বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ল্যাভরভের ঢাকা সফরে লাভ-ক্ষতি

  •    
  • ১৪ নভেম্বর, ২০২২ ২১:৩৭

কূটনীতি বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, ইন্ডিয়ান ওশেন রিম অ্যাসোসিয়েশনের (আইওআরএ) মন্ত্রীপর্যায়ের বৈঠকে অংশ নেয়ার পাশাপাশি ল্যাভরভের ঢাকা সফরের অন্য গুরুত্বও রয়েছে। এই সফর কিছু চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি সম্ভাবনার দ্বারও খুলে দেবে।  

ইউক্রেন ইস্যুতে বৈশ্বিক মেরুকরণের মাঝে তিন দিনের সফরে বাংলাদেশে আসছেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ।

বাংলাদেশ স্বাধীনের ৫১ বছরের মধ্যে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন বা এখনকার রাশিয়ার প্রতিনিধিত্বকারী সর্বোচ্চ পর্যায়ের নীতিনির্ধারকের হিসেবে তিনি ঢাকা আসছেন।

বর্তমান বিশ্বের ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ল্যাভরভের সফরের বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন কূটনীতি বিশ্লেষকেরা।

তারা মনে করছেন, ইন্ডিয়ান ওশেন রিম অ্যাসোসিয়েশনের (আইওআরএ) মন্ত্রীপর্যায়ের বৈঠকে অংশ নেয়ার পাশাপাশি ল্যাভরভের ঢাকা সফরের অন্য গুরুত্বও রয়েছে।

বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, ইউক্রেন যুদ্ধ কেন্দ্র করে ছোট হয়েছে রাশিয়ার কূটনৈতিক জগত, এর সঙ্গে পশ্চিমা অবরোধে বিপুল চাপে পড়েছে দেশটির অর্থনীতি। এমন সময়ে বাংলাদেশ সফরে পুতিনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকার সঙ্গে সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ করার চেষ্টা করবেন। রাশিয়ার দুই বন্ধু দেশ ভারত ও চীনের মধ্যে সম্পর্কের শীতলতা দূর করার উদ্যোগও নিতে পারেন তিনি।

আইওআরএ সম্মেলনে যোগ দিতে ২৩ নভেম্বর বিকেলে তিন দিনের সফরে ঢাকায় পৌঁছাবেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বাংলাদেশ সফরের শুরুর দিনেই দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে বৈঠক হবে। সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতও করবেন ল্যাভরভ।

কূটনীতি বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, আইওআরএ সম্মেলনে যোগ দেয়ার বাইরে রাশিয়ার বন্ধু খুঁজবেন ল্যাভরভ। কারণ, এই সম্মেলনে ১৪ দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী যোগ দিচ্ছেন। অতি সম্প্রতি ল্যাভরভ এই অঞ্চলের আরও কয়েকটি দেশ সফর করেছেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, নোটভারবালের মাধ্যমে ঢাকায় কয়েকটি বৈঠকসহ কিছু বিষয়ে নিশ্চয়তা চেয়েছে মস্কো। তাতে সায় দিয়েছে ঢাকা।

পররাষ্ট মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ সম্মেলনে যোগ দিলে বাংলাদেশ ছাড়াও আইওআরএর অন্য সদস্য রাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকের সুযোগ থাকবে রাশিয়ার। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে চাপে রয়েছে দেশটি। জাতিসংঘে রাশিয়ার বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রস্তাব আনছে পশ্চিমারা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সদস্য দেশগুলোর বড় অংশ তাদের বিরুদ্ধে ভোট দিচ্ছে। ফলে বৈশ্বিক চাপ সামলাতে বিভিন্ন দেশে গিয়ে সম্পর্ক ঝালাই করে নিচ্ছে মস্কো।

‘নিজেদের বিচ্ছিন্ন না রেখে বৈশ্বিক ফোরামে রাশিয়ার পক্ষে ভোটও চাচ্ছে মস্কো। পক্ষে ভোট দেয়া সম্ভব হলে দেশগুলো যাতে ভোটদানে বিরত থাকে- তেমন আহ্বান জানাচ্ছে তারা। ফলে বাংলাদেশের কাছেও একই ধরনের আহ্বান থাকবে তাদের।’

