বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ব্যাংকে টাকা নেই বলে গুজব ছড়াচ্ছে সুযোগসন্ধানীরা

  •    
  • ১৭ নভেম্বর, ২০২২ ০৮:৫০

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দেশের ব্যাংক খাত নিয়ে নানা ধরনের ষড়যন্ত্রমূলক অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। দেশের বাইরে অবস্থান করে কিছু ব্যক্তি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই অপপ্রচার চালাচ্ছেন। দেশের ভেতরেও কিছু মানুষ এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন। এসব ব্যক্তি আগেও বাংলাদেশ নিয়ে, সরকারকে নিয়ে নানা ধরনের ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা খবর ছড়িয়েছে।

হঠাৎ করেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে গুজব ছড়িয়েছে ব্যাংকে টাকা নেই। বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা হতে যাচ্ছে। তাই গ্রাহকরা ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিচ্ছেন। এমনকি ব্যাংক থেকে টাকা তোলার জন্য হুড়াহুড়ি লেগেছে বলেও সামাজিক মাধ্যমগুলোতে বিভ্রান্তিকর নানা তথ্য ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা স্পষ্ট বলছেন, এসব তথ্যের কোনো ভিত্তি নেই।

বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, ব্যাংকব্যবস্থায় বর্তমানে এক লাখ ৬৯ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকার অতিরিক্ত তারল্য রয়েছে। ব্যাংক খাতে নগদ অর্থের সংকট বা তারল্য সংকট নেই।’

বুধবার রাজধানীর মতিঝিল ও কারওয়ান বাজারে কয়েকটি ব্যাংকের শাখায় সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, অন্যান্য দিনের মতোই গ্রাহকরা প্রয়োজন অনুযায়ী টাকা তুলছেন, জমা দিচ্ছেন। কারো মধ্যে কোনো উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা যায়নি।

মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের পাশেই পূবালী ব্যাংকের একটি শাখা। সেই শাখায় গিয়ে কথা হয়, রোকোনুজ্জামান নামের এক গ্রাহকের সঙ্গে। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘কত কিছুই তো গুজব ছড়ায়। কয়েক মাস ধরে বলা হচ্ছে, আমাদের অবস্থাও শ্রীলঙ্কার মতো হবে। কই, কিছুই তো হলো না। এসব গুজব। জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে ঠিক। মানুষের কষ্ট হচ্ছে। ক্ষোভ-আতঙ্ক আছে। এই সুযোগ নিয়েই সুযোগসন্ধানীরা এসব গুজব ছড়াচ্ছে।’

কারওয়ান বাজারে ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংকের শাখায় কথা হয় গ্রাহক মোয়াজ্জেম হোসেনের সঙ্গে। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই ফেসবুক-টেসবুক এসেই বেশি বেশি গুজব ছড়াচ্ছে। এটা নাই, ওটা নাই। ওটা হবে, এটা হবে। কত কিছু। এত দিন গুজব ছড়ানো হলো, সেটাতে সুবিধা হলো না; এখন ছড়ানো হচ্ছে, ব্যাংকে টাকা নাই, ভবিষতে আরও কতে কিছু ছড়ানো হবে, কে জানে।?

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দেশের ব্যাংক খাত নিয়ে নানা ধরনের ষড়যন্ত্রমূলক অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। দেশের বাইরে অবস্থান করে কিছু ব্যক্তি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই অপপ্রচার চালাচ্ছেন। দেশের ভেতরেও কিছু মানুষ এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন। এসব ব্যক্তি আগেও বাংলাদেশ নিয়ে, সরকারকে নিয়ে নানা ধরনের ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা খবর ছড়িয়েছেন।

ব্যাংক খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ‘বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা হবে’ বলে এত দিন গুজব ছড়িয়ে যারা ব্যর্থ হয়েছে, তারাই এখন ‘ব্যাংকে টাকা নেই, আমানত তুলে নিচ্ছে মানুষ’ বলে অপপ্রচার করছে। দীর্ঘদিন থেকে ছড়ানো গুজব অনুযায়ী বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা হয়নি।

শ্রীলঙ্কার মতো পরিস্থিতি বাংলাদেশে হয়নি দেখে সুযোগসন্ধানীরা এখন ব্যাংক নিয়ে নতুন ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়াতে ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে বসে বেশ কয়েকজন ব্যক্তি অর্থনীতি নিয়ে কল্পিত সব তথ্য ফেসবুক, ইউটিউবসহ নানা মাধ্যমে প্রকাশ করছেন। দেশে বসে অনেকেই সেই গুজবে আগুন ঢালছেন। আর বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতারা সেই সব গুজবের তথ্য বক্তৃতা-বিবৃতির মাধ্যমে রাজনীতির মাঠ উত্তপ্ত করার চেষ্টা করছেন বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা।

