বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পঞ্চগড়ের নদ-নদী এখন মরাখাল

  •    
  • ১৭ নভেম্বর, ২০২২ ১১:৩১

নদ-নদীকে ঘিরে প্রাণচাঞ্চল্য ছিল পঞ্চগড়ে। এগুলোকে ঘিরেই ঘুরপাক খেত পঞ্চগড়ের অর্থনীতি। কিন্তু কালের বিবর্তনে এসব নদীর এখন মরণদশা। শুধু বর্ষাকালে এগুলোর প্রবাহ থাকে। শীত শুরুর আগেই হয়ে পড়ে শীর্ণকায় মরাখাল।

সীমান্তবর্তী জেলা পঞ্চগড়ের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে ছোট-বড় ৪৬টি নদী। এগুলোর অধিকাংশের উৎস প্রতিবেশী ভারত। এককালে এসব নদী ছিল প্রমত্তা। পাহাড় থেকে নেমে আসায় খরস্রোতা এসব নদীতে নিয়মিতভাবে চলত নৌকা।

জেলার সবচেয়ে বড় নদী করতোয়া। একে ঘিরেই গড়ে উঠেছে পঞ্চগড় শহর। ১০০ বছর আগেও এই নদীতে চলত বড় বড় নৌকা। ব্যাপারীরা নৌকায় করে তাদের সওদা নিয়ে ভিড়ত পঞ্চগড়ের ঘাটে।

নদীকে ঘিরেই প্রাণচাঞ্চল্য ছিল পঞ্চগড়ে। একে ঘিরেই ঘুরপাক খেত পঞ্চগড়ের অর্থনীতি। কিন্তু কালের বিবর্তনে করতোয়ার এখন মরণদশা। শুধু বর্ষাকালে এটির প্রবাহ থাকে। শীত শুরুর আগেই এটি হয়ে পড়ে শীর্ণকায় মরাখাল।

এখন বাইরে থেকে আসা লোকজন সেতুর নিচে তাকালে ভাবতে পারেন না এটা এককালের খরস্রোতা করতোয়া নদী। নদীতে এখন পানির দেখা পাওয়াই ভার। যেদিকে চোখ যায়, বালুর চর।

বোরো মৌসুমে নদীর বুকে সবুজের সমারোহ। নদীতে পানি না থাকায় কৃষকরা ধানের আবাদ করে নদীর বুকজুড়ে।

শুধু করতোয়া নয়, পঞ্চগড় জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত সব নদীই এখন শীর্ণকায়। পানির প্রবাহ কমে যাওয়ায় দুই তীরে বালুচর। করতোয়া ছাড়াও এ জেলার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে চাওয়াই, তালমা, পাঙ্গা, কুরুম, পাম, মহানন্দা, ভেরসা, ডাহুক, তীরনই, রণচণ্ডি, বেরং, জোড়াপানি, সাও, ঘোড়ামারা, পাথরাজ, নাগর, সিঙ্গিয়া, বহু, রসেয়া, ঘাগরা ও মরাতিস্তা। সব নদীর একই দৈন্যদশা।

প্রতিবেশী ভারত এসব নদীর উৎসমুখে এক তরফা বাঁধ বা ড্যাম নির্মাণ করায় বর্ষার পর এসব নদী পরিণত হয় মরাখালে। ভারত কর্তৃপক্ষ নদীশাসন আইন অমান্য করে নদীগুলোর উৎস এবং প্রবেশমুখে বাঁধ, স্লুইস গেট, জলাধার, ফিডার ক্যানেল ও রেগুলেটর নির্মাণ করে পানির স্বাভাবিক গতিপথ পরিবর্তন করেছে। জেলার ২২১ কিলোমিটার সীমান্তব্যাপী নির্মাণ করেছে বেড়িবাঁধ। ফলে নদীগুলো ধীরে ধীরে মরাখালে পরিণত হচ্ছে।

আবার নদীতে পানি না থাকায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর অনেক নিচে নেমে যাচ্ছে। অথচ শুস্ক মৌসুমে ভূগর্ভের পানি পঞ্চগড় জেলার সেচের একমাত্র অবলম্বন। এই পানি নিচে নেমে যাওয়ার কারণে ইরি-বোরো চাষে স্থানীয় চাষিরা সেচ দেয়ার পরও সেচের পানি দীর্ঘস্থায়ী হয় না। এদিকে নদীর নাব্যতা হ্রাস পাওয়ায় মাছসহ অন্যান্য জীববৈচিত্র্যের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। এরই মধ্যে দেশীয় অনেক মাছ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বাকিগুলোও বিলুপ্তির পথে।

ইতোমধ্যে প্রায় ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে পাঁচটি নদী ও একটি খাল পুনঃখননের উদ্যোগ নিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ‘ছোট নদী, খাল ও জলাশয় পুনঃখনন’ প্রকল্পে পঞ্চগড়ের করতোয়া, ভেরসা, চাওয়াই, পাথরাজ ও বুড়িতিস্তা নদী এবং আটোয়ারী উপজেলার বড় সিংগীয়া খাল পুনঃখননের কাজ শেষ হয়েছে।

এ প্রকল্পের আওতায় করতোয়া নদীর ৭৮ কিলোমিটার, তেঁতুলিয়ার ভেরসা নদীর ১০ কিলোমিটার, সদরের চাওয়াই নদীর ২০ কিলোমিটার, বোদার পাথরাজ নদীর ৩০ কিলোমিটার, দেবীগঞ্জের বুড়িতিস্তা নদীর ২০ কিলোমিটার এবং আটোয়ারীর বড় সিংগীয়া খালের ছয় কিলোমিটার খনন করা হয়েছে।

দলীয় প্রভাবে নানা রকম অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে এই প্রকল্পের কোনো সুফল আসেনি বলে জানিয়েছেন নদীপারের মানুষ।

পঞ্চগড় পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাফিজুল হক জানান, ইতোমধ্যে এ ১৬টি প্যাকেজের কাজ শেষের পথে। নতুন প্রকল্পের জন্যে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন হলে বাকি নদী খননের কাজ শুরু করা হবে।

পঞ্চগড় সরকারি মহিলা কলেজের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের প্রধান সহকারী অধ্যাপক গোলাম কিবরিয়া জানান, নদ-নদীগুলোর পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর অনেক নিচে নেমে যাবে। এতে এলাকায় মরুকরণসহ কৃষি উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে। এ ছাড়া জীববৈচিত্র্যের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে।

পরিবেশ প্রকৃতি এবং নদী গবেষণায় কাজ করছেন ভজনপুর ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মো. সফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘পরিকল্পিতভাবে নদী পুনঃখননের কাজ করতে না পারলে এর কোনো সুফল আসবে না। পঞ্চগড়ের ৩৪টি নদ-নদীর অধিকাংশই হুমকির মুখে। ক্রমাগত দখল-দূষণে এগুলো মৃতপ্রায়। নদী-নদী বিধ্বংসী কর্মকাণ্ডে একসময়ের খরস্রোতা নদী আজ প্রাণহীন। পঞ্চগড়ের নদ-নদীগুলোকে দলখমুক্ত ও দূষণমুক্ত করে পঞ্চগড়ের পরিবেশ প্রকৃতি বাঁচিয়ে রাখতে সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন।’

এ বিভাগের আরো খবর