সৌদি আরবে থাকা ৩ লাখ রোহিঙ্গার পাসপোর্ট নবায়ন করতে বাংলাদেশকে অনুরোধ জানিয়েছে সৌদি সরকার।
সচিবালয়ে রোববার দেশটির সফররত স্বরাষ্ট্র উপমন্ত্রী নাসের বিন আবদুল আজিজ আল দাউদের সঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের বৈঠকে এই অনুরোধ করা হয়।
বৈঠক শেষে বিস্তারিত তুলে ধরে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে তারা আমাদের জানিয়েছেন, ৩ লাখ রোহিঙ্গা সৌদি আরবে বসবাস করেন। তারা সেখানে ব্যবসা-বাণিজ্য সবই করছেন। আমাদের কাছে তারা অনুরোধ করেছেন রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট নবায়ন করে দিতে।
‘আমাদের যে সিস্টেম, সেই অনুসারে পাসপোর্টগুলো নবায়ন আমরা করছি। আপনারা নিশ্চয় জানেন প্রায় ২৮ লাখ ৬০ হাজার বাংলাদেশি সৌদিতে বাস করছেন। বিভিন্ন পেশায় তারা নিয়োজিত। তাদের কেউ কেউ ব্যবসা করছেন। সেই ব্যবসায় যাতে আরেকটু সুবিধা পান, তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। আমরা মনে করি, আমাদের সম্পর্ক আরও উন্নত হবে এই সফরে।’
রোহিঙ্গারা বাংলাদেশি পাসপোর্টে সৌদি গিয়েছে কি না, জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘প্রথমত তারা আমাদের দেশ থেকে গেছে, এটা সঠিক। কারণ তারা তাড়া খেয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছে। ৩ লাখ রোহিঙ্গা সৌদিতে গেছে। তারা সবাই আমাদের পাসপোর্ট নিয়ে যায়নি। কেউ কেউ নিজস্ব ম্যাকানিজমে গেছে। এখন তাদেরই (সৌদি সরকার) অনুরোধে, এখান থেকে কীভাবে গিয়েছিল তা বিস্তারিত জানানো হয়েছে।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমি তো বলছি, তারা বলছে, তারা বার্মিজ। এ কথাটি তারা বারবার বলছে। তারা বার্মিজ। তারা বাংলাদেশ হয়ে গেছে, এটাও যেমন সত্যি, তেমন বাংলাদেশের বাইরে থেকেও কিছুসংখ্যক গেছে। পাকিস্তান আমলে যারা গেছে, তারা পাকিস্তানি পাসপোর্ট নিয়ে গেছে। বাংলাদেশ আমলে যারা গেছে, তারা সবাই কীভাবে গেছে, কিছুসংখ্যক লোককে তাদের অনুরোধে পাসপোর্ট দেয়া হয়েছিল। সেগুলো সম্পর্কে আমাদের রাষ্ট্রদূত যেটা বললেন, প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে তারা সেখানে আছেন।
‘তাদের আমরা পাসপোর্ট দেব না, তাদের শনাক্ত করতেও যাচ্ছি না। যারা বিশেষ বিবেচনায় গিয়েছিল, সেগুলো শনাক্ত করে আমরা যাদের পাসপোর্ট দিয়েছি তাদের পাসপোর্ট নবায়ন করার ব্যাপারে ওয়াদাবদ্ধ। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সেগুলো আমরা দেখব।’
এ বিষয়ে সৌদিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জাভেদ পাটোয়ারী সাংবাদিকদের বলেন, ‘কিছুসংখ্যক রোহিঙ্গা বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে গেছেন। যেমন ওখানে এখন তিন প্রজন্মের রোহিঙ্গা আছেন। ষাট ও সত্তরের দশকে গেছেন, বাংলাদেশ হওয়ার আগেও পাকিস্তানের পাসপোর্ট নিয়ে গেছেন। তাদের সন্তান, নাতি-নাতনি হয়েছে। তিন প্রজন্ম ধরেই অনেক রোহিঙ্গা ওখানে বাস করছেন।
‘তাদের পরিচয়পত্র দেয়ার কথা সৌদি বলেনি। বলেছে যে বাংলাদেশি যারা ওখানে অবস্থান করছেন, যারা বাংলাদেশি এবং যাদের পাসপোর্ট নবায়ন করতে হবে, তাতে সহায়তা করার কথা বলা হয়েছে।’
এই সমস্যা সমাধানে সৌদি আরবে দুই দেশের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ কাজ করবে বলে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘ওইখানেও ওদের (সৌদি) রাষ্ট্রদূত ও উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়েছে। যখন যে সমস্যাটা আসবে, তারাই সেটা সমাধান করবে। তাৎক্ষণিক সমাধান করার জন্যই কমিটি তৈরি করা হয়েছে।
‘এই কমিটি বাংলাদেশি হিসেবে যার পাসপোর্ট নবায়ন করে দিতে হবে বলে মনে করবে, সঙ্গে সঙ্গে তারা করে দেবে। যাচাই-বাছাইও তারা করবে। কী কী যাচাই করা হবে তা তারা ঠিক করবে। তবে আমাদের পাসপোর্ট যাদের আছে, তাদেরই প্রাধান্য দেয়া হবে।’