বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সিংড়ায় বালু উত্তোলনে ঝুঁকিতে জনপদ

  •    
  • ১৭ নভেম্বর, ২০২২ ০৯:২৯

শেরকোল ইউনিয়নের ভাগনাগরকান্দি এলাকায় আত্রাই নদী থেকে দিনরাত ধরে দুটি ড্রেজার মেশিনের মাধ্যমে বালু উত্তোলন করছেন শ্রমিকরা। পরে সেই বালু পাঠানো হচ্ছে পাশের নির্মীয়মাণ হাইটেক পার্কে।

নাটোরের সিংড়া উপজেলার আত্রাই নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে আশপাশের বিভিন্ন স্থাপনা ঝুঁকিতে পড়েছে। অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় শেরকোল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লুৎফুল হাবীব রুবেলের যোগসাজশেই চলছে এ কর্মযজ্ঞ। এ বিষয়ে চেয়ারম্যানের ম্যানেজার জাহিদ হাসান বালু তোলার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, তারা পার্শ্ববর্তী হাইটেক পার্কের জন্য বালু তুলছেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শেরকোল ইউনিয়নের ভাগনাগরকান্দি এলাকায় আত্রাই নদী থেকে দিনরাত ধরে দুটি ড্রেজার মেশিনের মাধ্যমে বালু উত্তোলন করছেন শ্রমিকরা। পরে সেই বালু পাঠানো হচ্ছে পাশের নির্মীয়মাণ হাইটেক পার্কে। এভাবে অপরিকল্পিত ও অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে নদীতীরবর্তী মানুষের সহায়-সম্পদ, বসতভিটা, বাজার, স্থাপনা, ব্রিজ, রাস্তাঘাট হুমকির মুখে পড়ছে। প্রচলিত আইন-কানুনের তোয়াক্কা না করে এমন অবৈধ কাজ মাসের পর মাস চললেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি।

শেরকোল ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার রঞ্জু মিয়া জানান, প্রভাবশালী লোকেরা বালু উত্তোলন করছেন। বছর দুয়েক আগে বাধা দিতে গিয়ে তিনিসহ আরও তিনজন আহত হয়েছেন সন্ত্রাসী হামলায়। তাই প্রভাবশালীদের ভয়ে কেউ কথা বলার সাহস পায় না। প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই বালু উত্তোলন করা হয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।

ভাগনাগরকান্দি গ্রামের রাজু আহমেদ বলেন, ‘বালু তোলার ফলে নদীর পাড় ভেঙে তাদের সমস্যা সৃষ্টি হয়। কিন্তু প্রভাবশালী বালু উত্তোলনকারীদের ভয়ে কেউই কিছু বলে না। কেউ প্রতিবাদ করলেই তাদের নানা বিপদের সম্মুখীন হতে হয়।’

নাটোরের পরিবেশ আন্দোলনকারী সাজিদ আলী ঝর্ণা বলেন, ‘নদীতে কোথায় কী পরিমাণ বালু তোলা যায়, তা খতিয়ে দেখে পরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন করা হলে বালুর চাহিদা যেমন পূরণ হতে পারে, তেমনি নদ-নদীর নাব্যতা ফেরাতেও এর বিকল্প নেই। বালু ব্যবসায়ীরা অবৈধভাবে বালু তোলার ফলে রাষ্ট্র মোটা অঙ্কের রাজস্ব হারাচ্ছে।’

সিংড়ার ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল ইমরান জানান, এই উপজেলায় কোনো বালুমহল নেই। আত্রাই নদী থেকে যারা বালু তুলছে, তারা অবৈধভাবে এই কাজ করছে। ভাগনাগরকান্দি এলাকায় নদী থেকে বালু তোলার খবর পেয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তাকে সেখানে পাঠানো হয়েছিল। পরে ড্রেজার মালিক আতাহার আলীকে বালু উত্তোলন বন্ধ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে মোবাইল ফোনে শেরকোল ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে ফোন দিয়ে তার নাম্বার বন্ধ পাওয়া যায়। এ কারণে তিনি চেয়ারম্যানের ম্যানেজার জাহিদ হাসানকে ফোন দিয়ে বালু তুলতে নিষেধ করেছেন।

নিষেধ করার পরও কীভাবে বালু তোলা হচ্ছে এমন প্রশ্নে ভারপ্রাপ্ত ইউএনও আল ইমরান আরও জানান, এ ব্যাপারে পুলিশ প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। প্রয়োজন হলে তিনি নিজে গিয়ে বালু তোলা বন্ধ করবেন।

বালু উত্তোলনকারী ড্রেজার মালিক আতাহার আলী জানান, বালু তোলার সঙ্গে তিনি জড়িত নয়। চেয়ারম্যান রুবেল তার ড্রেজার ভাড়া নিয়েছেন। প্রতি ট্রলার বালুতে তারা তাকে ৩ হাজার টাকা ভাড়া দেন। তবে প্রশাসনের কোনো ব্যক্তি বা ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা তাকে ড্রেজার বন্ধে সরাসরি বা ফোনে নিষেধ করেননি বলে জানান আতাহার আলী।

বালু উত্তোলনের বিষয়ে জড়িত থাকার বিষয়ে জানতে শেরকোল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান লুৎফুল হাবীব রুবেলের সঙ্গে মোবাইলে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তবে তার ম্যানেজার জাহিদ হাসান বলেন, হাইটেক পার্কের জন্য তারা বালু উত্তোলন করছেন। হাইটেক পার্কের বালু সরবরাহকারী হেলাল উদ্দিনকে বালু সরবরাহ করছেন।

হাইটেক পার্কের বালু সরবরাহকারী হেলাল উদ্দিন জানান, রুবেল চেয়ারম্যানের প্রতিষ্ঠান অর্ক বালুমহলের সঙ্গে তার চুক্তি হয়েছে। তারা হাইটেক পার্কে ১৫ লাখ ঘনফুট বালু সরবরাহ করবে। চুক্তি অনুযায়ী তাদের টাকা পরিশোধ করা হচ্ছে। তারা কোথা থেকে বালু সরবরাহ করছে, এটা তার জানার বিষয় নয়।

এ বিভাগের আরো খবর