সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার লাবনী পয়েন্টে গেলে একটি দোকানে অতিরিক্ত মানুষের ভিড় লক্ষ্য করা যায়। দোকানটি চা বিক্রেতা রাজার। দোকানের সাজসজ্জা দেখে যে কারও মনে হতে পারে কোনো রাজা-বাদশার প্রাসাদে চা পান করতে গিয়েছেন। কারণ রাজার চায়ের দোকানে মেলে ১৫২ স্বাদের চা।
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের লাবনী পয়েন্টে শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজা চায়ের ১৯তম শাখার আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়।
পর্যটক রুমা বলেন, ‘এ চায়ের খবর পত্রিকায় পড়েছি, আজ খাচ্ছি। খুব ভাল চা। হরেক রকম মাসালা ব্যবহার করছেন তিনি। হয়তো এজন্য তার চায়ের স্বাদ আলাদা।’
চট্টগ্রাম থেকে আসা রবিউল ইসলাম বলেন, ‘বিখ্যাত চায়ের স্বাদ সবারই প্রিয়। কিন্তু রাজা চায়ের স্বাদই আলাদা। ১৫২ রকমের চা ভিন্ন রকম স্বাদ দেয়। তার স্টলের ডিজাইন তো প্রাসাদের মতো। দেখতেও ভাল লাগে।’
এ চায়ের দোকানের মালিক আজহার উদ্দিন ওরফে ‘রাজা মিয়া’ ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার নওধার গ্রামের বাসিন্দা। লোকমুখে প্রচার পেয়ে তিনি হয়ে উঠেছেন রাজা মামা। ব্যতিক্রমী গোঁফ, চা বিক্রির অভিনব পন্থার জন্যই ভালোবেসে মানুষ তাকে রাজা মামা বলে ডাকতে শুরু করে।
নিউজবাংলাকে তিনি জানান, জীবিকার জন্য তিনি পাড়ি জমান দুবাইয়ে। সেখানে এক চায়ের দোকানে কাজ করতেন। দেশে ফিরে শুরু করেন চায়ের ব্যবসা। খুব অল্প সময়েই বেশ পরিচিতি পেয়ে যান। ইতোমধ্যে, বেশ কিছু সংবাদ মাধ্যমে তার চায়ের খবর ছড়িয়ে পড়ায় সারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে তার কাছে চা খেতে মানুষ আসে বলে দাবি করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘চা বিক্রেতা আজহার উদ্দিনের আজকের রাজা হয়ে ওঠার পেছনে রয়েছে দুঃখ-কষ্টের জীবনকাহিনী। ত্রিশালের খেটে খাওয়া রাজাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি কোনো প্রতিবন্ধকতাই। তার ১৯টি স্টলে এখন ৬৫ জন কর্মচারী কাজ করেন। তাদের প্রত্যেককে ১২ থেকে ২২ হাজার টাকা বেতন দিচ্ছেন তিনি। যে কিনা একদিন নিজেই কাজ খুঁজে ফিরেছেন, সেই রাজাই এখন চাকরি দিচ্ছেন বেকারদের।’
‘রাজার চায়ের আড্ডা’ দোকানের পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘দেশের বাইরে থেকেই এমন অনেক কিছুই দেখে শিখেছি।’
রাজার চায়ের বিশেষত্ব কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘২০ টাকার এক কাপ চায়ে কাজু-বাদাম, কাঠবাদাম, হরলিক্স, কফি, কফিমেট, কিশমিশ ইত্যাদি আরও নানান উপাদান দিয়ে থাকি। ফলে চায়ের স্বাদ হয় ভিন্ন। এটা ‘রাজা চা’।’
রাজা জানান, প্রথমে পাঁচ টাকায় চা বিক্রি করতেন তিনি। শুরুতে মাল্টা চা, কালিজিরা চা, তেঁতুল চা আর সাধারণ দুধ চা বিক্রি করতেন। পাশাপাশি আবুধাবিতে শেখা রেসিপি দিয়ে কিছু স্পেশাল চা বানাতে শুরু করেন। সেসব চা ক্রেতারা সানন্দে গ্রহণ করেন, বিশেষ করে তার কাজুবাদামের চা এবং ইন্ডিয়ান মাসালা চা জনপ্রিয় হয়।
কাজুবাদামের চায়ের মধ্যে কাজুবাদাম, কাঠবাদাম, হরলিকস, ম্যাটকফি, ব্ল্যাক কফি, কিশমিশ, চিনি, গুঁড়া দুধ, কনডেনসড মিল্ক দেন। একইভাবে ইন্ডিয়ান মাসালা চা-ও বানান অনেক উপাদান দিয়ে। ইন্ডিয়ান মাসালা চা-তে তেজপাতা, এলাচি, লবঙ্গ, হরলিকস, গুঁড়া দুধ, কনডেনসড মিল্ক ও ম্যাটকফি ছড়িয়ে দেন।
রাজা প্রতি কাপ চায়ের দাম নিচ্ছেন ২০ থেকে ৫০ টাকা। ইরানি, জাফরানি, ইন্ডিয়ানসহ দেশ-বিদেশের ১৫২ প্রকারের চা বানিয়ে বিক্রি করেন তিনি।
রাজা বলেন, ‘এই একই স্বাদের চা দেশের বাইরে ৩০০ টাকায় বিক্রি করতাম। আরও নানান ধরনের চা থাকবে সামনে।’
বিশেষ চমক হিসেবে রাখার জন্য সে সম্পর্কে কথা বলতে চাননি রাজা। মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে সকল মুক্তিযোদ্ধা ও প্রতিবন্ধীদের জন্য বিনামূল্যে চায়ের ব্যবস্থা করেছেন তিনি।