বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বিএনপি নির্বাচনে আসবে: ইসি আনিছুর

  •    
  • ১৩ নভেম্বর, ২০২২ ১৯:১৬

নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান বলেন, ‘বিএনপি নির্বাচনে আসবে না, এমনটা মনে করছি না। ভোটের এখনও ১৩-১৪ মাস বাকি। এই সময়টাতে হয়তো অনেক কিছু পরিবর্তন হবে। বিশ্বে পরিবর্তন হবে, দেশেও হবে; এমনকি রাজনীতিতেও হবে।’

নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে অনড় থাকা বিএনপি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে বলে মনে করেন নির্বাচন কমিশনার (ইসি) আনিছুর রহমান। তিনি বলেছেন, ‘দলটি নির্বাচনে আসবে না তা আমরা বলছি না এই জন্য যে, তেমন অবস্থা এখনও সৃষ্টি হয়নি।’

ইসি আনিছুর রহমান বলেন, ভোটের এখনও ১৩-১৪ মাস বাকি। এই সময়টাতে হয়তো অনেক কিছু পরিবর্তন হবে। বিশ্বে পরিবর্তন হবে, দেশেও হবে; এমনকি রাজনীতিতেও হবে।’

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে রোববার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ইসি আনিছুর রহমান এ কথা বলেন।

গত ফেব্রুয়ারি মাসে দেশের নির্বাচন ব্যবস্থার দায়িত্ব নেয়া ইসি আনিছুর এই প্রথম গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আধা ঘণ্টাব্যাপী আলাপ করেন।

দায়িত্ব নেয়ার সাড়ে আট মাস পর দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন, বিরোধী দল বিএনপির ভোটে অংশগ্রহণসহ সাম্প্রতিক নানা প্রসঙ্গে নিজের ভাবনা তুলে ধরেন তিনি।

নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এক সভায় জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডার ঘটনা নিয়ে ইসি আনিছুর রহমানের পদত্যাগের গুঞ্জন মিডিয়াতে চাউর হয়। তার আগে কমিশনের কর্মকর্তাদের কাজের দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেও আলোচনার জন্ম দেন এই কমিশনার।

আনিছুর রহমান বলেন, ‘এই কমিশনে আমরা পাঁচজনই আশাবাদী যে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে সবাই আসবে৷ নির্বাচনে অনেক রকম ক্যালকুলেশন হয়। সেই ক্যালকুলেশন এখনও বাকি। দল জোটবদ্ধ হবে। নির্বাচন যত কাছে আসবে সবকিছু আরও স্পষ্ট হয়ে উঠবে। তখন অনেক রকম পোলারাইজেশন হয়।’

আলোচনাকালে ইসি আনিছুরের কাছে প্রশ্ন ছিল- তাহলে বিএনপির ভোটে আসা ইস্যুতে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে কি না, যেখানে আপনাদেরও পদত্যাগ করতে হবে?

জবাবে পাল্টা প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘আমরা এখনই সেটা চিন্তা করব কেন? সেই পরিস্থিতি কি এখন আমাদের সামনে আছে? পরিস্থিতিই বলে দেবে- আমাদের ওয়েআউট কী হবে।’

নির্বাচনের খেলায় সব দলের রেফারি হওয়ার আশা প্রকাশ করে এই কমিশনার বলেন, ‘সব দলকে নিয়ে নির্বাচন করব এটাই আমাদের আশা। শেষ পর্যন্তও তা থাকবে।’

লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করাটাই হলো সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে আনিছুর রহমান বলেন, ‘আমরা ওই দিকেই নজর দেব। কীভাবে ওটা করা যায় সে বিষয়ে গুরুত্ব দেব বেশি। এটা যদি সবাই না পায় তাহলে তো ভোটে পরিবেশ থাকবে না। সব দলকে ভোটে আনাই আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ। সফল হব কিনা জানি না, তবে শেষ দিন পর্যন্ত আমাদের এই চেষ্টা থাকবে।

'আর রাজনৈতিক দলগুলোকে মাঠে থাকতে হবে। মাঠে না থাকলে তো খেলা হবে না। আর মাঠে না এসে তো কেউ বলতে পারবে না নির্বাচনের পরিবেশ নেই।’

আপনারা তো এক দলের রেফারি হতে চান না- এমন মন্তব্যে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই না। সে রকম কাজ করব না। আগেও এটা পরিষ্কার করে বলেছি, এখনও বলছি। আমরা আমাদের পরিবেশ, পরিস্থিতি সৃষ্টির যে কাজ সেটা করব। না পারলে তখন বুঝব আমাদের করণীয় কী।’

