বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে যাবে গণতন্ত্র মঞ্চ?

  •    
  • ১৩ নভেম্বর, ২০২২ ০৮:১৫

সাতটি ছোট ছোট দল নিয়ে গড়া নতুন রাজনৈতিক জোট গণতন্ত্র মঞ্চ বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন করতে চায়। তাদের মধ্যে এ নিয়ে ঐকমত্য হবে কি না, তা তাদের শর্ত মানার ব্যাপারে বিএনপির আগ্রহের ওপর নির্ভর করছে বলে জোটের নেতারা বলেছেন।

বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে যাওয়ার আগে বেশ কিছু শর্ত দিয়েছে সরকারবিরোধী ছোট ছোট দল নিয়ে গড়া জোট গণতন্ত্র মঞ্চ। এখন জোটের নেতারা বলছেন, এসব শর্ত পূরণ হওয়ার পরই কেবল এক কাতারে আন্দোলন শুরু করবেন তারা।

জোটের এ শর্তগুলো বিএনপি মানবে বলেই শরিকরা মনে করছে। জোট নেতারা বলছেন, তাদের শর্ত মানার বিষয়ে বিএনপির মনোভাব নেতিবাচক হলে যুগপৎ আন্দোলন না হলেও সরকারবিরোধী হিসেবে তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।

গত ৮ আগস্ট ঢাকার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে আত্মপ্রকাশ করে গণতন্ত্র মঞ্চ। সাতটি ছোট দল ও সংগঠন মিলে করা এই জোটে আছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), নাগরিক ঐক্য, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, গণ অধিকার পরিষদ, ভাসানী অনুসারী পরিষদ ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন।

আত্মপ্রকাশ করেই সরকারবিরোধী তীব্র আন্দোলন গড়ার ঘোষণা দেয় এ জোট। জোটের প্রথম কর্মসূচিতে গত ১১ আগস্ট সরকারের বিরুদ্ধে ‘তীব্র আন্দোলনের’ ঘোষণাও দেন জোটের নেতারা। পরে অবশ্য বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণা দেয় জোটের কয়েকটি শরিক দল।

গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা বলছেন, বিএনপি সংবিধান সংশোধন করবে- এ বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পরই তারা দলটির সঙ্গে আন্দোলনে যাবেন। কারণ অতীতে অনেক আন্দোলনের পর যখন সরকার গঠন হয়েছে, তখন দেখা গেছে বড় দলগুলো এগুলো আসলে ভুলে গেছে। চলতি নভেম্বর মাসের ১৮-২০ তারিখের মধ্যে বিএনপির সঙ্গে গণতন্ত্র মঞ্চের সংলাপ হবে বলে জানিয়েছেন জোটের নেতারা।

এ বিষয়ে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও জোটের অন্যতম নেতা সাইফুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিএনপির সঙ্গে জোটের একটি আনুষ্ঠানিক বৈঠক হবে। জোটের বৈঠকে সেই বিষয়টি নিয়ে আমরা আলোচনা করব।’

জোটের নেতারা বলছেন, নির্দলীয় অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে নির্বাচন একটি অভিন্ন শর্ত, যা বিএনপিও সমর্থন করে। এর বাইরে বিএনপির সঙ্গে সংলাপে জোটের পক্ষ থেকে যুগপৎ আন্দোলনের আগে তাদের আরও বেশ কিছু শর্ত আছে, যা মেনে নেয়া হলে তারা বিএনপির সঙ্গে এক কাতারে আন্দোলনে যাবে।

জোটের নেতারা বলছেন, বিএনপির সামনে যেসব দাবি তুলে ধরা হবে, সেগুলো হলো দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের পরিবর্তন, ২ বারের বেশি কেউ প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন না, প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির পদে ভারসাম্য আনা, প্রত্যক্ষ ভোটের পাশাপাশি সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের মধ্য দিয়েও সংসদে প্রতিনিধিত্ব ও কেন্দ্রীয় ক্ষমতাকে বিকেন্দ্রীকরণ। এগুলো নিয়ে বিএনপির সঙ্গে আলাপ করবে জোট।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জোটের এক নেতা বলেন, ‘আমরা জেনেছি, বিএনপির রূপরেখায় আমাদের দেওয়া শর্তগুলোর বেশ কয়েকটি অনুপস্থিত। যেমন- এখন পর্যন্ত সংবিধানের ৭০ ধারা নিয়ে বিএনপির স্পষ্ট কোনো কথা নেই। এ কারণে এসব বিষয় নিয়ে আমরা সরাসরি তাদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক সংলাপ করব।’

এ বিষয়ে জোটের আরেক নেতা বলেন, ‘আমাদের ইতিহাসে তো অনেক প্রতারণা আছে। সরকারে গেলে অনেক সময় কথাবার্তা পরিবর্তন হয়ে যায়। আমরা আসলে ওই নিশ্চয়তার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছি। সংবিধান সংস্কার করবে এ বিষয়টিতে নিশ্চিত হওয়ার পরই আমরা বিএনপির সঙ্গে আন্দোলনে যাব।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই নেতা আরও বলেন, ‘বিএনপি জাতীয় সরকার গঠন করার যে প্রস্তাব করেছে, এখানে রাষ্ট্রের সংস্কার তারা করতে পারবে না। কারণ ওই সরকার সেটা করতে পারবে না। আর তাদের এই সরস্কার তেমন স্থায়ী হয় না। এ জন্যই আমরা এমন সংস্কারের কথা বলছি, সেটা কলমের খোঁচায় বিএনপি পাল্টে ফেলতে পারবে না। আমরা সংবিধানসহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার চাই।’

