নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের স্মৃতিবিজড়িত নুহাশপল্লী। সুরের মূর্ছনায় রোববার সারা দিন পুরো নুহাশপল্লী রাঙিয়ে তোলেন তার ভক্ত-অনুরাগীরা। জীবদ্দশায় এই নুহাশপল্লীতে বসেই লেখক লিখে গেছেন অসংখ্য গল্প-উপন্যাস।
প্রতিবছরের মতো এবারও রোববার তার ৭৪তম জন্মবার্ষিকীতে পাঠক ও ভক্ত-অনুরাগীরা দূর-দূরান্ত থেকে এসেছেন লেখকের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে। কেউ হলুদ পাঞ্জাবিতে হিমু সেজে, আবার কেউ এসেছেন নীল শাড়িতে রূপার বেশে।
নুহাশপল্লীর ব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম বুলবুল জানান, রোববার রাত ১২টা ১ মিনিটে নুহাশপল্লীতে ১ হাজার ৭৪টি মোমবাতি প্রজ্বালনের মধ্য দিয়ে জন্মদিনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।
রাত ৩টায় ঢাকা থেকে দুই সন্তান নিশাত ও নিনিতকে নিয়ে নুহাশপল্লীতে আসেন হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন। সকালে ভক্ত পাঠক ও শুভানুধ্যায়ীদের উপস্থিতিতে সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান স্ত্রী-সন্তানরা। এ সময় লেখকের আত্মার শান্তি কামনা করে বিশেষ প্রার্থনা করা হয়। লেখকের ম্যুরালের সামনে কাটা হয় জন্মদিনের কেক।
প্রতিবছরের মতো এবারও হিমু পরিবহনের সদস্যরা লেখকের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। হুমায়ূন আহমেদের নিজ হাতে সাজানো নুহাশপল্লীর বিভিন্ন স্থাপনা এবং নান্দনিক শিল্পকর্ম ঘুরে দেখেন ভক্তরা।
বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও আসেন লেখকের সমাধিস্থলে। তবে এবার কোনো লেখক কিংবা প্রকাশকের দেখা মেলেনি। অনেকটা সাদামাটাভাবেই পালন করা হয় জন্মদিন।
হুমায়ূন আহমেদের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে মেহের আফরোজ শাওন বলেন, ‘ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বড় বড় শহরের অনেক ধনী পরিবারের ছেলে-মেয়েরা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে লেখাপড়া করে। ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ার কারণে বাচ্চাদের মধ্যে বাংলার একটি ভীতি ঢুকে যায়। বাংলা ভীতির কারণে পরবর্তী প্রজন্মের মাঝে বই পড়ার প্রবণতা কম। এর দায় বাবা-মায়েরই। বিশেষ করে আমরা যারা বাচ্চাদের ইংলিশ মিডিয়ামে পড়িয়েছি।’
শাওন আরও বলেন, ‘বাংলা ভাষার শুদ্ধচর্চা কমে গেছে। ডিভাইস আসক্তি শুধু বাংলাদেশেই না, পুরো বিশ্বেই বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। করোনা মহামারির কারণে শিশুরা অনলাইনে ক্লাস করার কারণে অনেক শিশু মোবাইলের দিকে ঝুঁকে গেছে। বাধ্য হয়ে বাবা-মা শিশুদের হাতে মোবাইল তুলে দিচ্ছে। শিশুরা দিন দিন মোবাইলে আসক্ত হয়ে যাচ্ছে। এখন ইচ্ছে করলেও তাদের সেখান থেকে ফেরানো সম্ভব হচ্ছে না।’
লেখকের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আসা তরুণী পায়েল বলেন, ‘হুমায়ূন আহমেদ শুধু গল্প এবং উপন্যাস লিখে গেছেন তা কিন্তু নয়। তিনি আমাদের মতো তরুণ-তরুণীদের জোৎস্না দেখতে, বৃষ্টিতে ভিজতে শিখিয়েছেন। তার সৃষ্ট চরিত্রগুলোর মাধ্যমে তিনি অনেকদিন পাঠকের মনে বিচরণ করবেন।’
নুহাশপল্লীতে আগত হুমায়ূনপ্রেমীরা জানান, বই পড়ার পাশাপাশি নুহাশপল্লীতে এসে হুমায়ূন আহমেদকে তারা খুঁজে পান। শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় আজীবন লেখককে স্মরণ করে যাবেন তারা।
ঔপন্যাসিক ও সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপেজলার কুতুবপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে ২০১২ সালের ১৯ জুলাই তিনি মারা যান। ২৪ জুলাই গাজীপুরের নুহাশপল্লীর লিচুগাছতলায় তাকে সমাহিত করা হয়।