দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ কয়েকটি দাবিতে বিভাগীয় সমাবেশ করতে ফরিদপুরে পৌঁছেছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তের বিএনপির নেতা-কর্মীরা। অনেকেই এখনও এসে পৌঁছাচ্ছেন। এরই মধ্যে মঞ্চ নির্মাণসহ সমাবেশের যাবতীয় প্রস্তুতি শেষ হয়েছে।
আগে থেকে আসা নেতা-কর্মীতে শুক্রবার রাতভর ভরে ছিল সমাবেশস্থল জেলা শহর থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে কোমরপুরে আবদুল আজিজ ইনস্টিটিউট মাঠ। বেলা ১১টায় এখানেই গণসমাবেশ শুরু হবে।
নেতা-কর্মীরা জানিয়েছেন, পরিবহন ধর্মঘট ও পুলিশি বাধার মুখেও কৌশলে ফরিদপুরে ঢুকেছেন তারা। সমাবেশ সফল করারই তাদের লক্ষ্য।
শনিবার সকালে সমাবেশের মাঠ ও আশপাশ এলাকা ছিল বিএনপি নেতা-কর্মীতে মুখর। কেউ সমাবেশের মাঠে কেউ বা আশপাশে রাত কাটিয়েছেন। শহরের প্রবেশমুখ দিয়ে অনেককে ফরিদপুরে ঢুকতে দেখা যায়। এসব নেতা-কর্মীদের মুখে স্লোগান ছিল।
পরিবহন ধর্মঘটের দুর্ভোগ মাড়িয়ে শুক্রবারের মতো শনিবারও ট্রাক, মাহিন্দ্রতে চড়ে শরীয়তপুর, মাদরীপুর, গোপালগঞ্জ ও রাজবাড়ী থেকে দলে দলে নেতাকর্মীরা ঢুকছেন মাঠে।
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ বলেন, ‘সরকার নানাভাবে আমাদের সমাবেশকে বানচাল করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছে। সমাবেশের মাঠ কানায় কানায় ভরে গেছে, তিল ঠাঁই নেই। আগের রাতেও মাঠ স্লোগানে মুখর ছিল। সন্ধ্যায় আমাদের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামসহ কেন্দ্রীয় নেতারা মাঠ পরিদর্শন করেছেন।’
বিএনপি সূত্র জানায়, গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেবেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। প্রধান বক্তা থাকবেন স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেবেন স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু, ইকবাল মাহমুদ চৌধুরী ও ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর।
সমাবেশের আগের দিন শুক্রবার থেকেই পুলিশ চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি শুরু করেছে। শহরের রাজবাড়ী রাস্তার মোড়ে ২১ জেলার প্রবেশদ্বারে বঙ্গবন্ধু পুলিশ স্কয়ারের সামনে বসানো হয়েছে চেকপোস্ট। এ চেক পোস্ট পাড়ি দিয়েই যেতে হচ্ছে সমাবেশে।
ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমন রঞ্জন সরকার বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষা, নিরাপত্তা ও ট্রাফিক নির্বিঘ্ন রাখতে তল্লাশি করা হচ্ছে। সমাবেশস্থলের চারপাশে পুলিশ মোতায়েন করা হবে। এখনও সমাবেশস্থলে পুলিশি টহল চলছে।’
বিএনপির বিরুদ্ধে বিভাগীয় সমাবেশের মাধ্যমে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির অভিযোগ এনে ফরিদপুর শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেছে জেলা আওয়ামী লীগ। শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে মিছিলটি শহরের আলিপুরে শেখ রাসেল ক্রীড়া কমপ্লেক্স থেকে শুরু হয়ে শহর প্রদক্ষিণ করে।
এদিকে ফরিদপুর জেলা বাস মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ডাকা ৩৮ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘটের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বিআরটিসির বাসও বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
ফরিদপুর নতুন বাসস্ট্যান্ড এলাকার বিআরটিসির বাস কাউন্টার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শুক্রবারের মতো শনিবারও কাউন্টার বন্ধ থাকবে।
এর আগে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে জেলা বাসমালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের উদ্যোগে শহরে মাইকিং করা হয়। মাইকিংয়ে বলা হয়, ‘মহাসড়কে সব ধরনের অবৈধ ত্রি-হুইলার (নছিমন, করিমন, ভটভটি, মাহিন্দ্রা, ব্যাটারিচালিত রিকশা, ইজিবাইক ও ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল) চলাচল বন্ধের দাবিতে শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে শনিবার রাত ৮টা পর্যন্ত ফরিদপুরের সব রুটে বাস ও মিনিবাস বন্ধ থাকবে।’
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, লোডশেডিং, দুর্নীতি-দুঃশাসন, লুটপাট, মামলা-হামলা, গুম, হত্যা, ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় মহাসমাবেশ করবে বিএনপি। তার আগে সারা দেশে হচ্ছে বিভাগীয় সমাবেশ।