বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশ হত্যায় তার বন্ধু আমাতুল বুশরার জড়িত থাকার প্রমাণ এখনও পায়নি মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তদন্তে ফারদিনের সঙ্গে বুশরার নিছক পরিচয় ও বন্ধুত্বের তথ্যই পাওয়া গেছে।
তদন্তকারীরা বলছেন, মঙ্গলবার রিমান্ড শেষে আদালতে পাঠানো হবে বুশরাকে।
বুয়েট ছাত্র ফারদিন গত ৪ নভেম্বর নিখোঁজ হওয়ার তিন দিন পর ৭ নভেম্বর সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদী থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে নৌ পুলিশ। বর্তমানে হত্যা মামলাটির তদন্ত করছে ডিবি। পাশাপাশি র্যাবসহ আরও কয়েকটি সংস্থা ছায়াতদন্ত করছে।
পুলিশি তদন্তে জানা যায়, নিখোঁজ হওয়ার দিন বিকেল থেকে রাত ১০টা নাগাদ বুশরাকে নিয়ে রাজধানীর কয়েকটি জায়গায় ঘোরাঘুরি করেন ফারদিন। এরপর রামপুরায় বুশরা যে মেসে থাকেন তার কাছাকাছি তাকে পৌঁছে দেন। এরপর আর ফারদিন বুয়েট ক্যাম্পাস বা নিজের বাসায় ফেরেননি।
ফারদিনের মরদেহ উদ্ধারের তিন দিনের মাথায় ১০ নভেম্বর আমাতুল্লাহ বুশরার নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা ও পরিকল্পিতভাবে লাশ গোপন করার অভিযোগ এনে রামপুরা থানায় মামলা করেন তার বাবা কাজী নুরুউদ্দিন রানা।
ওই দিনই তাকে গ্রেপ্তার করে রামপুরা থানা পুলিশ। তাকে সাত দিনের রিমান্ডে চেয়ে পুলিশ আবেদন করলে আদালত পাঁচ দিনের রিমান্ডে দেয়। মামলাটির তদন্তভার ডিবি কাছে যাওয়ায় রিমান্ডে বুশরাকে জিজ্ঞাসাবাদের দায়িত্বও পায় গোয়েন্দা পুলিশ।
তবে বুশরাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এখন পর্যন্ত ফারদিন হত্যায় তার কোনো যোগসাজস পাননি গোয়েন্দারা।
ডিবির মতিঝিল বিভাগের উপ কমিশনার (ডিসি) রাজিব আল মাসুদ সোমবার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা ফারদিন হত্যায় বুশরার সম্পৃক্ততার বিষয়ে কোনো কংক্রিট প্রমাণ পাইনি। তবে আমাদের তদন্ত চলমান। পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে তাকে আদালতে উপস্থাপন করা হবে।’
মামলায় বুশরাকে আসামি করা ও গ্রেপ্তারের বিষয়ে জানতে চাইলে রামপুরা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা প্রাথমিকভাবে ফারদিনের বান্ধবী বুশরার সেই ধরনের কোনো সম্পৃক্ততার তথ্য না পাওয়ায় মামলায় তার নাম উল্লেখ না করতে অনুরোধ করেছিলাম। আমরা তাকে (মামলার বাদি) পরামর্শ দিয়েছিলাম, যেহেতু সেও (বুশরা) একজন শিক্ষার্থী, পরবর্তী অনুসন্ধানে তার সংশ্লিষ্টতা উঠে এলে আমরা আসামি হিসেবে তাকে যুক্ত করব।
‘তবে তিনি (বাদি) কোনো কথা মানতেই রাজি ছিলেন না। তার বক্তব্য ছিল, যেহেতু ওই মেয়ে শেষ সময়ে আমার ছেলের সঙ্গে ছিল তা্ই অবশ্যই তাকে মামলার আসামি করতে হবে।
‘অগত্যা তিনি এজাহারটি যেভাবে লিখে দিয়েছেন, সেভাবেই আমরা নিয়েছি। মামলার একমাত্র আসামি হওয়ায় তাকে (বুশরা) সেদিনই গ্রেপ্তার করি।’
ওসি রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘গ্রেপ্তারের পরেও আমরা তার কোনো সংশ্লিষ্ট পাইনি। পরে তাকে ডিবিতে পাঠানো হয়। ডিবি কর্মকর্তারাই তাকে এখন জিজ্ঞাসাবাদ করছেন।’
রারধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী বুশরার বাবা মঞ্জুরুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার মেয়েকে এ ঘটনায় ভুক্তভোগী বানানো হয়েছে। আমার মেয়ে ফারদিন হত্যায় জড়িত নয়।
‘আমার মেয়েকে বিনা দোষে মামলার আসামি ও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ফারদিন হত্যায় প্রকৃত দোষীকে শাস্তি দেয়া হোক। আমার নির্দোষ মেয়েকে মুক্তি দিতে সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি।’
এর আগে বুশরার মা ইয়াসমিন নিউজবাংলাকে জানান, স্কুল ও কলেজে পড়ার সময় থেকেই বিভিন্ন বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশ নিতেন বুশরা। সে জন্য যারা বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় বা পারদর্শী, তাদের সঙ্গে বুশরা নিজে থেকেই যোগাযোগ রাখতেন।
তিনি বলেন, ‘২০১৮ সালের শেষের দিকে ফেসবুকে একটি গ্রুপের মাধ্যমে বুশরার পরিচয় হয় ফারদিন নূর পরশের সঙ্গে। পরিচয়ের পর থেকে মেসেঞ্জার ও মোবাইলে কলে বিভিন্ন সময়ে একে অপরের সঙ্গে কথা বলত। আর এভাবেই তাদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে।’
আরও পড়ুন: ফারদিন ও বুশরার পরিচয় চার বছরের
বুশরাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা পুলিশের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ফারদিন হত্যার বুশরার কোনো সম্পৃক্ততা আমরা পাইনি।’
তাহলে কেন তাকে তাৎক্ষণিকভাবে গ্রেপ্তার- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘ঘটনার দিন বুশরা ফারদিনের সঙ্গে ছিলেন। আর ফারদিনের বাবা তাকে আসামি করতে চাচ্ছিলেন। সে কারণেই তাকে আসামি করতে হয়েছে। এজহারও বাদি নিজে লিখেছেন, যে কারণে তার নাম রাখতে হয়েছে।
‘এছাড়া বুয়েট শিক্ষার্থী হত্যার ইস্যুটি সেনসেটিভ। আমাদের সামনে বুশরাকে মামলার আসামি ও গ্রেপ্তার করা ছাড়া উপায় ছিল না।‘
এর আগে শনিবার ডিবি প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘মাদকের কারণে সে (ফারদিন) খুন হয়েছেন, এমন কথা আমরা বলছি না, আবার এক নম্বর আসামি যাকে করা হয়েছে, তিনি খুন করেছেন সেটাও আমরা বলছি না।’