দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ক্রয় সংক্রান্ত প্রকল্প প্রস্তাবের ফিজিবিলিটি স্টাডির বদলে টেকনিক্যাল কমিটির সুপারিশ নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
রোববার প্রকল্প প্রস্তাবটি ফের পরিকল্পনা কমিশনে পাঠাবে সাংবিধানিক সংস্থাটি।
প্রকল্প প্রস্তাবনা আইন অনুযায়ী, পঞ্চাশ কোটি টাকার বেশি ব্যয়সাপেক্ষ প্রকল্পের ক্ষেত্রে তা অবশ্যই তৃতীয় পক্ষ দিয়ে ফিজিবিলিটি স্টাডি করতে হবে। তবে নির্বাচন কমিশন তা করছে না।
কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন ১৯ অক্টোবর ‘নির্বাচনী ব্যবস্থায় ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনের ব্যবহার বৃদ্ধি এবং টেকসই ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠায়। ইভিএমে ভোট করার লক্ষ্যে প্রায় দুই লাখ ইভিএম কেনা ও রক্ষণাবেক্ষণসহ আনুষঙ্গিক ব্যয়ের লক্ষ্যে প্রকল্পটি নেয়া হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশন কিছু ক্ষেত্রে ব্যয় কমানোসহ ফিজিবিলিটি স্টাডির কথা বলেছে পর্যবেক্ষণে। তবে কমিশনের কর্মকর্তারা বলছেন, ইসি আগে থেকেই ইভিএম ব্যবহার করছে। তাই একই যন্ত্রের ওপর ফিজিবিলিটি স্টাডির প্রয়োজন নেই। এক্ষেত্রে টেকনিক্যাল কমিটির সুপারিশ নিয়েই প্রস্তাবটি ফের পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হচ্ছে।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত বৈঠকে টেকনিক্যাল কমিটির সদস্যরা এসে সুপারিশসূচক স্বাক্ষরও করে গেছেন প্রকল্প প্রস্তাবে।
নিউজবাংলার পক্ষ থেকে বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কম্পিউটারবিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক এবং ইভিএম সংক্রান্ত কারিগরি কমিটির সদস্য ড. মুহাম্মদ মাহফুজুল ইসলামের কাছে। তিনি বলেন, ‘জরুরি কিছু নয়। একটি সিদ্ধান্তের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আগেও মিটিং হয়েছে। তবে তখন স্বাক্ষর নেয়া হয়নি। আজ স্বাক্ষর নেয়া হয়েছে।’
ইভিএম প্রকল্প পরিচালক কর্নেল রাকিবুল হাসান বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বলেন, ‘পরিকল্পনা কমিশন বেতন-ভাতা, পরিবহন ব্যয় ও মেইটেনেন্স সার্ভিস কতটা যথার্থ সেসব দেখতে বলেছে। প্রকল্প ব্যয় কিছু কমতে পারে। তবে খুব একটা বেশি কমবে না।
‘ফিজিবিলিটি স্টাডিকে তো আর রিপ্লেস করা যায় না। যেহেতু প্রকল্পের সামনে সময় কম আছে, তাই বর্তমান ইভিএমকেই আমরা রেপ্লিকেট করছি। সে জন্য টেকনিক্যাল কমিটির মতামত জরুরি।’
প্ল্যানিং কমিশন কিছু অবজারভেশনের জায়গা দিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তার মধ্যে অন্যতম ছিল টেকনিক্যাল কমিটির রিপোর্টটা সাপোর্টেট কি-না। আমরা যে টেকনিক্যাল স্পেসিফেকশন দিয়েছি সেটা। সেই কাজটা আজ করলাম। এখন গ্রীনবুকে এন্ট্রি হয়েছে। অর্থাৎ প্রকল্পটি এডিবিভুক্ত হয়ে গেছে। এরপর তা অর্থ মন্ত্রণালয়ে যাবে। তারা আবার যাচাই-বাছাই করে দেখবে।’
নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ এ বিষয়ে বলেন, ‘টেকনিক্যাল কমিটি মোটাদাগে যে সুপারিশ দিয়েছে তা হলো আগামী নির্বাচন করতে গেলে বেশকিছু ইভিএম লাগবে।
‘বর্তমানে যে পরিমাণ ইভিএম আছে তা দিয়ে কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দেড়শ’ আসনে ভোট করা যাবে না। সেজন্য আরও ইভিএম কিনতে হবে। রোববার টেকনিক্যাল কমিটির সবার স্বাক্ষরযুক্ত পর্যবেক্ষণ পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়ে দেয়া হবে।’
বাজেট কাটছাঁট প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা তো টেকনিক্যাল কমিটি। এখানে বাজেট কাটছাঁটের বিষয় নেই।’
টেকনিক্যাল কমিটি কী পরামর্শ দিয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সবকিছু এখানে বলা যাবে না।’