বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ‘টাকার বস্তা’ দিতে দিতে খালি হয়ে গেছে বলে জেনেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। বলেছেন, টাকা কমে যাওয়ায় গলার জোরও কমেছে বিএনপি নেতার। এখন তিনি রক্ষণাত্মক অবস্থানে।
বুধবার বরগুনা সার্কিট হাউজ ময়দানে জেলা আওয়ামী লীগের অষ্টম ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন ক্ষমতাসীন দলের নেতা।
ডিসেম্বরে বিএনপির আন্দোলনের হুমকি নিয়ে আওয়ামী লীগ বিচলিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বিএনপির ফাঁকা বুলিতে আওয়ামী লীগ ভয় পায় না, দুর্নীতির বিরুদ্ধে খেলা হবে, ডিসেম্বরে খেলা হবে, নির্বাচনে খেলা হবে।’
নেতাকর্মীদের প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে কাদের বলেন, ‘আপনারা তৈরি থাকবেন, প্রস্তত থাকবেন। গোটা ডিসেম্বর মাস, পুরো বিজয়ের মাস আপনাদের মাঠে থাকতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডাক দেবেন। আপনারা প্রস্তত থাকবেন। হাওয়া ভবনের বিরুদ্ধে, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে, ভুয়া ভোটার তালিকার বিরুদ্ধে আন্দোলনে খেলা হবে।’
আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা নাকি কাপুরুষ। সেই জন্য তাদের মামলা মোকদ্দমা দিয়েছি। কাপুরুষ কি আমরা নাকি বিএনপি? হাওয়া ভবনের যুবরাজ বসে আছে টেম্পস নদীর পাড়ে, আর বস্তায় বস্তায় দুবাই থেকে টাকা পাঠাচ্ছে। টাকা উড়ে আকাশে টাকা উড়ে বাতাসে।
‘ফখরুল টাকার বস্তার উপরে বসে আছেন, দিতে দিতে খালি, এখন গলার জোরটা একটু কমে গেছে। এখন তিনি ডিফেন্সিভ মুডে আছেন। গলায় এখন আর আক্রমণাত্মক সুর নাই।’
পদ্মা সেতু যাওয়ায় বিএনপির মনে জ্বালা তৈরি হয়েছে বলেও মনে করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী। বলেন, ‘পদ্মা সেতু ঠেকাতে পারেনি। বলেছিল, জোড়াতালির পদ্মা সেতু, উপড়ে উঠলে ভেঙে পড়ে যাবে। এখন যে এদিক ওদিক যাতায়াত করেন শরম লাগে না. লজ্জা লাগে না?
‘পদ্মা সেতু ঠেকাতে পারেনি, এখন জ্বালা হয়েছে এটা। পায়রা সেতু হয়ে গেছে, কুয়াকাটায় তিন সেতু হয়ে গেছে। ঢাকায় মেট্রোরেল তৈরি হয়ে আছে। চট্টগ্রামে বঙ্গবন্ধু টালেন রেডি। এইসব দেখে ফখরুলের মন খারাপ। বিএনপি এখন অন্তর্জ্বালায় মরছে।’
‘ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চার মতো লাফায় বামপন্থিরা’
বামপন্থিদের সরকারবিরোধিতারও জবাবে দেন কাদের। বলেন, ‘ছাগল তো নাচে, সঙ্গে ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চাও লাফায়। সে কি লাফ! বাম রাজনীতি করে, আদর্শের কথা বলে, খেটে খাওয়া মানুষের কথা বলে। এরা আবার হাওয়া ভবনের যুবরাজের সঙ্গে তার নেতৃত্বে আন্দোলনে যোগ দিতে চায়।
‘কোথায় গেল আদর্শ? ঢাল নাই তলোয়ার নাই, নিধিরাম সর্দার, তারাও এখন আন্দোলনের ভয় দেখায়। জিরোর সঙ্গে জিরো যোগ করলে যা হয় তাদেরও অবস্থাও তাই।’
জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ‘আজকে বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের একটি অংশ ঘোষণা করব। পরে পূর্ণাঙ্গ কমিটি কেন্দ্রে জমা দেবেন। সবাই এক হয়ে কাজ করব। তবে দলে দুর্নীতিবাজ, মাদকসেবীদের আশ্রয় দেবেন না।’
সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ও প্রধান বক্তা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম লেন, ‘এই নির্বাচন কমিশনের অধীনেই নির্বাচন হবে। কেউ নির্বাচন ব্যহত করার অপচেষ্টা করা হলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আওয়ামী লীগ তাদের প্রতিহত করবে। যারা বাংলাদেশের উন্নয়ন, অগ্রগতি ব্যাহত করবে, আমরা তাদেরকে যে কোনো মূল্যে প্রতিহত ও মোকাবিলা করব।’
বেলা ১১টায় জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে সম্মেলনের কার্যক্রম শুরু হয়। উদ্বোধন করেন সংসদ সদস্য আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বরগুনা-১ আসনের সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন। ক্ষমতাসীন দলের সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য গোলাম রব্বানী চিনু, আনিসুর রহমান, সিদ্দিকুর রহমান ও এতে বক্তব্য রাখেন।
বরগুনা-২ আসনের সংসদ সদস্য শওকত হাচানুর রহমান রিমন, সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য নাদিরা সুলতানাও সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে সঞ্চালনা করেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির।
বিকেলে সার্কিট হাউজ মিলনায়তনে কাউন্সিল অধিবেশন শেষে বরগুনা-১ আসনের সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুকে সভাপতি, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবীরকে সাধারণ সম্পাদক ও গোলাম সরোয়ার টুকুকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করে তিন সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়।