বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র ফারদিন নূর পরশের সঙ্গে চার বছর আগে ফেসবুকের মাধ্যমে পরিচয় হয় আমাতুল বুশরার। এরপর বিভিন্ন সময়ে বিতর্ক প্রতিযোগিতার বিষয়ে পরামর্শ নিতে ফারদিনের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন বুশরা। এভাবে তাদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বিষয়টি বুশরার পরিবারও জানত। তবে সম্পর্কটি প্রেমের ছিল না বলে দাবি বুশরার মা ইয়াসমিনের।
কিশোরগঞ্জ শহরের বয়লা এলাকায় নির্মাণাধীন একটি তিনতলা ভবনের দ্বিতীয় তলায় থাকে বুশরার পরিবার। তার বাবা মঞ্জুরুল ইসলাম ওরফে সবুজ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সার্জেন্ট। ২০১৭ সালে তিনি অবসর গ্রহণ করেন। মা ইয়াসমিন গৃহিণী। তিন বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে বুশরা সবার বড়। তারা এখানকার স্থায়ী বাসিন্দা।
বৃহস্পতিবার বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাড়িটিতে বিরাজ করছে সুনসান নীরবতা। ঘরে বসে আছেন বুশরার মা ইয়াসমিন। আর বুশরার বাবা ঢাকায় অবস্থান করছেন।
কিশোরগঞ্জ শহরের বয়লা এলাকায় নির্মীয়মাণ তিনতলা ভবনটির (হলুদ রং) দ্বিতীয় তলায় থাকে আমাতুল বুশরাদের পরিবার। ছবি: নিউজবাংলা
ইয়াসমিন জানান, কিশোরগঞ্জ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় ও ওয়ালীনেওয়াজ খান কলেজে পড়ার সময় থেকেই বিভিন্ন বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশ নিতেন বুশরা। সে জন্য যারা বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় বা পারদর্শী, তাদের সঙ্গে বুশরা নিজে থেকেই যোগাযোগ রাখতেন।
তিনি বলেন, ‘২০১৮ সালের শেষের দিকে ফেসবুকে একটি গ্রুপের মাধ্যমে বুশরার পরিচয় হয় ফারদিন নূর পরশের সঙ্গে। পরিচয়ের পর থেকে মেসেঞ্জার ও মোবাইলে কলে বিভিন্ন সময়ে একে অপরের সঙ্গে কথা বলতো। আর এভাবেই তাদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
‘বিষয়টি তখন থেকেই আমাকে বলেছিল বুশরা। এমনকি ফারদিনের সঙ্গে কথা বলে অনেক বিষয়ে সে ভালভাবে শিখতে পারছে বলেও জানাত।
বুশরার মা বলেন, ‘গত বছর ঢাকায় গিয়ে ইস্ট-ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর ফারদিনের সঙ্গে আমার মেয়ের প্রথম সাক্ষাৎ হয়। এইপর যতবার সাক্ষাৎ হয়েছে প্রতিবারই বাসায় ফিরে ফোনে আমাকে জানাতো সে৷ সবশেষ বিশ দিন আগে কিশোরগঞ্জে এসেছিল বুশরা৷ তখনও ফারদিনের অনেক প্রশংসা করেছে সে৷’
তিনি দাবি করেন, এমন একটি মধুর সম্পর্ক কোনোভাবেই হত্যাকাণ্ডে রূপ নিতে পারে না৷ তার মেয়ে এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত নন।
বুশরার চাচা আমিনুল ইসলাম সোহেল জানান, ফারদিনের সঙ্গে বুশরার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা তিনিও তাদের পরিবারের সদস্যদের মুখে শুনেছেন।
তিনি বলেন, ‘৮ নভেম্বর রাতে বুশরাকে ডিবি কার্যালয় থেকে ফোন করা হলে সে তার বাবাকে জানায়। খবর পেয়ে বুশরার বাবা ঢাকার উদ্দেশে রওনা করেন। এখনও তিনি ঢাকায় অবস্থান করছেন।’
সোহেল বলেন, গত বছর ইস্ট-ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে ইংরেজি বিষয়ে পড়ালেখা শুরু করে আমার ভাতিজি। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিবেটিং ক্লাবের হয়ে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। বর্তমানে রামপুরার একটি ছাত্রী হোস্টেলে সহপাঠী অন্য মেয়েদের সঙ্গে থাকে সে৷
‘ছোটবেলা থেকে মেয়েটা চোখের সামনে বড় হয়েছে। ওর চলাফেরাও ছিল অত্যন্ত সাবলীল। সে এমন হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা কোনোভাবেই বিশ্বাস করি না। আমরা চাই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হোক। প্রকৃত অপরাধীরা ধরা পড়ুক।’