বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

নাটোরের সমতল জমিতে কমলা চাষে অপার সম্ভাবনা

  •    
  • ১০ নভেম্বর, ২০২২ ১১:২৩

কমলা চাষি আব্দুল মতিন ৭৫টি বেবি জাতের কমলাগাছ রোপণ করেছিলেন। আড়াই বছরের মাথায় প্রতিটি গাছে প্রত্যাশার চেয়ে বেশি কমলা ধরেছে। নাটোরের মাটিতে এত সুন্দর সুমিষ্ট কমলা হবে তা তিনি কল্পনাই করেননি।

সমতল ভূমিতে পাহাড়ি কমলা চাষ করে সফলতার মুখ দেখেছেন নাটোরের কয়েকজন কৃষি উদ্যোক্তা। প্রথমবারের মতো তাদের সফলতায় এই অঞ্চলে কমলা চাষে অপার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে।

নানা বাধা পেরিয়ে এক প্রকার চ্যালেঞ্জ নিয়েই কমলাগাছ রোপণ করেছিলেন কয়েকজন কৃষি উদ্যোগক্তা। প্রায় আড়াই থেকে তিন বছরের মাথায় থোকা থোকা কমলা ধরেছে গাছে। প্রত্যাশার চেয়ে ফলন বেশি হওয়ায় কৃষকদের পাশাপাশি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাও উত্তরাঞ্চলে কমলা চাষে অপার সম্ভাবনা দেখেছেন ।

সরেজমিনে নাটোর সদর উপজেলার গাজীপুর বিল এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, প্রায় আড়াই বিঘা জমিজুড়ে শোভা পাচ্ছে ২০০টি কমলাগাছ। সেই গাছগুলোতে থোকায় থোকায় ঝুলছে চায়না জাতের কমলা। স্থানীয়ভাবে যেগুলো চায়না মোমপালিশ কমলা নামে পরিচিত। ২০১৯ সালে পারিবারিক নানা বাধা পেরিয়ে চুয়াডাঙ্গা থেকে গাছগুলো সংগ্রহ করেন কৃষি উদ্যোক্তা জাকির আহমেদ উজ্জল। শিক্ষকতার পাশাপাশি কমলা চাষি হিসেবেও সফল হয়েছেন তিনি।

কৃষি উদ্যোক্তা জাকির আহমেদ উজ্জল জানান, তিনি হয়বতপুর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। তার দাদা কৃষি কাজ করলেও তার বাপ-চাচারা কেউ কৃষিকাজ করেননি। হঠাৎ করেই তার ব্যতিক্রমধর্মী চাষাবাদের ইচ্ছা জাগে।

তিনি সিদ্ধান্ত নেন কমলার বাগান করার। সিদ্ধান্তের কথা পরিবারের সদস্যদের জানালে কেউই একমত হননি। কারণ নতুন এই ফল চাষে কতটুকু সফলতা আসবে তা নিয়ে সবাই দ্বিধান্বিত ছিলেন।

কমলা বাগানে এসেছে শিশুরা। ছবি: নিউজবাংলা

তিনি এক ধরনের চ্যালেঞ্জ নিয়েই কমলা চাষ শুরু করেন। দুই বছরের মাথায় অল্প ফল ধরলেও এ বছর পুরোপুরি সফলতা আসে। এই উত্তরাঞ্চলের সমতল মাটিতে যে পাহাড়ি ফল কমলা হবে তা নিয়ে সংশয় কেটে গেছে।

প্রতিটি গাছে প্রত্যাশার চেয়েও কয়েকগুণ বেশি ফল এসেছে। একেকটি গাছ দেখলে মনপ্রাণ জুড়িয়ে যায়। যখন দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন কমলা বাগান দেখতে আসে তখন নিজেকে সফল কৃষক মনে হয়।

কমলা চাষ সারা দেশের মাটিতে ছড়িয়ে দিতে পারলে কৃষিক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনার সৃষ্টি করবে। কমলার স্বাদ মানুষ এ দেশ থেকেই পাবে।

কমলা চাষে খরচ অত্যন্ত কম। তাই এটা চাষে বেকারদেরও কর্মসংস্থান হবে।

একই উপজেলার ইব্রাহীমপুর গ্রামের আরেক চাষিও চার বিঘা জমিতে দার্জিলিং এবং ম্যান্ডারিন জাতের কমলার চাষ করে সফলতা পেয়েছেন। আড়াই বছরের মাথায় তার বাগানেও দেখা মিলছে প্রচুর চাহিদাসম্পন্ন সুমিষ্ট এই ফল।

তাদের সফলতা দেখে কমলা চাষে এগিয়ে এসেছে অন্যরাও। কমলা চাষি আব্দুল মতিন জানান, তিনি ইউটিউব দেখে কমলা চাষের কলাকৌশল সম্পর্কে জানতে পারেন। এরপর ভারতের দার্জিলিং গিয়ে কমলা বাগান দেখেন। সেখান থেকে দার্জিলিং জাতের ৩০০ এবং ম্যান্ডারিন জাতের ২৫টি চারা এনে রোপণ করেন।

