সাভারের আশুলিয়া থেকে ঢাকার বিমানবন্দর পর্যন্ত চার লেনের ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্পের নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আশুলিয়া বাজারসংলগ্ন কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডের সঙ্গে অনলাইনে শনিবার সকালে গণভবন প্রান্ত থেকে যুক্ত হয়ে প্রকল্পটির নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
এর মাধ্যমে জিডিপি প্রবৃদ্ধি যেমন বাড়বে, তেমনি যানজট নিরসনের মধ্য দিয়ে যোগাযোগ ও পণ্য পরিবহন সহজ হবে বলেও মনে করেন সরকারপ্রধান।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ঢাকা শহরের উত্তরাঞ্চল তথা সাভার-আশুলিয়া-নবীনগর-ইপিজেড এলাকার যানজট নিরসনে যোগাযোগ নেটওয়ার্ক তৈরি করতে ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।’
পুরো অঞ্চলটি শিল্পনগরী উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তার সঙ্গে সারা বাংলাদেশের যোগাযোগটা আরও সহজ হবে।’
প্রকল্পটি নির্মাণ হলে শিল্পাঞ্চলের যোগাযোগ, পণ্য পরিবহন- সব কিছুই খব দ্রুত হবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এটি নির্মাণ হলে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার শূন্য দশমিক ২১ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা যায়। যেটি এশিয়ান হাইওয়ে অ্যালাইনমেন্টের মধ্যে অবস্থিত।’
এর মধ্য দিয়ে যানজট নিরসনের পাশাপাশি এটির সঙ্গে দেশের সব জাতীয় মহাসড়কের সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি হবে বলেও জানান সরকারপ্রধান।
প্রথম সংশোধিত ডিপিপি অনুযায়ী ১৭ হাজার ৫৫৩ কোটি ৪ লাখ ৩৯ হাজার টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি নির্মাণ করা হচ্ছে। মোট ব্যয়ের ৭ হাজার ৮৬০ কোটি ৯৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা আসবে সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন থেকে। আর বাকি অর্থ আসবে চীনের এক্সিম ব্যাংক থেকে। যার পরিমাণ ৯ হাজার ৬৯২ কোটি ৭ লাখ ৯৯ হাজার টাকা।
এই প্রকল্পের ঠিকাদার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছে চীন সরকারের মনোনীত চীনা ন্যাশনাল মেশিনারি এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট কো-অপরাশেন (সিএমসি)।
প্রকল্পে বিনিয়োগ করায় চীন সরকারকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।
সাভার ইপিজেডের কাছে শ্রীপুর থেকে ঢাকা-আশুলিয়া সড়ক হয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে সংযোগের মাধ্যমে যানজট নিরসন এই প্রকল্পের মূল্য উদ্দেশ্য।
এটি নির্মাণ হলে ঢাকার সঙ্গে ৩০টি জেলার সংযোগ সড়ক আব্দুল্লাহপুর-আশুলিয়া-বাইপাইল-চন্দ্রা অংশে যানজট অনেকাংশে কমার পাশাপাশি ঢাকার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ আরও দ্রুত হবে।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সেতু বিভাগের পক্ষে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।
গাজীপুরে সাধারণ মানুষের তিক্ত অভিজ্ঞতার বিষয়টি স্মরণ করে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এই প্রকল্প বাস্তবায়নে যাতে জনভোগান্তি তৈরি না হয়, সেদিকে সতর্ক করেছেন।
সেতু সচিবকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘এখানে যেন গাজীপুরের পুনরাবৃত্তি না হয়। সেখানে জনভোগান্তি যাতে না হয়, সে ব্যাপারে ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট, রাস্তা ইউজেবল, পসেবল করে- এই বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখতে হবে।’
প্রকল্পের আওতায় ৪ লেনের মোট ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হবে। সাতটি স্থানে ১০ দশমিক ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ ১৪টি র্যাম্প। নবীনগরে প্রায় দুই কিলোমিটার দীর্ঘ দুটি ফ্লাইওভার নির্মাণের পাশাপাশি ১৪ দশমিক ২৮ কিলোমিটার দীর্ঘ চার লেন সড়ক নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়া নির্মাণ করা হবে সেতু, ওভারপাস, আন্ডারপাস, ড্রেনেজ ইউটিলিটির জন্য ডাক্ট নির্মাণ, টোল প্লাজা।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মনজুর হোসেন বলেন, ‘এটি নির্মাণ হলে রপ্তানি পণ্য পরিবহন দ্রুততর হবে। ঢাকা ইপিজেড থেকে ঢাকা-আশুলিয়া-আব্দুল্লাহপুর হয়ে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে সংযুক্ত। যার ফলে যাত্রাবাড়ী কুতুবখালী পর্যন্ত ৪৪ কিলোমিটার নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ তৈরি হবে।’
দেশের ৩০টি জেলার প্রায় চার কোটি মানুষ এর সুফল ভোগ করবেন বলেও জানান তিনি।