বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

১৩৮ বছর ধরে আলো ছড়ানো এক স্কুল

  •    
  • ১৫ নভেম্বর, ২০২২ ১১:৩০

রাষ্ট্র ও সমাজে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনকারী অনেকেই এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। ১৮৮৪ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিদ্যাপীঠটি ১৯৬০ সালে দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার অধীনে একটি বহুমুখী বিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তোলা হয়। চালু হয় বিজ্ঞান, মানবিক এবং কৃষি বিভাগ। ১৯৭০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে এটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা লাভ করে।

কৃষ্ণধন (কেডি) সরকারি উচ্চবিদ্যালয় নওগাঁর সবচেয়ে পুরোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ১৩৮ বছরের পথচলায় সময়ের সঙ্গে শুধু জেলা শহরই নয়, প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়েছে এই বিদ্যালয়। এর আলোয় আলোকিত হয়ে দেশ-বিদেশে অবস্থান করছেন অনেকেই।

রাষ্ট্র ও সমাজে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনকারী অনেকেই এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন।

১৯৭৭ সালে নওগাঁ মহকুমা প্রতিষ্ঠিত হয়। কৃষিসমৃদ্ধ এই মহকুমার লোকজনের মোটা ভাত-কাপড়ের অভাব ছিল না বলেই তারা লেখাপড়া শেখায় তেমন তাগিদ অনুভব করেনি। স্থানীয় জমিদাররা উচ্চশিক্ষার জন্য তাদের সন্তানদের দেশ-বিদেশের স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠাতেন। জনসাধারণের মধ্যেও শিক্ষা বিস্তারে উদাসীনতা ছিল।

এই পরিস্থিতিতে ১৮৮৪ সালে একটি উচ্চবিদ্যালয় (পরবর্তী সময়ে কেডি উচ্চবিদ্যালয় নামে খ্যাত) প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন তৎকালীন সাব ডেপুটি কালেক্টর কৃষ্ণধন বাগচি। সহযোগিতায় এগিয়ে আসে মহকুমার জমিদার, বিত্তশালী মানুষ ও কৃষকরা। বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর নামকরণ নিয়ে বিতণ্ডা দেখা দেয়। তবে এর নামকরণ করা হয় কৃষ্ণধন বাগচির নামেই। পরবর্তী সময়ে এই নামের কোনো পরিবর্তন হয়নি।

১৯৬০ সালে দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার অধীনে বিদ্যালয়টিকে একটি বহুমুখী বিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সরকার অনুদান দেয়। তারপর নতুন ব্যবস্থা অনুযায়ী বিদ্যালয়ে বিজ্ঞান, মানবিক এবং কৃষি বিভাগের পড়াশোনা চালু করা হয়। ১৯৭০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে এটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা লাভ করে।

কৃষ্ণধন (কেডি) সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়

১৯৮৪ সালে নওগাঁ জেলা ঘোষণা হওয়ার পর শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এই বিদ্যালয়কে জিলা স্কুল নামকরণের প্রস্তাব পাঠানো হয়। সে সময় কর্তৃপক্ষ এই প্রস্তাবকে ফিরিয়ে দেয়। কারণ কেডি উচ্চবিদ্যালয় যদি জিলা স্কুলে পরিণত হতো, তাহলে কৃষ্ণধন বাগচির অবদান হারিয়ে যেত।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন কেডি সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের সে সময়ের প্রাক্তন ও অধ্যয়নরত অনেক শিক্ষার্থীই যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল। বেশ কয়েকজন মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হন।