তখন কী করবেন- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘সেটা যখন আসবে তখন দেখা যাবে।’

ভোটের পরিস্থিতি ভালো থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন এই কমিশনার। তিনি বলেন, ‘আমাদের আশা থাকবে সব দলের রেফারি হিসেবে থাকব। সব পক্ষকে নিয়েই ভোটের মাঠে থাকব। আমার মনে হয় পরিস্থিতি তেমন হবে না। এখনো ১৩-১৪ মাস সময় আছে। এর মাঝে রাজনীতিতে অনেক পরিবর্তন আসতে পারে। দেশে আসতে পারে। বিশ্বে আসতে পারে।’

ইভিএম প্রকল্প অনুমোদনে আশাবাদী ইসি

ইসি আনিছুর রহমান বলেন, ‘ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) প্রকল্প থমকে যায়নি। প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছি। তারা টেকনিক্যাল কমিটির স্বাক্ষর-সংবলিত কাগজ চেয়েছিল। তা নিয়ে ইসি গত সপ্তাহে বসেছিল।’

তিনি বলেন, ‘প্রকল্প বাস্তবায়নে এখনও যথেষ্ট সময় আছে। জানুয়ারির মাঝামাঝি যদি প্রকল্প বাস্তবায়ন হয় তাহলে প্রকিউরমেন্ট বাস্তবায়নে কোনো সমস্যা হবে না। বাজেট কাটছাঁট হবে না সে রকম কোনো ইঙ্গিত আমরা পাইনি। এটা একান্তই সরকারের সামর্থ্যের ওপর নির্ভর করে। আমরা আশাবাদী সরকার এটা অনুমোদন দেবে।

‘কাটছাঁট করতে চাইলে সে ক্ষেত্রে আমরা যে রকম অর্থ পাওয়া যাবে সে রকমই সংগ্রহ করব। জনবলের জন্য অর্থ বিভাগে প্রস্তাব পাঠিয়েছি। সেটাও এখনও ক্লিয়ার হয়নি।

‘বড় সংখ্যায় ইভিএম সংগ্রহ এবং সেগুলোর জন্য সংরক্ষণাগারের বিষয় আছে। আগে যেগুলো ছিল সেগুলো সংরক্ষণ না করায় নষ্ট হয়ে গেছে। এ ছাড়া ওয়্যার হাউস প্রশিক্ষণের ব্যাপার আছে৷’

চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ না পেলে দেড় শ আসনে ইভিএমে ভোট করা অনিশ্চিত হয়ে পড়বে কি না, জানতে চাইলে ইসি আনিছুর বলেন, ‘আমাদের হাতে যা আছে সেটা নিয়ে করব। আমরা বলেছিলাম অনূর্ধ্ব ১৫০ আসনে ইভিএমে ভোট করব। অনুমোদন না হলে যা আছে তা নিয়েই প্রস্তুতির কাজ এগিয়ে নেব।’

সরকারও তো ইভিএমে ভোট করতে চায়। তাহলে প্রকল্পে ধীরগতি কেন?- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমরা অফিশিয়ালি তেমন কিছু জানি না। কাজেই জটিলতার কথা বলব না। সরকারি প্রক্রিয়ায় একটু লম্বা পথ। তবে এটুকু শুনেছি যে তারা সভার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। তার মানে ইতিবাচক। প্রকল্পের পিডি তা-ই বলেছেন।’

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ (আরপিও) সংশোধন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এই কমিশনার বলেন, ‘কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী আমরা যথেষ্ট এগিয়ে আছি। প্রক্রিয়াগত সময় বেশি লাগতে পারে। ব্যস্ততার জন্য বা বিভিন্ন কারণে হয়তো আইন সংশোধনটা একটু দীর্ঘ সময় লেগে যাচ্ছে। আশা করি দ্রুতই আইন মন্ত্রণালয় থেকে একটা সমাধান পাব। অন্যথায় দেখব কী করা যায়।

‘আমরা যে সংশোধনী চেয়েছি সেগুলো হলে আমাদের কাজটা আরেকটু সহজ হতো। সংশোধনী না হলে যে কাজ করতে পারবো না তা নয়। আমরা কাজ করছি। গাইবান্ধার ভোট এই আইন থেকেই হয়েছে। সেটা প্রশংসিত হয়েছে। আইন কার্যকর করা হলো বড় কথা।’

