লালমনিরহাট সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়নের চর ফলিমারীতে শুরু হওয়া মুজিব কিল্লার নির্মাণকাজ ধরলা নদীভাঙনের মুখে বন্ধ হয়ে গেছে।
২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে কাজ শুরু করার পরপরই ধরলা নদী ভাঙনের কবলে পড়লে আগস্ট মাসেই বন্ধ হয়ে যায় মুজিব কেল্লার নির্মাণকাজ।
যদিও আগে থেকেই মাত্র ১০০ গজ দূরত্বে নির্মাণকাজ শুরু হওয়ায় নদী ভাঙনে ঝুঁকিতে ছিল প্রকল্পটি। তার পরও ওই স্থানেই মুজিব কেল্লার নির্মাণকাজ শুরু হয়। নদী ভাঙনকবলিত এলাকা থেকে দূরবর্তী জায়গায় মুজিব কেল্লার কাজ করা হলে সব সুবিধা পেত স্থানীয় মানুষজন। বর্তমানে নদীর ভাঙন প্রায় ২০ থেকে ২৫ গজ দূরত্বে চলে আসায় মুজিব কেল্লার নির্মাণকাজ নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন দ্বীপচরের দুই শতাধিক পরিবার।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানা গেছে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ২ কোটি ৮ লাখ ৫ হাজার ৫৯০ টাকা ব্যয়ে মুজিব কেল্লাটির নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০২০ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি। কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ওই বছরের ১৭ আগস্ট। কিন্তু এখন পর্যন্ত কেল্লার প্রায় ৪০ শতাংশ কাজ শেষ হলেও ঠিকাদার তুলে নেয় পুরো কাজের ৬৮ শতাংশ বিল। ঠিকাদারের দাবি, কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সরিয়ে নেয়া হয়েছে নির্মাণসামগ্রীও।
স্থানীয় ইউপি সদস্য জোনাব আলী বলেন, ‘মুজিব কেল্লাটি নির্মাণ করার জন্য জায়গা নির্বাচনে ভুল ছিল। কারণ নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে এত বড় একটি প্রকল্পের কাজ করবে, সেটি সঠিকভাবে বিচার বিবেচনা করবে না, সেটি হতে পারে না। তবে এটি নির্মাণ হলে এই এলাকার মানুষের অনেক উপকার হতো।’
তিনি জানান, নদীভাঙন এলাকা থেকে দূরে নির্মাণ করা হলে তারা এই ভোগান্তিতে পড়ত না। তবে নদীর ভাঙনকবলিত জায়গাগুলোতে যদি বস্তা ফেলা হতো তাহলে রক্ষা পেত দীপচরটি।
এ বিষয়ে লালমনিরহাট সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মশিউর রহমান বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কেল্লাটির নির্মাণকাজ ২০১৬ সালের নকশা মোতাবেক ওই স্থানে শুরু করা হয়েছিল। তবে নদীভাঙন খুব কাছাকাছি আসায় এখন বন্ধ আছে কাজ। এ প্রকল্পটি সরাসরি ঢাকা থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছিল। আমরা সে সময় জায়গা বদলের কথা বলেছিলাম, কিন্তু তারা শোনেননি। এখন নদীভাঙন আরও এগিয়ে এসেছে। নির্মাণাধীন মুজিব কেল্লাটি টেকানো মুশকিল হয়ে উঠেছে।’
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, ‘লালমনিরহাট জেলার সদর উপজেলার চর ফলিমারিতে মুজিব কেল্লার নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল। নির্মাণকাজ শুরু হওয়ার পর থেকেই ওই এলাকায় ধরলা নদীর ভাঙন দেখা দেয়ায় আমরা মুজিব কেল্লার পশ্চিম পাশে যে নদীতীর আছে, সেটা ইতোমধ্যে দুই বছরে প্রায় ১০ হাজারের মতো জিও বস্তা ফেলে নদীভাঙন আপাতত রোধ করেছি।
‘বর্তমানে মুজিব কেল্লার পশ্চিম তীর ভালো থাকলেও পূর্বে যে তীর আছে সেটিতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। বিষয়টি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি, বরাদ্দ পেলে ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এ বিষয়ে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের জেলার বেশ কিছু এলাকায় বন্যার সময় যাতে লোকজন বসবাস করতে পারে, সে জন্য মুজিব কেল্লা নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। এর মধ্যে লালমনিরহাট সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়নের ফলিমারির চড়ে একটি মুজিব কেল্লা নির্মাণ চলমান ছিল। কিন্তু ধরলা নদী ভাঙন দেখা দেয়ায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের কারিগরি সহায়তায় নির্মাণের কাজ বন্ধ রয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ পাওয়া গেলে আবার চালু হবে নির্মাণকাজ।’