বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

তিল ঠাঁই নেই মাঠে, উৎসবের আমেজ

  •    
  • ১১ নভেম্বর, ২০২২ ২৩:৩৭

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ বলেন, ‘সরকার নানাভাবে আমাদের সমাবেশকে বানচাল করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছে। সমাবেশের মাঠ কানায় কানায় ভরে গেছে, তিল ঠাঁই নেই।’

ফরিদপুরে রাত পোহালেই শুরু হচ্ছে বিএনপির ষষ্ঠ বিভাগীয় সমাবেশের আনুষ্ঠানিকতা। এরই মধ্যে মঞ্চসহ যাবতীয় প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। মাঠ কানায় কানায় ভরে গেছে নেতাকর্মীতে।

ঢাকা থেকে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কেন্দ্রীয় নেতারা পৌঁছে গেছেন সমাবেশস্থলে।

জেলা শহর থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে কোমরপুরে আবদুল আজিজ ইনস্টিটিউট মাঠে বেলা ১১টায় বিএনপির গণসমাবেশ শুরু হবে।

শুক্রবার রাতে দেখা গেছে, মাঠে নেতাকর্মীরা খোলা আকাশের নিচেই অবস্থান নিয়েছেন। হাজারো লোকে মুখর হয়ে উঠেছে মাঠ। মাঝে মাঝেই উঠছে স্লোগান। চলছে খোশগল্প, খাওয়া-দাওয়া, এমনকি গানবাজনাও।

সমাবেশ মঞ্চে শুক্রবার সন্ধ্যায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর হাত নেড়ে নেতাকর্মীদের শুভেচ্ছা জানান। ছবি: নিউজবাংলা

পরিবহন ধর্মঘটের দুর্ভোগ মাড়িয়ে বিকেলেও ট্রাক, মাহিন্দ্রতে চড়ে শরীয়তপুর, মাদরীপুর, গোপালগঞ্জ ও রাজবাড়ী থেকে দলে দলে নেতাকর্মীরা ঢুকেছেন মাঠে।

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ বলেন, ‘সরকার নানাভাবে আমাদের সমাবেশকে বানচাল করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছে। সমাবেশের মাঠ কানায় কানায় ভরে গেছে, তিল ঠাঁই নেই।

‘আগের রাতেও মাঠ স্লোগানে মুখর ছিল। মাঠে নেতাকর্মীদের চাঙা রাখতে স্থানীয় শিল্পীরা গান গাইছেন। সন্ধ্যায় আমাদের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামসহ কেন্দ্রীয় নেতারা মাঠ পরিদর্শন করেছেন।

সমাবেশের আগে নেতাকর্মীদের বাড়িতে পুলিশ গিয়ে হয়রানি করছে বলেও জানান শামা ওবায়েদ। এ সময় তিনি ১২ বছর আগে প্রয়াত শহর বিএনপির সভাপতিকে ধরতে তার বাড়িতে পুলিশি অভিযানের কথাও উল্লেখ করেন।

আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বিএনপির নেতাকর্মীদের হুমকিধমকি দেয়ার অভিযোগও করেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘সমাবেশ বাধাগ্রস্ত করতে সরকারের নির্দেশে পরিবহন ধর্মঘট ডাকে পরিবহন মালিক ঐক্য পরিষদ। এতে আমাদের নেতা-কর্মীদের মাঠে আসা আটকাতে পারেনি। এখন পুলিশ দিয়ে আমাদের হয়রানি করা হচ্ছে। তাতেও কোনো লাভ হচ্ছে না।

‘আওয়ামী লীগ আমাদের সমাবেশ সফল করার চ্যালেঞ্জে হেরে গিয়ে মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে। এ সমাবেশে যারা এসেছেন, তারা দেশ বাঁচাতে এসেছেন। বিএনপিকে ভালোবেসে এসেছেন। আওয়ামী লীগের মতো টাকা দিয়ে জনগণ কিনে মাঠ ভরতে হয় না আমাদের।’

বিএনপি সূত্র জানায়, গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখবেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। প্রধান বক্তা থাকবেন স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেবেন স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু, ইকবাল মাহমুদ চৌধুরী ও ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর।

পুলিশের অবস্থান

সমাবেশের আগের দিন শুক্রবার থেকেই পুলিশ চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি শুরু করেছে। শহরের রাজবাড়ী রাস্তার মোড়ে ২১ জেলার প্রবেশদ্বারে বঙ্গবন্ধু পুলিশ স্কয়ারের সামনে বসানো হয়েছে চেকপোস্ট। এ চেক পোস্ট পাড়ি দিয়েই যেতে হবে সমাবেশে।

ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমন রঞ্জন সরকার বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষা, নিরাপত্তা ও ট্রাফিক নির্বিঘ্ন রাখতে তল্লাশি করা হচ্ছে। শনিবার সমাবেশস্থলের চারপাশে পুলিশ মোতায়েন করা হবে। এখনও সমাবেশস্থলে পুলিশি টহল চলছে।’

আওয়ামী লীগের অবস্থান

বিএনপির বিরুদ্ধে বিভাগীয় সমাবেশের মাধ্যমে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির অভিযোগ এনে ফরিদপুর শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেছে জেলা আওয়ামী লীগ।

শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে মিছিলটি শহরের আলিপুরে শেখ রাসেল ক্রীড়া কমপ্লেক্স থেকে শুরু হয়ে শহর প্রদক্ষিণ করে।

মিছিল শেষে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক বলেন, ‘বিএনপি আড়াই হাত লাঠির মাথায় জাতীয় পতাকা টানিয়ে সন্ত্রাস করতে এসেছে। তারা বস্তা বস্তা পাথর-গুলতি নিয়ে ফরিদপুরকে অশান্ত করার পরিকল্পনা করছে।

