বেশ দূরে। সেখানে কীভাবে গেল তা খতিয়ে দেখার পাশাপাশি সব কিছুই খুব সূক্ষ্মভাবে আমরা তদন্ত করছি।
‘আমরা খুব চেষ্টা করছি ফারদিনের লাস্ট লোকেশনে উপস্থিতি কীভাবে হলো সেটা জানার। কারণ আমরা রামপুরা থেকে ওর কেরানীগঞ্জ, যাত্রাবাড়ী, তারপর চনপাড়া যাওয়ার ফুটপ্রিন্ট পেয়েছি। এতগুলো জায়গা সে কেন ঘুরল এটা জানাটা জরুরি। আমরা কাজ করছি। আশা করি, সব প্রশ্নের উত্তর মিলবে।’