মেরুকরণ নিয়ে ঢাকাও সতর্ক

রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকা সফরের ওপর পশ্চিমা দেশগুলোও নজর রাখছে। ফলে বিষয়টিতে সতর্ক অবস্থান রয়েছে বাংলাদেশের।

জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন নিউজবাংলাকে জানান, ভূ-রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ মাথায় রেখেই রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে স্বাগত জানাবে ঢাকা।

তিনি বলেন, ‘অবশ্যই এখন যে মেরুকরণ চলছে সেটা তো আছে। তারপরেও রাশিয়ার সঙ্গে আমাদের ঐতিহ্যবাহী যে সম্পর্ক আছে, সেটার আলোকে আমরা তাকে স্বাগত জানাব। আমাদের পক্ষ থেকে যে অগ্রাধিকার ও চ্যালেঞ্জগুলো আছে সেগুলো আরও স্পষ্ট করে বলতে পারব।’

তিনি বলেন, ‘ইন্ডিয়ান ওশেন রিম অ্যাসোসিয়েশনে এই প্রথমবারের মতো তারা (রাশিয়া) অবজারভার দেশ হিসেবে অংশ নিচ্ছে। এখানে তারা কীভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে সেটা তুলে ধরবে। সেটাই হয়তো তাদের একটি মূল লক্ষ্য। এই সংস্থা নিয়ে যদি তাদের কোনো বক্তব্য থাকে সেটি আমরা শুনব।

‘এছাড়া অফকোর্স পোলারাইজেশন যা আছে, তা তো আছেই। তারপরেও রাশিয়ার সঙ্গে আমাদের ঐতিহাসিক সম্পর্কের আলোকে আমরা তাকে সম্মান জানাব।’

মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘রাশিয়া নানাভাবে বিভিন্ন ইস্যুতে চাপের মধ্যে আছে। সুতরাং সের্গেই ল্যাভরভ এলে অবশ্যই তা নিয়ে আলোচনা হবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর (এম এ মোমেন) সঙ্গে দেখা হবে। সেখানে দ্বিপাক্ষিক বিষয়ে আলোচনা করার সুযোগ হবে। বর্তমান যে পরিস্থিতি, সেখানে জ্বালানি সংকটের মতো বিষয়ে কোনো ধরনের সম্ভাবনা আছে কিনা, তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে।

‘নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার ফলে আমাদের চলমান যে প্রকল্পগুলো আছে, সেগুলোর যাতে কোনো সমস্যা না হয়, তা নিয়ে আলোচনা হবে। এর সঙ্গে রোহিঙ্গা ইস্যুতে আমরা রাশিয়াকে আরও কাছে পেতে চাই। এছাড়া দ্বিপাক্ষিক বিভিন্ন বিষয়ে আমরা আলোচনা করব।’

পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘রাশিয়ার সঙ্গে আমাদের যে প্রজেক্ট আছে সেগুলো নিয়ে আলোচনা হবে। যেমন রূপপুর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। সে প্রকল্পটি যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে বিষয়েও আমরা কথা বলব।’

‘বন্ধু হলেও ভুল ভুলই, এমন বার্তা দিতে হবে’

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ও সাবেক রাষ্ট্রদূত ওয়ালিউর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সের্গেই ল্যাভরভের ঢাকা আসাটা অবশ্যই বড় খবর। এমন একটি সময়ে তিনি আসছেন, যার আগেই তিনি জি-২০ সম্মেলনে অংশ নিতে বালি যাবেন।

‘১৯৭১ সালে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন আমাদের স্বাধীনতায় জন্য জাতিসঙ্ঘে পরপর দুইবার ভেটো দিয়েছিল। এটি আমাদের স্বাধীনতাকে ত্বরান্বিত করেছিল এবং পাকিস্তানকে সারেন্ডার করতে বাধ্য করেছিল। এটা আমাদের মনে রাখতে হবে। এই মূল্যায়নটা আমাদের করতে হবে।’