নওগাঁর সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘একুশে পরিষদ নওগাঁ’র সহসভাপতি ও ‘নওগাঁর বরেণ্য ব্যক্তি’ শিরোনামের বইয়ের লেখক মোস্তফা-আল-মেহমুদ রাসেল বলেন, ‘আমি আমার লিখা নওগাঁর বরেণ্য ব্যক্তি বইতে এই বিদ্যালয়ের ইতিহাস তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। সেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের অবদানের কথাও তুলে আনা হয়েছে। বিদ্যালয়টির অনেক শিক্ষার্থী মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তাদের মধ্যে ১১ জন শহীদ হন। তারা হলেন নজমুল হক, কুদরত-ই-এলাহী, কাজী নুরুন নবী, আব্দুল্লাহ আল মামুন, ইদ্রীস আলী, ইব্রাহিম আলী খন্দকার, এস এম মতিউল ইসলাম, জয়নাল আবেদীন, সানা উল্লাহ, হিম্মত আলী এবং আব্দুর রাজ্জাক।’

এই বিদ্যালয় থেকে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিরা হলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আমজাদ হোসেন তরফদার, আখতারুজ্জামান রঞ্জু, খন্দকার মকবুল হোসেন, আফজাল হোসেন, শফিকুল ইসলাম খান, মমিনুল হক ফুটি, তৌফিক এলাহী এবং আলতাফুল হক চৌধুরী আরব।

বিদ্যালয়ে গিয়ে কথা হয় ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী রহমতুল্লাহ ও সপ্তম শ্রেণির সোহরাব হোসেনের সঙ্গে। তারা জানায়, জেলার শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠে পড়তে পেরে তারা গর্বিত। এখান থেকে পাস করে অনেক শিক্ষার্থী দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করছেন। ভবিষ্যতে ভালো ফলাফল অর্জন করে তারা দেশকে জানিয়ে দিতে চায়, তারা নওগাঁ কেডি সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্র।

বিদ্যালয়টির বর্তমান প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ মামুন অর রশীদের সঙ্গে কথা হলে তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিদ্যালয়টি চালুর পর যোগেশ্বর, শ্রীনরেন্দ্রনাথ, শশীকিশোর চাকদারসহ অনেক নামকরা শিক্ষক এখানে শিক্ষকতা করেছেন। বিদ্যালয়ে দীর্ঘস্থায়ী প্রধান শিক্ষক ছিলেন ব্রজবল্লভ। তিনি ১৮৯৬ থেকে ১৯২৪ সালে মৃত্যুর আগপর্যন্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে ছিলেন। এরপর হাতেম আলী প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব থাকাকালীন ১৯৪১ সালে স্কুলে প্রথম ম্যাগাজিন প্রকাশ পায়। তৎকালীন গভর্নর সার্জন হার্ডবাক বিদ্যালয়টি একবার পরিদর্শন করেছিলেন। প্রতিবছর বিদ্যালয়টি থেকে এসএসসি ও জেএসসি পরীক্ষায় শতভাগ শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়ে আসছে।’

এখন এই বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীসংখ্যা ১ হাজার ৯৮৫। ১৬টি কক্ষে পাঠদান চলে। শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তোলার জন্য প্রধান শিক্ষক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান। একাডেমিক শিক্ষার পাশাপাশি নিয়মিত সংস্কৃতি, ক্রীড়া, মানবিক গুণাবলি ও উন্নত মানসিকতা বিকাশে এটি যত্নশীল।

অবকাঠামোগত সমস্যার কথা তুলে ধরে প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘বিদ্যালয়টিতে চারটি ভবনে মোট ৪২টি কক্ষ থাকলেও ব্যবহার হয় ১৬টি। বাকিগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী। এ ছাড়া বিদ্যালয়টিতে রয়েছে সীমানাদেয়ালের সমস্যা, বেঞ্চ সংকট। একটি ছাত্রাবাস থাকলেও তা ব্যবহার হয় না।’

জেলা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী (সিভিল) আবু সাঈদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কেডি সরকারি উচ্চবিদ্যালয় অনেক পুরাতন একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সেখানে কিছু অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রয়োজন। স্কুল কর্তৃপক্ষ চাহিদাপত্র দিয়েছে। আমরা সেটা শিক্ষা অধিদপ্তরকে অবহিত করেছি। বরাদ্দ পেলে অবশ্যই সমস্যাগুলোর সমাধান করা হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর