বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ঢাকায় বিদায় নিয়েছে লোডশেডিং

  •    
  • ১২ নভেম্বর, ২০২২ ২০:৪৬

বিদ্যুৎ বিভাগের পরিসংখ্যান বলছে, ১ নভেম্বরের ঢাকায় বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ৪ হাজার ৩৩৭ মেগাওয়াট, এর বিপরীতে সরবরাহ করা হয়েছে ৪ হাজার ১৬৮। লোডশেডিং ছিল ১৬৯ মেগাওয়াট। আর নভেম্বরের ৯ তারিখে লোডশেডিং শূন্য হয়ে গেছে।

জুলাই থেকে ঘোষণা দিয়ে বিদ্যুতের যে লোডশেডিং শুরু হয়েছিল, আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর পেরিয়ে অবশেষে নভেম্বরে তা থেকে মুক্তি মিলেছে নগরবাসীর। বিদ্যুৎ বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, এ মুহূর্তে ঢাকায় কোনো লোডশেডিং করতে হচ্ছে না তাদের।

নগরবাসীর সঙ্গে কথা বলেও জানা গেছে, বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার যন্ত্রণা থেকে মুক্তি তাদের দৈনন্দিন জীবনে স্বস্তি এনে দিয়েছে। ভোর, সকাল, দুপুর, বিকেল, সন্ধ্যা, রাত, গভীর রাত- যখনতখন বিদ্যুৎ যাওয়ার দিন শেষ হয়েছে শীতের শুরুতেই!

বিশ্বজুড়ে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়া এবং ডলার-সংকটের কারণে জ্বালানি সাশ্রয়ের উদ্দেশ্যে সরকার ঘোষণা দিয়ে বিদ্যুতের লোডশেডিং শুরু করে। এর মধ্যে গত ৪ অক্টোবর দেশের মধ্য পূর্বাঞ্চলে গ্রিড বিপর্যয়ের ফলে লোডশেডিংয়ের মাত্রা চরম আকার নেয়। সরকার থেকে তখন বলা হয়, এমন অবস্থা থেকে সহজে উত্তরণ মিলবে না। তবে শীত শুরু হলে হয়তো লোডশেডিংয়ের মাত্রা কমে আসবে।

রাজধানীর সিদ্ধেশরীর বাসিন্দা আনিসুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গত মাসের শেষের দিক থেকে লোডশেডিংয়ের মাত্রা কমতে শুরু করে। বিশেষ করে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং আঘাত হানার পর থেকে। তবে নভেম্বরের শুরু থেকে আজ (শনিবার) পর্যন্ত আমার এলাকায় লোডশেডিং দেখিনি।’

মিরপুরে ইসিবি চত্বর এলাকার বাসিন্দা সামিউল ইসলাম বলেন, ‘বিদ্যুৎ এখন যায় না। গত এক সপ্তাহ থেকে আমি লোডশেডিং পাইনি।’

রাজধানীর টিকাটুলীর বাসিন্দা শান্তানু দত্ত বলেন, ‘আগে রাতে দিনে মিলিয়ে অনেকবার কারেন্ট চলে যেত। ইদানীং বিদ্যুৎ ততটা যেতে দেখি না। রাতে গেলেও সেটা বুঝি না কারণ রাতে ঠান্ডা ঠান্ডা থাকে। ফ্যানের দরকার হয় না।’

শেওড়াপাড়ার বাসিন্দা আশিক শিকদার বলেন, ‘লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণায় আগে ঘুমাতে কষ্ট হতো। এখন এমনিতেও ঠান্ডা পড়েছে, আবার লোডশেডিং তেমন হয়ই না।’

দক্ষিণ বাড্ডার বাসিন্দা সাব্বির সর্দার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি গ্রাম থেকে একটা কাজের জন্য গত দুই মাস ঢাকায় আছি। কিন্তু এখানে কারেন্টের যে অবস্থা, তাতে অসহ্য হয়ে গেছিলাম। তবে এখন ভালো লাগতেছে। গত কয়েকদিন লোডশেডিং নাই বললেই চলে।’

মোহাম্মদপুরের বছিলা এলাকার বাসিন্দা আঁখি সরকার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আগে অনেক লোডশেডিং ছিল বিশেষ করে মধ্যরাতে। অসহ্যকর একটা অবস্থা ছিল। রাত ১টায় বিদ্যুৎ গিয়ে দুই ঘণ্টা পর আসত। এ ছাড়া দিনেও অনেকবার যেত। এখন যায়ই না কারেন্ট।’

দেশে সরকারের জ্বালানি সাশ্রয়ের ঘোষণার আগে ২২ জুলাই সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিল ১৪ হাজার ৭৮২ মেগাওয়াট। চাহিদাও ছিল সমান। এরপর দিনে দেড় থেকে ২ হাজার মেগাওয়াট লোডশেডিং করা হতে থাকে। গরম কমে আসার পর ধীরে ধীরে চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে ব্যবধানও কমতে থাকে।

৪ অক্টোবর গ্রিড বিপর্যয়ের পরে চাহিদার চেয়ে বিদ্যুতের উৎপাদন পিছিয়ে যায়। তবে আবহাওয়ার তাপমাত্রা কমার সঙ্গে সঙ্গে কমতে থাকে লোডশেডিংয়ের মাত্রা। নভেম্বরের শুরুতে রাজধানীতে লোডশেডিং প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে।

বিদ্যুৎ বিভাগের পরিসংখ্যান বলছে, অক্টোবরের ১০ তারিখে দেশে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১৪ হাজার ২০০ মেগাওয়াট, তবে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে ১২ হাজার ৬৮৬ মেগাওয়াট। ওই দিন দেশে বিদ্যুতের ঘাটতি ছিল ১ হাজার ৫১৪ মেগাওয়াট। ঢাকায় চাহিদা ছিল ৪ হাজার ৫১৫ মেগাওয়াট, আর সরবরাহ করা হয়েছে ৪ হাজার ১৫৯ মেগাওয়াট, সে হিসেবে লোডশেডিং ছিল ৩৫৬ মেগাওয়াট। ওইদিন সারা দেশে লোডশেডিং ছিল ৯৮৫ মেগাওয়াট।

ঢাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহের দুটি প্রতিষ্ঠান ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি) ও ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (ডেসকো) বলছে গত ১০ দিন ঢাকায় লোড শেডিং নেই বললেই চলে।

ডিপিডিসি বলেছে, ঢাকায় তাদের চাহিদা এখন প্রায় ৩০০ মেগাওয়াট কমে এসেছে। আর এর বড় কারণ আবহাওয়ার পরিবর্তন। গত মাসেও যেখানে চাহিদা ছিল প্রায় সাড়ে ১৭শ মেগাওয়াট, সেখান এখন দৈনিক চাহিদা ১৪শ মেগাওয়াটের মতো।

বিদ্যুৎ বিভাগের পরিসংখ্যান বলছে, ১ নভেম্বরের ঢাকায় বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ৪ হাজার ৩৩৭ মেগাওয়াট, এর বিপরিতে সরবরাহ করা হয়েছে ৪ হাজার ১৬৮। লোডশেডিং ছিল ১৬৯ মেগাওয়াট। আর নভেম্বরের ৯ তারিখে লোডশেডিং শূন্য হয়ে গেছে। এদিন চাহিদা ও সরবরাহ উভয়ই ছিল ছিল ৪ হাজার ১৭৬ মেগাওয়াট।

ডেসকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. কাওসার আমীর আলী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রাজধানীতে লোডশেডিংয়ের মাত্রা কমে আসার প্রধান কারণ এসির চাহিদা কমেছে। চাহিদা কমে যাওয়ায় আমাদের সরবরাহে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। তবে আমাদের উৎপাদন কিন্তু বাড়েনি।’

শীত চলে গেলে আবার লোডশেডিং ফিরে আসবে কিনা, এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলনে, ‘আমরা আশা করছি ডিসেম্বরের মধ্যে রামপাল ও পায়রা বিদ্যুকেন্দ্র উৎপাদনে যাবে, তখন পদ্মা হয়ে আমরা ঢাকায় সরবরাহ বাড়াতে পারব।’

ডিপিডিসির ব্যবস্থাপক বিকাশ দেওয়ান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের পর বৃষ্টির কারণে অনেকটা কমে এসেছিল লোডশেডিং। তখন লোড কমে গেছিল। ওই সময় ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলে বিদ্যুৎ ব্যহত হলে সেই লোড আমরা এখানে পেয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘এখন ঠান্ডা পড়ে গেছে তাই চাহিদাও কমে গেছে। ঢাকায় প্রধান লোড হচ্ছে এসি ও ফ্যানের। আমার ডিপিডিসিতে চাহিদা ৩০০ থেকে ৩৫০ মেগাওয়াট কমে গেছে। অক্টোবরে আমাদের চাহিদা ১৭০০ মেগাওয়াট থাকলেও এখন ১৪৫০ মেগাওয়াট।’

বিকাশ দেওয়ান বলেন, ডিপিডিসিতে এখন লোডশেডিং নেই। গত এক সপ্তাহে লোডশেডিং ৫০ থেকে ৬০ মেগাওয়াট হলেও এখন সেটা প্রত্যাহার করা হয়েছে। আজ শনিবার ছুটির দিন বিধায় চাহিদা কম হয়ত কাল একটু বাড়বে।’

এ বিভাগের আরো খবর