‘বিএনপিকে আমরা ফরিদপুরে কোনো নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে দেব না। এই জেলায় শেখ হাসিনার সৈনিকরা রয়েছে। আমরা শক্ত হাতে প্রতিহত করবো। আমরা সব সহযোগী সংগঠন রাজপথে আছি। রাজপথেই তাদের জবাব দেব।’

এর আগে বুধবার বিকালে সমাবেশস্থল ঘিরে যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক ও ছাত্রলীগ মোটরসাইকেল মহড়া দিয়েছে।

পরিবহন ধর্মঘট

ফরিদপুর জেলা বাস মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ডাকা ৩৮ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘটের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বিআরটিসির বাসও বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয়া হয়েছে।

বিআরটিসি কর্তৃপক্ষ বৃহস্পতিবার রাতে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

ফরিদপুর নতুন বাসস্ট্যান্ড এলাকার বিআরটিসির বাস কাউন্টার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শুক্র ও শনিবার কাউন্টার বন্ধ থাকবে।

এর আগে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে জেলা বাসমালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের উদ্যোগে শহরে মাইকিং করা হয়।

মাইকিংয়ে বলা হয়, ‘মহাসড়কে সব ধরনের অবৈধ ত্রি-হুইলার (নছিমন, করিমন, ভটভটি, মাহিন্দ্রা, ব্যাটারিচালিত রিকশা, ইজিবাইক ও ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল) চলাচল বন্ধের দাবিতে শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে শনিবার রাত ৮টা পর্যন্ত ফরিদপুরের সব রুটে বাস ও মিনিবাস বন্ধ থাকবে।’

ফরিদপুর নতুন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বিআরটিসির বাস। ছবি: নিউজবাংলা

ফরিদপুর বিআরটিসি বাস পরিবহনের সহকারী পরিচালক মোজাম্মেল হাসান বলেন, ‘শুক্র ও শনিবার ফরিদপুর থেকে সব পথে বিআরটিসির বাস চলাচল বন্ধ থাকবে।’

কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বাস মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ মহাসড়কে সব ধরনের অবৈধ তিন চাকার যান চলাচল বন্ধের জন্য শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে ৩৮ ঘণ্টার ধর্মঘট ডেকেছে। আমরাও ওই দাবির প্রতি সংহতি জানিয়ে বাস বন্ধ করে দিয়েছি। শুক্রবার ও শনিবার আমাদের কাউন্টার বন্ধ থাকবে।’

মোজাম্মেল হাসান আরও বলেন, ‘আমরা সরকারের কাছ থেকে বাস ইজারা নিয়ে চালাই। তাদের কথা শুনতে হয়। আবার বাসের সঙ্গে শ্রমিকরা জড়িত। তাদের দাবিও উপেক্ষা করতে পারি না।’

এর আগে বাস মালিক ও শ্রমিকরা বিআরটিসির বাস চলাচল বন্ধের দাবিতে ধর্মঘট করেছিলেন। এখন তাদের সঙ্গে ধর্মঘটে যাওয়ার যৌক্তিকতা জানতে চাইলে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি মোজাম্মেল।

পরিবহন ধর্মঘটে ভোগান্তিতে পড়েছে ফরিদপুরসহ আশে পাশের জেলার মানুষ। কয়েকজন তাদের দুর্ভোগের কথা তুলে ধরেন।

দুপুরে চার বছরের শিশু কন্যাকে নিয়ে এক ঘণ্টা ফরিদপুর বাস টার্মিনালের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন মুনতাসিনা। যাবেন বগুড়ায় বাবার বাড়িতে। মুনতাসিনার মা অসুস্থ তাই জরুরি ভিত্তিতে যেতে হবে তাকে।

বন্ধ কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মুনতাসিনা জানান, ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার কৃষ্টপুর ইউনিয়নে তার শ্বশুড় বাড়ি। মায়ের অসুস্থতার খবর জেনে বগুড়ায় যেতে সকালে অটোরিকশা করে কন্যাকে নিয়ে টার্মিনালে এসে পড়েছেন বিপাকে।

মুনতাসিনা বলেন, ‘আমি কি এখন কন্যাকে নিয়ে হেঁটে হেঁটে বগুড়া যাব?’

বাস বন্ধের ফলে পথে পথে দেখা যায় ভোগান্তির চিত্র। অনেক মানুষ মাথায়, হাতে ব্যাগ নিয়ে হেঁটে চলেছেন শুধু সামনের দিকে। উদ্দেশ্য গন্তব্যে যাবার।

দূর পাল্লার সকল বাস বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ জনগন। ছবি: নিউজবাংলা

শুক্রবার সকাল থেকে সারাদিন শত শত মানুষকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের ভাঙ্গা রাস্তার মোড় এলাকায়। তাদের গন্তব্য বরিশাল, শরিয়তপুর, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ জেলার দিকে।

ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের রাজবাড়ী রাস্তার মোড় এলাকায় দেখা যায়, শতাধিক মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। তাদের গন্তব্য ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, মাগুড়া, যশোর, খুলনা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফরিদপুর শহরের কয়েকজন মাইক্রোবাস চালক বলেন, ‘আমাদের সংসার আছে, আমরা গরিব। কাজ না করলে আমরা খাব কি? আমরা গোপনে কিছু ভাড়া নিচ্ছি।’

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, লোডশেডিং, দুর্নীতি-দুঃশাসন, লুটপাট, মামলা-হামলা, গুম, হত্যা, ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় মহাসমাবেশ করবে বিএনপি। তার আগে সারা দেশে হচ্ছে বিভাগীয় সমাবেশ।

এ বিভাগের আরো খবর