আন্তর্জাতিক সম্পর্কের এই বিশ্লেষক বলেন, ‘একইসঙ্গে এটাও বলতে হবে একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ ইউক্রেনকে রাশিয়া যেভাবে আক্রমণ করল, আমি ব্যক্তিগতভাবে এটা মেনে নিতে পারি না। একটা বন্ধু দেশ হিসেবে রাশিয়াকে এটা অনানুষ্ঠানিকভাবে আমাদের বলা উচিত। কারণ, আমি মনে করি কোনো বন্ধু রাষ্ট্র যদি ভুল করে অপর বন্ধু রাষ্ট্রের উচিত তা ধরিয়ে দেয়া। জাতিসংঘেও আমাদের উচিত ছিল এই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ভোট দেয়া।’

রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফর নিয়ে বাংলাদেশের সামনে কোনো চ্যালেঞ্জ দেখছেন না তিনি। বর্ষীয়ান এই কূটনীতিক বলেন, ‘বরং তাদের বন্ধু হিসেবে আরও কাছে যাওয়ার এটা একটা অপরচুনিটি। আমাদের মনে রাখতে হবে রাষ্ট্র হিসেবে আমাদের স্থায়ী কোনো বন্ধুও নেই, শত্রুও নেই। কিন্তু আমাদের দেশের স্বার্থটি পার্মানেন্ট। এটাকেই সবার আগে প্রাধান্য দিতে হবে।’

‘যুদ্ধ বন্ধের তাগিদ দেয়া জরুরি’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে উদ্যোগ নেয়ার ওপর জোর দিচ্ছেন।

তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার মনে হয় একটা সম্মেলন কেন্দ্র করে এই সফর হলেও আমাদের উচিত হবে যুদ্ধ কীভাবে বন্ধ করা যায় তা নিয়ে আলোচনায় জোর দেয়া। রাশিয়ার সঙ্গে আমাদের যে সম্পর্ক, তাতে তাদের সঙ্গে বন্ধুত্বের নতুন করে পরীক্ষা দেয়ার কিছু নেই।

‘তারা সেই ১৯৭১ সালের থেকেই তারা আমাদের সঙ্গে আছে। এছাড়া আমাদের কিছু চুক্তি আছে। পারমাণবিক চুক্তি আছে। তা নিয়েও আলোচনা হওয়া দরকার। আমাদের পররাষ্ট্রনীতি, সবার সঙ্গে বন্ধুত্বের বিষয়টি নিশ্চয়ই রাশিয়ার জানা আছে। তাই আমার মনে হয় না এ ক্ষেত্রে বড় কোনো পরিবর্তন আসবে।

‘এর বাইরে আমরা যেটা চাইব সেটা হলো, রাশিয়ার সঙ্গে মিয়ানমারের যেহেতু একটি ভালো সম্পর্ক হয়েছে, অ্যাটলিস্ট আমরা তারা যেন রোহিঙ্গা ইস্যুতে সক্রিয় হয়।’

তিনি বলেন, ‘মিয়ানমার ইদানিং রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক নতুন করে শক্ত করেছে, তাদের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা মস্কো ঘুরে এসেছেন। তাই সেই সুযোগটা আমাদের কাজে লাগাতে হবে।

‘রোহিঙ্গা ইস্যুতে আমরা সরাসরি রাশিয়ার মতামত জানতে চাইতে পারি। আবার রাশিয়াও হয়ত জানতে চাইবে জিওপলিটিক্সে আমাদের মতামত। সারা বিশ্ব এ ক্ষেত্রে পরিবর্তন আসায় রাশিয়ারও এখন বাংলাদেশকে প্রয়োজন। একই ভাবে আবার বাংলাদেশের প্রয়োজন রাশিয়াকে। তবে এই প্রয়োজনের ক্ষেত্রে অন্য দেশের সঙ্গে আমাদের যে সম্পর্ক তাও গুরুত্বপূর্ণ। রাশিয়াও সেটা জানে।’

এ বিভাগের আরো খবর