আমানত নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ কেন্দ্রীয় ব্যাংকেরগুজবের ডালপালা যখন বেশ জেঁকে বসার চেষ্টা করছিল, তখনই বিজ্ঞপ্তি দিয়ে মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

গত ১৩ নভেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, ‘ব্যাংকে গচ্ছিত আমানত নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। বাংলাদেশের ব্যাংকব্যবস্থা অত্যন্ত সুদৃঢ় অবস্থায় রয়েছে। দেশের ব্যাংকগুলোতে রক্ষিত আমানত সম্পূর্ণ নিরাপদ। এর পরও বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাংকের আমানত তুলে নেয়ার জন্য ষড়যন্ত্রমূলক খবর প্রচার হচ্ছে। বাংলাদেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা অত্যন্ত সুদৃঢ় অবস্থায় রয়েছে। ব্যাংকিং ব্যবস্থায় তারল্যের কোনো সংকট নেই।’

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫১ বছরে কোনো ব্যাংক বন্ধ হয়নি। আশা করা যায়, আগামী দিনেও বাংলাদেশের কোনো ব্যাংক বন্ধ হবে না। ব্যাংকগুলোতে জনগণের আমানত সম্পূর্ণ নিরাপদ রয়েছে।’

পরের দিন ১৪ নভেম্বর একই বিষয় নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র জি এম আবুল কালাম আজাদও বলেন, দেশের ব্যাংক খাতে কোনো তারল্য সংকট নেই।

তিনি বলেন, তারল্য ব্যবস্থাপনার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের রেপো ও অ্যাসিউরড লিকুইডিটি সাপোর্ট নীতি সর্বদা চালু রয়েছে। ব্যাংকের পরিদর্শন ও সুপারভিশন বিভাগ ব্যাপকভাবে তৎপর।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর অর্থনীতিবিদ সালেহউদ্দিন আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সংকটের সময় একটি মহল সুযোগ বুঝে নানা গুজব ছড়ায়। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি ভুল করেছে। তারা প্রকাশ করেছে যে, ১০টি ব্যাংকের অবস্থা খারাপ। এটা প্রকাশ করার দরকার ছিল না। এটা প্রকাশ পাওয়ার পরই সাধারণ মানুষ ভয় পেয়ে গেছে। এটা সাধারণত ব্যাংকগুলোই জানে।’

তিনি বলেন, ‘কিছু ব্যাংক দুর্বল থাকতেই পারে। তাদের হাতে কী পরিমাণ অর্থ আছে, ক্রেডিট রেটিং কী সেগুলো ব্যাংক জানবে, বাংলাদেশ ব্যাংক জানবে। জনসমক্ষে বলা হবে কেন? লোকজন বোঝে না তারল্য কী।’

‘কিন্তু লোকজন মনে করেছে, না জানি কী হয়ে গেছে। অলরেডি আইএমএফ আসছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ কমে যাচ্ছে। মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাচ্ছে। ব্যাংক নতুন ঋণ দিচ্ছে না। এমনিতেই এই কয়টি ঘটনায় আস্থায় কিছুটা চিড় ধরেছে। তার মধ্যে আবার রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি ব্যাংকের বিষয়ে বলা হচ্ছে, তাদের ঋণখেলাপি অনেক বেশি। লোকজন হয়তো কিছু টাকা তুলে ফেলেছে। কেউ কেউ হয়তো সঞ্চয় ভেঙেছে।’

এই সুযোগে একটি মহল ষড়যন্ত্র করে গুজব ছড়াচ্ছে বলে মনে করেন সালেহউদ্দিন আহমেদ।

বেসরকারি মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, ১ লাখ ৬৯ হাজার কোটি টাকার বেশি তারল্য আছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ছড়িয়েছে ব্যাংকে টাকা নেই। এই রকম বক্তব্য কোনো বিশেষ মহল কোনো বিশেষ কারণে ছড়াচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘ব্যাংক কিংবা ব্যাংকের শাখায় যারা টাকা উঠাতে আসছেন তারা কিন্তু এসে টাকা পাচ্ছেন। এর অর্থ দাঁড়াল ব্যাংকে যথেষ্ট পরিমাণে টাকা আছে। এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি যে কেউ টাকা উঠাতে এসে খালি হাতে ফিরে গেছেন। আমি নিজেও বুঝতে পারছি না এই রকম গুজব কারা ছড়াচ্ছে। এই রকম গুজবের কারণে জনগণের মধ্যে এক ধরনের আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে।’

এ বিভাগের আরো খবর