বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র ফারদিন নূর পরশ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার তার বান্ধবী আমাতুল্লাহ বুশরাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছে আদালত।
পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে বুধবার বুশরাকে ঢাকা মহানগর হাকিম আতাউল্লাহর আদালতে হাজির করে পুলিশ। শুনানি শেষে জামিন আবেদন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক।
আদালতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক মজিবুর রহমান মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে কারাগারে রাখার আবেদন করেন। আর জামিনের আবেদন করেন আসামি পক্ষের আইনজীবী।
এর আগে ১০ নভেম্বর তদন্তের জন্য বুশরাকে সাত দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন করে রামপুরা থানার পুলিশ। আদালত তাকে পাঁচ দিনের রিমান্ড দেয়।
ফারদিনের মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় বুশরা এবং অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজনের নামে ৯ নভেম্বর রাতে রামপুরা থানায় মামলা করেন ফারদিনের বাবা নূর উদ্দিন রানা। পরদিন সকালে রাজধানীর রামপুরা এলাকার একটি বাসা থেকে বুশরাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
৪ নভেম্বর নিখোঁজ হন ফারদিন। এর তিন দিন পর ৭ নভেম্বর সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদী থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে নৌ পুলিশ। তিনি রাজধানীর ডেমরা এলাকায় থাকতেন, বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন।
মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ বলছে, তদন্তে ফারদিনের সঙ্গে বুশরার নিছক পরিচয় ও বন্ধুত্বের তথ্যই পাওয়া গেছে।
পুলিশি তদন্তে জানা যায়, নিখোঁজ হওয়ার দিন বিকেল থেকে রাত ১০টা নাগাদ বুশরাকে নিয়ে রাজধানীর কয়েকটি জায়গায় ঘোরাঘুরি করেন ফারদিন। এরপর রামপুরায় বুশরা যে মেসে থাকেন তার কাছাকাছি তাকে পৌঁছে দেন। এরপর আর ফারদিন বুয়েট ক্যাম্পাস বা নিজের বাসায় ফেরেননি।
ডিবির মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) রাজিব আল মাসুদ গত সোমবার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা ফারদিন হত্যায় বুশরার সম্পৃক্ততার বিষয়ে কোনো কংক্রিট প্রমাণ পাইনি। তবে আমাদের তদন্ত চলমান।’
মামলায় বুশরাকে আসামি করা ও গ্রেপ্তারের বিষয়ে জানতে চাইলে রামপুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম ওই দিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা প্রাথমিকভাবে ফারদিনের বান্ধবী বুশরার সেই ধরনের কোনো সম্পৃক্ততার তথ্য না পাওয়ায় মামলায় তার নাম উল্লেখ না করতে অনুরোধ করেছিলাম। আমরা তাকে (মামলার বাদী) পরামর্শ দিয়েছিলাম, যেহেতু সে-ও (বুশরা) একজন শিক্ষার্থী, পরবর্তী অনুসন্ধানে তার সংশ্লিষ্টতা উঠে এলে আমরা আসামি হিসেবে তাকে যুক্ত করব।
‘তবে তিনি (বাদী) কোনো কথা মানতেই রাজি ছিলেন না। তার বক্তব্য ছিল, যেহেতু ওই মেয়ে শেষ সময়ে আমার ছেলের সঙ্গে ছিল তাই অবশ্যই তাকে মামলার আসামি করতে হবে।’
রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী বুশরার বাবা মঞ্জুরুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার মেয়েকে এ ঘটনায় ভুক্তভোগী বানানো হয়েছে। আমার মেয়ে ফারদিন হত্যায় জড়িত নয়।’
এর আগে বুশরার মা ইয়াসমিন নিউজবাংলাকে জানান, ‘২০১৮ সালের শেষের দিকে ফেসবুকে একটি গ্রুপের মাধ্যমে বুশরার পরিচয় হয় ফারদিন নূর পরশের সঙ্গে। পরিচয়ের পর থেকে মেসেঞ্জার ও মোবাইল কলে বিভিন্ন সময়ে একে অপরের সঙ্গে কথা বলত। আর এভাবেই তাদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে।’