বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলায় উচ্চ ফলনশীল জাতের আখ চাষ করে সফল হয়েছে প্রায় এক হাজার ৪০০ কৃষক। উপজেলার চারটি গ্রামে উৎপাদিত হয়েছে প্রায় তিন হাজার ৫০০ মেট্রিক টন আখ, যার বাজারমূল্য ২৫ কোটি টাকার বেশি। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি হচ্ছে এগুলো।
উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নে গিয়ে দেখা যায়, চারদিকে সবুজের সমারোহ। বিষখালী, ফুলতলা, দড়িচর মালিপটন ও কিসমত মালিপটন গ্রামে প্রায় ৮০ হেক্টর জমিতে চাষ হচ্ছে আখ। অল্প খরচে অধিক লাভ ও ঝুঁকি কম থাকায় অন্য কৃষকরাও আগ্রহী হচ্ছেন আখ চাষে। মধ্যস্থতাকারী ছাড়াই ব্যবসায়ীরা সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে আখ সংগ্রহ করেন বলে ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন চাষিরা।
বাগেরহাট কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, কচুয়া উপজেলার গোপালপুর, কচুয়া সদর, রাড়ীপাড়া, বাধালসহ কয়েকটি ইউনিয়নে এবার ৯৩ হেক্টর জমিতে বিএসআরই-৪১ ও ৪২ জাতের আখের চাষ হয়েছে।
সরকারি হিসাবের বাইরে কিছু জমিতে স্থানীয় তুরফিন ও গ্যান্ডারি জাতের আখের চাষ হয়েছে। এখান থেকে চলতি বছর অন্তত ২৭ কোটি ৫৬ লাখ ৫৫ হাজার টাকার আখ বিক্রি হবে বলে দাবি কৃষি বিভাগের।
ইতোমধ্যে অনেক চাষি তাদের আখ বিক্রিও করেছেন। উপজেলার সব থেকে বেশি আখের চাষ হয় গোপালপুর ইউনিয়নে। কৃষি বিভাগের সহায়তা ও নিজস্ব উদ্যোগে অন্তত এক হাজার ৪০০ চাষি আখ চাষ করেছেন। নিয়মিত ক্ষেত পরিদর্শন করে আখ চাষিদের পরামর্শ দিচ্ছেন কৃষি কর্মকর্তারা।
দরিচর মালিপটন এলাকার জামাল শেখ নামের এক চাষি বলেন, ‘নিজের ৬০ শতক জমিতে এবার আখ লাগিয়েছি। সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে ৪০ হাজার টাকা। এরই মধ্যে বিক্রি করেছি প্রায় ৭০ হাজার টাকার আখ। এখনও ৪০ হাজার টাকার আখ ক্ষেতে আছে।’
ফুলতলা গ্রামের আখ চাষি সামছুর রহমান বলেন, ‘আখ চাষ খুব সহজ। ৫০ বছর ধরে আখ চাষের সঙ্গে জড়িত আমি। চারা দেয়া থেকে শুরু করে আখ বিক্রি পর্যন্ত ৮ থেকে ১০ মাস সময় লাগে। প্রতি পিস আখ ১০ টাকা থেকে শুরু করে ৬০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয় খুচরো বাজারে।
‘আখের সঙ্গে অন্যান্য সাথি ফসল যেমন লাল শাক, রসুন, পেঁয়াজ, মুলা, ডাঁটা, মরিচ, শসা ইত্যাদি চাষ করা যায়। সাথি ফসল থেকেই আমাদের খরচের টাকা উঠে আসে। আখ বিক্রির পুরো টাকাটা লাভ হয়।’
আখ ব্যবসায়ী মোতালেব মোল্লা বলেন, ‘প্রতি সিজনে চাষিদের কাছ থেকে প্রায় ৫০ লাখ টাকার আখ কিনে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করি। তবে ক্ষেত থেকে আখ কিনতে পারলে লাভ একটু বেশি হয়।’
গোপালপুর ইউনিয়নে কর্মরত কচুয়া কৃষি অফিসের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সোহাগ দাস বলেন, ‘আমরা চাষিদের সব ধরনের কারিগরি সহায়তা দেই। আখের রোগবালাই কম বলে কীটনাশক ও রাসায়নিক সার খুব একটা দিতে হয় না। কৃষকরা যেন আখ ক্ষেতে অতিরিক্ত সার ও কীটনাশক ব্যবহার না করেন, সে জন্য তাদের সচেতন করি।’