এর আগে তিনি ৭৫টি বেবি জাতের কমলাগাছ রোপণ করেছিলেন। আড়াই বছরের মাথায় প্রতিটি গাছে প্রত্যাশার চেয়ে বেশি কমলা ধরেছে। নাটোরের মাটিতে এত সুন্দর সুমিষ্ট কমলা হবে তা তিনি কল্পনাই করেননি। প্রতিদিন তার বাগান দেখতে প্রচুর লোকজনের আনাগোনায় মুগ্ধ তিনি।

প্রতিটি গাছে ৩০ থেকে ৪০ কেজি কমলা এসেছে বলে জানান তিনি, যা বাগান থেকেই ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

ইতোমধ্যে বাগান থেকেই ১৫ মণ কমলা বিক্রি করেছেন। কেউ যদি কমলা চাষে আগ্রহী হয় তাহলে তিনি পরামর্শ দিয়ে সার্বিকভাবে সহায়তা করবেন বলে জানান তিনি।

একই গ্রামের নতুন উদ্যোক্তা জুয়েল রানা জানান, প্রথমে বাধা দিলেও কমলার উৎপাদন দেখে খুশি তাদের পরিবারের সদস্যরা। উৎপাদন খরচ কম ও অনুকূল আবহাওয়া থাকায় নাটোরসহ উত্তরাঞ্চলের মাটিতে কমলা চাষের অপার সম্ভাবনা দেখছেন। সেই সঙ্গে সমতল মাটিতে পাহাড়ি এই ফল চাষে খুশি তারা।

নাটোরের হালসার ড্রিম অ্যাগ্রো ফার্ম অ্যান্ড নার্সারির মালিক আজিজুর রহমান জানান, তিনি ৬ জাতের ১০০টি কমলার চারা লাগিয়েছিলেন। এ বছর ফলন ভালো হয়েছে। কমলা চাষে খরচ অত্যন্ত কম। জৈব সার প্রয়োগ করেই ভালো ফসল পাওয়া যায়। পাতায় পোকার আক্রমণ হলে সামান্য পরিমাণ কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়। চায়না জাতের কমলা বাণিজ্যিকভাবে চাষ করাটাই উত্তম হবে।

নাটোরের চৌরি গ্রাম থেকে সদরের গাজীপুর এলাকায় কমলা বাগান দেখতে আসা সোহেল রানা জানান, তিনি কমলা বাগান দেখতে এসে অত্যন্ত মুগ্ধ হয়েছেন। তার ধারণাই ছিল না একেকটি গাছে এত পরিমাণ কমলা ধরে। প্রথমবারের মতো তিনি এই ফলের বাগান দেখলেন। তিনিও কমলা বাগান করবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

থোকায় থোকায় ঝুলছে পাকা কমলা। ছবি: নিউজবাংলা

পাশের উপজেলা বাগাতিপাড়ার বাসিন্দা মামুন হোসেন বলেন, ‌'নাটোরের মাটিতে কমলা ধরেছে। কমলা খেয়ে দেখলাম, অত্যন্ত সুমিষ্ট। আমাদের এই এলাকায় যে এত সুন্দর কমলা হবে তা কেউই ভাবতে পারেনি।

'সবাই এই চাষ নিয়ে চিন্তায় ছিল। আদৌ পাহাড়ি ফল সমতল ভূমিতে হবে কি না। এই উত্তরাঞ্চলে কৃষি ক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। সরকারিভাবে পৃষ্টপোষকতা পেলে অন্য কৃষকরা কমলা চাষে এগিয়ে আসবেন।'

সমতল ভূমিতে ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ কমলা চাষে অপার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে উল্লেখ করে নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. আব্দুল ওয়াদুদ জানান, পাহাড়ি ফল কমলা নাটোর জেলায় চাষাবাদ শুরু হয়েছে। বেশ কয়েকজন কৃষক এই ফল চাষ করে লাভবান হচ্ছেন। তাদের গাছে প্রচুর কমলা ধরেছে। লাভজনক হওয়ায় কমলা চাষে অন্যরাও আগ্রহী হয়ে উঠছেন।

সঠিক তদারকির মাধ্যমে এই ফল চাষে সম্ভাবনার দুয়ার উন্মোচনের সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। পরিকল্পিত উদ্যোগে চাষাবাদ করা গেলে কমলাও হতে পারে সমতলের চাষিদের অন্যতম লাভজনক একটি ফল। কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা কমলা চাষিদের নানা পরামর্শসহ সার্বিকভাবে সহযোগিতা করে থাকে।

এ বিভাগের আরো খবর