ফরিদপুর বাস টার্মিনালের সামনে চার বছরের শিশুকন্যা শাহনাজ মল্লিকাকে নিয়ে এক ঘণ্টা অপেক্ষায় আছেন ৩০ বছরের মুনতাসিনা। তিনি যাবেন বগুড়ায় বাবার বাড়িতে। তার মা অসুস্থ থাকায় সেখানে জরুরি ভিত্তিতেই যেতে হবে তাকে।
তিনি জানান, ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার কৃষ্টপুর ইউনিয়নে তার শ্বশুর বাড়ি। তিনি জানতেন, দুপুর থেকে বাস চলাচল বন্ধ। বগুড়ায় যেতে সকালে অটোরিকশায় শিশুকন্যা শাহনাজকে নিয়ে টার্মিনালে এসে পড়েছেন বিপাকে। একে ওকে জিজ্ঞেস করছেন, বগুড়া যাওয়ার কোনো পথ আছে কি না?
অভিযোগ করে মুনতাসিনা বলেন, ‘জনগণের জন্য রাজনীতি, যদি সাধারণ জনগণকে ভোগান্তিতে ফেলে সে রাজনীতির কোনো প্রয়োজন নেই। আমি কি এখন শিশুকন্যাকে নিয়ে হেঁটে হেঁটে বগুড়া যাব?’
শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে চলছে জেলা বাস মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ডাকা ৩৮ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘট। তাই বন্ধ দূরপাল্লার বাস। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন অনেকে।
জেলা মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মো. নাছির বলেন, ‘১১ নভেম্বর শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে ১২ নভেম্বর শনিবার রাত ৮টা পর্যন্ত পরিবহন ধর্মঘট চলবে। এ সময় ফরিদপুর বাস টার্মিনাল থেকে আঞ্চলিক বাস, মিনিবাস ও দূরপাল্লার কোনো বাস চলাচল করবে না।’
ফরিদপুর বিভাগীয় গণসমবেশের সমন্বয়কারী বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা শামা ওবায়েদ বলেন, ‘ফরিদপুর বিভাগীয় সমাবেশকে বাধাগ্রস্ত করে বাস ও মিনি বাস ধর্মঘট করছে।’
এর আগে গত সোমবার জেলা মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের কাছে এ সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক গোলাম নাসির স্বাক্ষরিত একটি পত্রে কিছু দাবি-দাওয়ার বাস্তবায়ন চেয়ে ১০ নভেম্বরের মধ্যে তার সমাধান চায়। তা না হলে ১১ নভেম্বর সকাল ছয়টা থেকে ১২ নভেম্বর রাত ৮টা পর্যন্ত ৩৮ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘট করা হবে বলে জানানো হয়।
ফরিদপুরে পরিবহন ধর্মঘটের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে বিআরটিসি বাসও বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
এর সত্যতা নিশ্চিত করে ফরিদপুর বিআরটিসি বাস পরিবহনের সহকারী পরিচালক মোজাম্মেল হাসান বলেন, ‘শুক্র ও শনিবার ফরিদপুর থেকে সব পথে বিআরটিসির বাস চলাচল বন্ধ থাকবে।’
বাস বন্ধের ফলে পথে পথে ভোগান্তি হচ্ছে যাত্রীদের। মাথায় ব্যাগ, হাতে ব্যাগ নিয়ে হেঁটে চলেছে শুধু সামনের দিকে। উদ্দেশ্য গন্তব্যে যাওয়ার।
শুক্রবার সকালে শতাধিক মানুষকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের ভাঙ্গা রাস্তার মোড় এলাকায়। তাদের গন্তব্য বরিশাল, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ জেলার দিকে।
আবার ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের রাজবাড়ী রাস্তার মোড় এলাকায় দেখা যায়, শতাধিক মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। তাদের গন্তব্য ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, মাগুড়া, যশোর, খুলনা।
মামুন শেখ তার স্ত্রীকে নিয়ে রিকশা থেকে নামলেন টার্মিনালের সামনে। যাবেন মাগুড়া।
তিনি বলেন, ‘ঢাকায় গার্মেন্টসে চাকরি করি। পদ্মা সেতু হয়ে ফরিদপুরে এসেছি। বাস থেকে ভাঙ্গা গোলচত্বরে নেমেছি। সেখান থেকে ভেঙে ভেঙে ফরিদপুর টার্মিনালে আসি।’
তিনি জানান, বাস বন্ধের খবর জানতেন না তিনি। অটো, মাহিন্দ্রাতে করে ভেঙে ভেঙে যেতে হবে।
সুমন মোল্যা গার্মেন্টসের পণ্য নিয়ে ব্যবসা করতে এসেছিলেন ফরিদপুরে। সকালে ফিরে যেতে চেয়েছিলেন ঢাকা।
তিনি বলেন, ‘জনগণের কথা কেউ ভাবে না। আমার মতো শত শত লোক রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে। হোটেলগুলোও কোনো লোক রাখছে না। বলছে হোটেলের সব রুম বুক। এ দেশে আর বসবাসের অবস্থা নেই।’
আওয়ামী লীগ শহরের মাইক্রোবাস বন্ধ রাখতে বলেছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন মাইক্রোবাসচালক বলেন, 'আমাদের সংসার আছে, আমরা গরিব। কাজ না করলে আমরা খাব কী? আমরা গোপনে কিছু ভাড়া নিচ্ছি।'