জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কৃষি খামারি দুরন্ত বিপ্লব হত্যা মামলার তদন্তভার পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) দেয়ার আবেদন জানানো হয়েছে।
বুধবার পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বরাবর এক আবেদনে মামলাটি নৌ-পুলিশ থেকে পিবিআইতে দেয়ার আবেদন করেছেন দুরন্ত বিপ্লবের ছোট বোন শাশ্বতী বিপ্লব।
আবেদনের কারণ হিসেবে শাশ্বতী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দুরন্ত বিপ্লবের কোনো শত্রুর খবর পাওয়া যায়নি। পরিবার, বন্ধু বা যারা দুরন্ত বিপ্লবকে চেনেন তারা কেউই কোনো শত্রুর সূত্র দিতে পারছেন না। কারণ আমার ভাই নির্বিবাদী মানুষ ছিল। কারও সঙ্গে তার কোনো কনফ্লিক্ট ছিল না।
‘পলিটিক্যালটি সে খুব বেশি উচ্চাকাঙ্ক্ষী ছিল না যে তাকে পলিটিক্যাল কারণে কেউ মেরে ফেলবে। সে নিজের মনে কৃষি কাজ করতো। মূলত এটাই সে করত। সারা জীবন সে কৃষকই হতে চেয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘এসব কারণে নরমাল সূত্রে যেহেতু এই ঘটনার কোনো ক্লু মিলছে না, তাই আমাদের কাছে মনে হয়েছে যাদের কাছে বেটার এক্সপার্টিজ, টুলস, টেকনোলজিস আছে তারা এটা তদন্তের দায়িত্ব নিলে ভাল একটা সুরাহা হতে পারে। সেজন্যই আমরা মামলাটি পিবিআইতে দেয়ার আবেদন করেছি।’
এদিকে পিবিআই-এর এক কর্মকর্তা বুধবার রাতে জানান, আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও পিবিআইকে এই মামলার তদন্তভার দেয়া হয়নি। তবে পিবিআই ছায়াতদন্ত শুরু করে দিয়েছে।
এর আগে ১৪ নভেম্বর রাতে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় অজ্ঞাতদের আসামি করে হত্যা মামলা করেন বিপ্লবের ছোট বোন শাশ্বতী বিপ্লব। তাৎক্ষণিকভাবে মামলার তদন্তভার দেয়া হয় নৌ-পুলিশকে।
আরও পড়ুন: দুরন্ত বিপ্লব নিখোঁজের দিন ‘নৌকা থেকে পড়ে যান’ একজন
দুরন্ত বিপ্লব কয়েক বছর ধরে কেরানীগঞ্জে ‘সোনামাটি অ্যাগ্রো’ নামে একটি কৃষি খামার পরিচালনা করছিলেন। ৭ নভেম্বর বেলা ৩টার দিকে মায়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন তিনি। এ সময় তিনি জানান, ঢাকার মোহাম্মদপুরের মায়ের বাসায় তিনি আসছেন।
তবে মায়ের বাসায় আসেননি দুরন্ত বিপ্লব। তার কোনো সন্ধান না পেয়ে ৯ নভেম্বর দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে পরিবার।
এরপর শনিবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় বুড়িগঙ্গা নদীতে ভাসমান অবস্থায় একটি মরদেহ পায় পুলিশ। রাতে মরদেহটি বিপ্লবের বলে নিশ্চিত করেন তার পরিবারের সদস্যরা। রোববার দুপুরে ময়নাতদন্ত হয়।
বিপ্লবের মরদেহের ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক নারায়ণগঞ্জগঞ্জ সদর জেনারেল হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার মফিজ উদ্দিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিপ্লবের মাথা ও বুকে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। মাথার পেছন দিকে বেশি আঘাত। বুকের দুই পাশেও আঘাতের দাগ রয়েছে। সাধারণ সমান্তরাল কোনো বস্তু দিয়ে আঘাত করা হয়ে থাকতে পারে। মরদেহে যেসব আঘাত রয়েছে তাতে বোঝা যায়, তাকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা এটি ধারণা করছি।’
অন্যদিকে পুলিশ কর্মকর্তারা রোববার নিউজবাংলাকে জানান, দুরন্ত বিপ্লব যে সময় থেকে নিখোঁজ সেই সন্ধ্যায় বুড়িগঙ্গা নদীর সোয়ারিঘাট এলাকায় নৌকাডুবির একটি ঘটনা ঘটে। এ সময় নদীতে ডুবে যাওয়া ব্যক্তি দুরন্ত বিপ্লব হতে পারেন। তবে এ ব্যাপারে নিশ্চিত হতে আরও সময় লাগবে।