জামায়াতের সঙ্গে নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র কোনো সংযোগ আছে কি না, বা জঙ্গিবাদে তাদের কোনো সংশ্লিষ্টতা আছে কি না, তা খতিয়ে দেখছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান মো. আসাদুজ্জামান বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান। ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগে বুধবার সকালে সিলেট থেকে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের বর্তমান আমির ডা. শফিকুর রহমানের ছেলে ডা. রাফাত সাদিক সাইফুল্লাহকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সিলেট অঞ্চলের প্রধান সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করছিলেন।
সিটিটিসিপ্রধান এ বিষয়ে বলেন, ‘নতুন এই জঙ্গি সংগঠনের সিলেট অঞ্চলের প্রধান সমন্বয়ক ডা. রাফাত জামায়াত আমিরের ছেলে। এ ক্ষেত্রে তার পিতার সংগঠনের কোনো নির্দেশনা ছিল কি না, বা তাদের দ্বারা নির্দেশিত হয়ে নতুন এই জঙ্গি সংগঠনে তিনি যুক্ত হয়েছেন কি না, তা রিমান্ডে নিয়ে জানার চেষ্টা করা হবে। আমরা সবকিছুই খতিয়ে দেখছি।’
ডা. রাফাতের ভূমিকা নিয়ে সিটিটিসিপ্রধান বলেন, ‘১ নভেম্বর রাজধানীর সায়েদাবাদ এলাকায় অভিযান চালিয়ে সেজাদুল ইসলাম সাহাব তানিম ওরফে ইসা ওরফে আরাফাত ওরফে আনোয়ার, মো. জাহিদ হাসান ভূঁইয়া ও সৈয়দ রিয়াজ আহমদ নামে নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা সিলেট থেকে হিজরত করেছিল। বাংলাদেশে সম্প্রতি যত যুবক হিজরত করেছেন তার মধ্যে সিলেটে বেশি। হিজরতকালীন মাস্টারমাইন্ড হলেন এই ডা. রাফাত।’
তিনি বলেন, ‘রাফাত একটি মেডিক্যাল থেকে এমবিবিএস পাস করে ইন্টার্ন করছিলেন। তাকে গ্রেপ্তারের আগে তানিম, আনবির ও জাহিদের দেয়া জবানবন্দিতে উঠে এসেছে তারাসহ সিলেট থেকে হিজরতকারীদের পেছনের মূল ব্যক্তি এই রাফাত।
‘রাফাতের নেতৃত্বেই ২০২১ সালের জুন মাসে ১১ যুবক সিলেট থেকে হিজরত করে। তখন তা বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছিল। তারা বান্দরবানে যায়, কোনো কারণে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় তারা সাত দিন পর সিলেটে ফিরে আসে।
‘কিন্তু তারা তৎপরতা বন্ধ রাখেনি। সিলেট অঞ্চল থেকে যেসব যুবক হিজরত করেছেন তাদের প্রভাবিত করা, দাওয়াত দেয়া ও প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন ডা. রাফাত।’
মো. আসাদুজ্জামান আরও বলেন, ‘কুমিল্লার ঘটনার পর নতুন জঙ্গি সংগঠনের নাম প্রকাশ্যে আসে। এরপর সিটিটিসিসহ অন্যান্য বাহিনী ব্যাপক অভিযান শুরু করলে তারা আত্মগোপনে চলে যায়। এরপর তারা আবার সিলেট থেকে হিজরতের প্রস্তুতি নেয়।
গ্রেপ্তার হওয়া তানিম, আনোয়ার ও জাহিদ আরও অনেককে নিয়ে পুনরায় বড় ধরনের হিজরতের কথা ছিল। তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ডা. রাফাতকে গ্রেপ্তার করা হয়।
‘ডা. রাফাত দীর্ঘদিন ধরে সিলেট অঞ্চলের যুবকদের জিহাদ ও জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ করা এবং প্রচার চালিয়ে আসছিলেন। বেশ কয়েকজন জিহাদে উদ্বুদ্ধ যুবককে বোমা বানানোর প্রশিক্ষণ দেয়া এবং তাদের প্রশিক্ষণের সক্ষমতাও যাচাই করেছে রাফাতের লোক। আমরা সেই বোমার কারিগরকেও শনাক্ত করেছি। তাকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।’
তিনি জানান, একসময়ের শিবির কর্মী ডা. রাফাতের ৭ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছে আদালতে। তার কাছ থেকে আরও বিস্তারিত জানার জন্য জিজ্ঞাসাবাদ করবে সিটিটিসি।