কারও হাতে গিটার, কারও ঢোল কিংবা খঞ্জনি আর সবার মুখেই গান। লালন, করিম থেকে শুরু করে বিভিন্ন বাউলের গান গেয়ে তার হাঁটছেন সড়কে। এদের মধ্যে বাউলও আছেন কয়েকজন। আছেন শিল্পী, শিক্ষক সাহিত্য-সাংস্কৃতিক কর্মীসহ নানা পেশার মানুষ।
বাদ্য আর গানে সড়ক প্রদক্ষিণের এই কর্মসূচির নাম- ‘গানমিছিল’। কুষ্টিয়ায় সাধুসঙ্গে বাউলদের ওপর হামলার প্রতিবাদে মঙ্গলবার সিলেট নগরে গানমছিলের আয়োজন করে সংক্ষুব্ধ নাগরিক আন্দোলন নামে একটি নাগরিক প্ল্যাটফর্ম।
বাউল গান গেয়েই বাউলদের ওপর হামলার প্রতিবাদ জানান তারা।
বিকেলে নগরের চৌহাট্টা এলাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে জিন্দাবাজার এলাকা ঘুরে আবার চৌহাট্টা গিয়ে শেষ হয়।
‘গানমিছিল’ শুরুর আগে শহীদ মিনারের সামনে ‘লালন চাও, না মৌলবাদ চাও’ এই প্রশ্ন রেখে সংক্ষিপ্ত প্রতিবাদ সভার আয়োজন করা হয়। তথ্যচিত্র নির্মাতা নিরঞ্জন দে যাদুর সভাপতিত্বে এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন- ‘সংক্ষুব্ধ নাগরিক আন্দোলন’ এর সমন্বয়ক আব্দুল করিম কিম।
এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন- শাজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. নাজিয়া চৌধুরী ও ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. হিমাদ্রী শেখর রায়, সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার বাস্তবায়ন পরিষদের সদস্য সাংস্কৃতিক সংগঠক এনামুল মুনির।
কর্মসূচির শুরুতে কিম বলেন, ‘আমরা লালন চাই, করিম চাই, রাধারমণ চাই। মৌলবাদ চাই না। মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে আমাদের পূর্বসূরিরা লড়েছেন। সে লড়াইয়ের ঝাণ্ডার নিচে আমরাও সমবেত হয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘একদিকে লালন উৎসব হবে, বিশ্ব দরবারে লালন আমাদের পণ্য বলে বিক্রি হবে, অন্যদিকে লালনচর্চায় ব্যারিকেড দেয়া হবে- তা হতে পারে না। এই বৈপরীত্যের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে হবে।
এ সময় কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের লাউবাড়িয়ায় সাধুসঙ্গে সমবেত বাউলদের ওপর যারা হামলা করেছে তাদের চিহ্নিত করে বিচার দাবি করেন কিম সহ বক্তাদের সবাই।
এরপর শুরু হওয়া গানমিছিলে অংশ নেন লেখক-গবেষক এ কে শেরাম, উদীচী সিলেটের সভাপতি এনায়েত হোসেন মানিক, সম্মিলিত নাট্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রজত কান্তি গুপ্ত, বাউল বশির উদ্দিন সরকার, বাউল সূর্যলাল দাস, অরুপ বাউল, বাউল সৌরব সোহেল, সংস্কৃতিকর্মী সুজিত শ্যাম জন, আইনজীবী অরুপ শ্যাম বাপ্পী, ভূমি সন্তান বাংলাদেশের সমন্বয়ক আশরাফুল কবির, আদিবাসী নেতা গৌরাঙ্গ পাত্র, সাবেক ছাত্রনেতা পাপলু বাঙ্গালী, ‘দুষ্কাল প্রতিরোধে আমরা’ এর রাজিব রাসেল, সামাজিক সংগঠন ‘ঊষা’ এর তমিস্রা তিথি, সিলেট জেলা ছাত্র ইউনিয়ন শাখার সভাপতি মনিষা ওয়াহিদ, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন সিলেটের সদস্য সচিব দেবব্রত দিপন, সংস্কৃতিকর্মী নাহিদ পারভেজ বাবুসহ অনেকেই।
গত ৫ নভেম্বর রাতে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার লাউবাড়িয়া এলাকায় পলান ফকিরের বাড়িতে সমবেত হয়েছিলেন একদল লালনভক্ত বাউল সাধু। সেখানে তাদের ওপর হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। এ সময় কয়েকটি ঘরবাড়িতেও ভাংচুর চালানো হয়। হামলায় গুরুতর আহতা হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন লালনভক্ত পাঁচ নারী-পুরুষ।
ওই হামলার ঘটনায় ৯ নভেম্বর দৌলতপুর থানায় ১৯ জনকে আসামি করে মামলা করেন পলান ফকির। তবে পুলিশ এখনও কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।