এতবার তাগাদা দেয়ার পর আইন সংস্কার হচ্ছে না- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, সরকার আইন সংশোধন প্রক্রিয়ায় বাধা হয়ে দাঁড়াবে না বলে আমরা বিশ্বাস করি। সরকারি সহায়তা নিয়েই আমরা আইনি প্রক্রিয়া শেষ করতে পারব।’

কমিশনের সাড়ে আট মাস দায়িত্বকালের উল্লেখ করে কমিশনার আনিছুর বলেন, ‘এখন পর্যন্ত সরকারের কাছ থেকে কোনো অসহযোগিতা পাইনি। বরং সহযোগিতামূলক সব আচরণই পেয়েছি৷ হয়তো ব্যস্ততার জন্য আইনমন্ত্রী সময় দিতে পারছেন না। আশা করছি তিনি অচিরেই কাজটা দেখে সমাধানের চেষ্টা করবেন।’

সাড়ে আট মাসে বিরোধী দলগুলোর নির্বাচন কমিশনের প্রতি আস্থা বেড়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা সরাসরি বিরোধী দলের কাছে যেতে পারছি না আমাদের সীমাবদ্ধতার জন্য। সরকারের কাছেও যেতে পারছি না। কাজ করতে এখনও বাধার সম্মুখীন হইনি। সেজন্যই বলছি যে সরকার থেকে চাপ পাইনি।’

ইভিএম নিয়ে বিরোধী দলের আপত্তি কিছুটা কমেছে বলে ধারণা এই কমিশনারের। তিনি বলেন, ‘ইভিএম নিয়ে যারা বলেন তারা জেনে বলেছেন বলে আমি স্বীকার করব না। তাদের বিশেষজ্ঞ নিয়ে আসতে বলেছিলাম। তারা তা করলে ইভিএম নিয়ে তাদের শঙ্কাটা দূর হয়ে যাবে।’

বিদ্যমান আইনেই যদি ভালো ভোট করতে সক্ষম হন তাহলে সংস্কার চাচ্ছেন কেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মিডিয়া নিয়ে একটা সংস্কারের কথা আমরা বলেছি। সাংবাদিকদের আইনি সহায়তা দিতেই এই সংস্কার। নির্বাচনী কর্মকর্তাদের বৈধ যেটুকু সহায়তা দেয়া দরকার সেটুকু অজ্ঞতাবশত দেয়া হচ্ছে না বলে মনে করি।’

গাইবান্ধা ভোটের তদন্ত প্রতিবেদব সম্পর্কে জানতে চাইলে ইসি আনিছুর বলেন, ‘আমরা যে রিপোর্টটা পেয়েছিলাম সেখানে ৫১টি কেন্দ্র বন্ধ করতে বলেছিলাম। কমিটি তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। তাদের সুপারিশের পাশাপশি আমরা দেখলাম আরো ৯৪টি কেন্দ্র না দেখলে বিষয়টি পক্ষপাতমূলক হয়ে যেতে পারে। সেজন্য বাকিগুলো দেখে সুপারিশ করতে বলছি। রিপোর্ট পেলে বসে সিদ্ধান্ত নেব।’

আমি যতদূর জেনেছি বাকিগুলোতেও অনিয়ম পাওয়া গেছে। আমরা ১৪৫টি কেন্দ্রের বিষয়ে ব্যবস্থা নিয়েছি। কারও প্রতি অবিচার করা হয়নি।’

আগামী জাতীয় নির্বাচনে তিনশ’ আসনে তিন লক্ষাধিক সিসিটিভি ক্যামেরা থাকতে পারে বলে জানান আনিছুর রহমান।

জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু করতে মাঠ প্রশাসনকে নিরপেক্ষ রাখা কতটুকু চ্যালেঞ্জ মনে করছেন- এমন প্রশ্নে কমিশনার আনিছুর রহমান বলেন, ‘নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর পুরোটাই আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। সেক্ষেত্রে মাঠ প্রশাসনে আমরা অতীতেও দেখেছি ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। আমার মনে হয় সেগুলো সময়ই বলে দেবে কখন কী করব।’

দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে বিশ্বাসের জায়গা সিসিটিভি ক্যামেরা হবে নাকি মাঠপ্রশাসন- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘বাস্তবতার আলোকে বিষয়টিকে বিবেচনায় নেবে কমিশন। আমরা সময়ের জন্য অপেক্ষায় থাকি। দেখা যাক কী হয়।’

এ বিভাগের আরো খবর