বিএনপি জোট এই দাবি মানবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা উনাদের মানতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্র মঞ্চ এর মধ্যে একটি বিষয়ে একমত হয়েছে যে, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে সংবিধানে জনগণের স্থায়ী ক্ষমতায়ন নিয়ে কাজ করবে। তাহলেই আমরা তাদের সঙ্গে আন্দোলন করব। এ বিষয়টি আমরা নিশ্চিত করতে চাই।’

জোটের নেতা ও গণ অধিকার পরিষদের সদস্যসচিব নুরুল হক নুর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শুধু একজনকে সরিয়ে আরেকজনকে ক্ষমতায় আনার জন্য আমরা রাজনীতি করতে চাই না। আমাদের রাষ্ট্রীয় কাঠামোয় পরিবর্তনের কিছু অঙ্গীকার আছে, যা রূপরেখা আকারে বিএনপিকে জোটের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে বিএনপি কী ভাবছে, তা জানার পরই আমরা যুগপৎ আন্দোলনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।’

গণতন্ত্র মঞ্চের জোট নেতারা বলছেন, তাদের শর্তের বিষয়ে বিএনপি অনেকটাই সাড়া দিয়েছে। জোটের দাবিগুলো পুরোপুরি না হলেও অনেকটাই মানা হবে বলে এই মুহূর্তে জোট নেতারা মনে করছেন। কারণ সরকারবিরোধী তীব্র আন্দোলন বিএনপি গড়ে তুলতে না পারলে সরকারের পতন সম্ভব হবে না। এ কারণে হলেও বিএনপি তাদের কিছু শর্ত মানবে।

জোট নেতারা বলছেন, বিএনপি এককভাবে গত ১৩ বছরেও ক্ষমতায় যেতে পারেনি। এ বিষয়টি বুঝতে পেরেই তারা যুগপৎ আন্দোলনের জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করেছে। এখন গণতন্ত্র মঞ্চ বিএনপিকে জনগণের জন্য কিছু করতে শর্ত দিয়ে রাখবে, যা পূরণ হতেই হবে।

জোট নেতা নুরুল হক নুর বলেন, ‘বিএনপির সঙ্গে বিভিন্ন শর্ত দিয়ে রাখা হয়েছে। আলাপ-আলোচনা চলছে। হয়তো আগামী দিনে একটি জায়গায় বিষয়টি সিদ্ধান্তে পৌঁছাবে।’

তবে বিএনপির সঙ্গে একমত না হতে পেরে যুগপৎ আন্দোলনের বিষয়টি পিছিয়ে গেছে বলে মানতে নারাজ তিনি। নুর বলেন, ‘একটা কথা আছে, যে জিনিস যত তাড়াতাড়ি পাওয়া যায়, সে জিনিস তত তাড়াড়াড়ি হারিয়েও যায়। আমরা একটি বোঝাপড়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি।’

জোট নেতারা মনে করেন, বিএনপির সঙ্গে জোটগতভাবে ছাড়াও অনেক দল নিজেরাও যোগাযোগ রাখছে। সে ক্ষেত্রে কয়েকটি দল বিএনপির সঙ্গে আন্দোলনে যাওয়ার বিষয়ে তীব্র ইচ্ছা পোষণ করছে। তবে এমন মনোভাব জোটের সব দলের মধ্যে নেই। আর বিএনপি জাতীয় সরকার নিয়ে যে প্রস্তাব দিয়েছে, তা নিয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের ভিন্নমত রয়েছে। জোটের বেশির ভাগ দল মনে করে, জাতীয় সরকার নির্বাচনের পরে নয়, আগে দরকার।

জোট নেতারা মনে করেন, গণতন্ত্র মঞ্চ জোট হলেও সবার আলাদা রাজনৈতিক মনোভাব রয়েছে। এ কারণে কয়েকটি দল বিএনপির সঙ্গে যেতে বেশি উদগ্রীব। এ ছাড়াও কারও ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়াও থাকতে পারে।

এ বিষয়ে নুরুল হক নুর বলেন, ‘আমাদের মধ্যে টুকটাক মতপার্থক্য থাকতে পারে, তবে অধিকাংশ বিষয়ে গণতন্ত্র মঞ্চ একমত হয়েছে। আমরা সরকার ও শাসনব্যবস্থা বদলের রাজনীতির বিষয়ে জোটগতভাবে একমত।’

বিএনপির তাদের শর্ত না মানলে তারা কী করবেন, জানতে চাইলে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এখনই নেতিবাচক চিন্তা করতে চাই না। আমরা আশা করি, আমাদের মধ্যে বোঝাপড়া হবে। হয়তো আমাদের সব বিষয়ে তারা একমত হবেন না, আমরাও তাদের সব বিষয়ে অ্যাগ্রি নাও করতে পারি।’

তিনি বলেন, ‘বিএনপি শর্ত না মানলে আমরা সরকারবিরোধী হিসেবে আন্দোলন চালিয়ে যাব। কারণ বিরোধী দলগুলোর মধ্যে তো কিছু বড় দাগে বোঝাপড়া আছে।’ বিএনপি ইতোমধ্যে তাদের রূপরেখায় এ বিষয়গুলো এনেছে বলে দাবি করেছেন জোটের শরিক ভাসানী অনুসারী পরিষদের নেতা রফিকুল ইসলাম বাবলু।

তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিএনপিও একটি রূপকল্প সাজাচ্ছে। আমার ধারণা সংবিধানের সংস্কারের বিষয়ে আমাদের যে শর্ত, সে বিষয়ে বিএনপি একমত হবে।'

এ বিভাগের আরো খবর