রাজধানীর গুলশান, বনানী ও বারিধারা লেকের দূষণ রোধ করে মাছ চাষ করা হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম।
তিনি বলেছেন, ‘আমরা নিয়মিত লেক পরিষ্কার করছি, খাল ও ড্রেন পরিষ্কার করছি। কিন্তু বাসা-বাড়ির পয়ঃবর্জ্যের লাইন প্রতিনিয়ত খালের পানিকে দূষিত করছে। দূষণের ফলে লেকে মাছের চাষ করতে পারছি না, সেখানে মশার চাষ হচ্ছে। এটি আর হতে দেয়া যাবে না।’
মৎস্য অধিদপ্তর কর্তৃক আয়োজিত জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ-২০২২ এর সমাপ্তি উপলক্ষে রাজধানীর কুড়িল লেকে বৃহস্পতিবার সকালে মাছের অবমুক্তকরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে মেয়র আতিকুল ইসলাম কুড়িল লেকে মাছের পোনা অবমুক্ত করেন।
ঢাকা উত্তরের মেয়র বলেন, ‘শুধু কুড়িল লেকে নয়, পর্যায়ক্রমে সবগুলো লেকে মাছ চাষ হবে। গুলশান, বনানী, বারিধারা ও নিকেতন এলাকার লেকগুলোতে মাছ চাষ করার বিষয়ে মৎস্য অধিদপ্তরের সঙ্গে কথা বলেছি। অধিদপ্তর আমাকে জানিয়েছে, এসব লেকের পানি দূষিত। এগুলোতে মাছ মারা যাবে। অতএব লেকের পানি দূষণ থেকে রক্ষা করতে হবে। পয়ঃবর্জ্যের লাইন লেকে দেয়া যাবে না। বাসা-বাড়িতে অ্যাট সোর্সে পয়ঃবর্জ্য ব্যবস্থাপনা করতে হবে। আমাদের সিটি কর্পোরেশনের টিম বাড়ি বাড়ি গিয়ে পয়ঃবর্জ্যের লাইন পরিদর্শন করছে। পয়ঃবর্জ্যের লাইন ড্রেনে বা খালে পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এসময় মেয়র আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী একদিকে যেমন পদ্মাসেতু ও বঙ্গবন্ধু টানেলের মতো মেগা প্রকল্প নির্মাণ করছেন অন্যদিকে পশুপালন, মৎস্য চাষ ও কৃষির উন্নয়ন করে চলেছেন। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। সবাইকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মেনে পশুপালন, মৎস্য চাষ ও কৃষির প্রতি গুরুত্বারোপ করতে হবে। চাষযোগ্য জমিতে চাষ করতে হবে। জলাশয়, লেক ও পুকুরে মাছ চাষ করতে হবে।’
কুড়িল লেকে মেয়র আতিকুল ইসলাম মাছের পোনা অবমুক্ত করছেন
শহরের জলাধার ভরাট করে ভবন নির্মাণ করতে দেয়া হবে না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কুড়িল ফ্লাইওভার সংলগ্ন জলাধার ভরাট করে পাঁচ তারকা হোটেল নির্মাণ কাজ শুরু হলে আমি জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সেটি বন্ধ করে দেই। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে লাউতলা খাল উদ্ধার করে পানির প্রবাহ নিশ্চিত করেছি।
‘শহরে জলাধার, লেক ভরাট করে ভবন নির্মাণ করতে দেয়া হবে না। রাতের আঁধারে জলাধারে বালু ভরাট করে ভবন নির্মাণ করলে জনগণ সেটি মানবে না। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য জলাধার ও লেকগুলোকে বাঁচাতে হবে।’
মেয়র আরও বলেন, ‘শহরকে বাঁচাতে হলে সবাইকে সচেতন হতে হবে। শহরকে, দেশকে মনে-প্রাণে ভালোবাসতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে নভেম্বর মাসেও ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েছে। ড্রেন বা নর্দমার পানিতে কিন্তু এডিস মশার জন্ম হয় না। জমে থাকা স্বচ্ছ পানিতেই এডিসের লার্ভা জন্মায়। নিজেদের বাসাবাড়িতে ফুলের টব, অব্যবহৃত টায়ার, ডাবের খোসা, চিপসের খোলা প্যাকেট, বিভিন্ন ধরনের খোলা পাত্র, ছাদ কিংবা অন্য কোথাও যেন পানি জমে না থাকে সেদিকে সতর্ক থাকিতে হবে।’
কুড়িল মোড় এলাকায় স্থান নির্বাচন করে একটি কমিউনিট সেন্টার ও খেলার মাঠ নির্মাণ করা হবে বলেও জানান ঢাকা উত্তরের মেয়র।
ঢাকা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বি. এম. মোস্তফা কামালের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. ইসহাক মিয়া, সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর হাছিনা বারী চৌধুরী এবং আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জুলকার নায়নসহ অন্যরা।