কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশনের আট হাজার সাতশ’ কোটি টাকার ইভিএমের প্রস্তাবিত প্রকল্পের বিষয়ে ‘পর্যবেক্ষণ’ দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। সে অনুযায়ী খরচ কমিয়ে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) সংশোধন করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
কমিশন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পরিকল্পনা কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী ডিপিপি সংশোধনের জন্য বৃহস্পতিবার টেকনিক্যাল কমিটির সঙ্গে তারা বৈঠক করবেন। এরপর বোরবার সংশোধিত প্রস্তাব পাঠানো হবে।
নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ নিউজবাংলাকে বুধবার বলেন, 'আমাদের ফিজিবিলিটি স্টাডি হয় নাই। ফিজিবিলিটির বিকল্প কী করতে হবে সেটা তারা (পরিকল্পনা কমিশন) বলে দিয়েছে। এ বিষয়ে একটা টেকনিক্যাল কমিটি আছে। সেই কমিটিতে বুয়েট ও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা রয়েছেন। এ বিষয়ে কালকের (বৃহস্পতিবার) মিটিং হবে।’
সংশোধিত প্রস্তাব রোববারে অবশ্যই পাঠানো হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কালকে তো মিটিং, এরপরে শুক্র-শনিবার।'
কী ধরনের সংশোধন করতে বলা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কারেকশন কিছু না। একটা প্রকল্প হয়ে গেলে প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি লাগে। সম্পূর্ণ প্রকল্পেই সম্মতি দিয়েছে। খাত কমেনি৷ সবগুলো কম্পোন্যান্ট রয়ে গেছে। যোগ বিয়োগে কিছু (ব্যয়) কমছে।’
কারিগরি কমিটির সব সদস্যের সইসহ সংশোধিত প্রকল্প প্রস্তাবটি পাঠানো হবে বলে তিনি জানান।
জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) গত মঙ্গলবারের সভা শেষে পরিকল্পনা সচিব মো. মামুন-আল-রশীদ সাংবাদিকদের বলেন, 'ইভিএম প্রকল্পটি নিয়ে আমাদের কিছু অবজারভেশন আছে। সে অবজারভেশনসহ আমরা সুপারিশ করেছি। সে সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে ওনারা নতুন ডিডিপি করে পাঠাবেন। প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা পরে হবে।'
এর আগে গত ১৯ অক্টোবর ‘নির্বাচনি ব্যবস্থায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের ব্যবহার বৃদ্ধি এবং টেকসই ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠায় ইসি।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে দেড় শ আসনে ইভিএমে ভোট করার লক্ষ্যে প্রায় দুই লাখ ইভিএম কেনা ও রক্ষণাবেক্ষণসহ আনুষঙ্গিক ব্যয়-সংক্রান্ত প্রকল্পটি নেয়া হয়েছে।
ইভিএম প্রকল্পের অগ্রগতি জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা নিউজবাংলাকে বলেন, 'আমি যতটুকু শুনেছি ওটা তো গিয়েছিল পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে। ওখান থেকে আবার কিছু গাইডলাইন দিয়ে ওটা ফেরত পাঠানো হয়েছে। মানে বাতিলও হয় নাই, আবার মঞ্জুরও হয় নাই। গাইডলাইন একটা দেয়া হয়েছে।
‘তাতে আমি যতটুকু বুঝেছি, ব্যয়টা একটু মাত্রার মধ্যে এনে দিতে বলেছে এবং কোথায় কোথায় ব্যয়টা একটু সংকোচ হবে সেটার একটা গাইডলাইন দিয়েছে। তবে আমি সেটি দেখিনি।’
তিনি বলেন, ‘যেহেতু ওনারা গাইডলাইন দিয়েছেন সেই গাইডলাইনের মধ্যে আশা করি পাস হয়ে আসবে।’
প্রকল্প অনুমোদনে সময় লাগার কারণে সমস্যা হবে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় সময়ক্ষেপণ হবে না। গাইডলাইন যখন আমাদের দপ্তরে যখন এসে গেছে আমরা তো দেরি করব না। আবার আমরা যখন এটা পাঠাব ওনারা গুরুত্ব দিয়ে করবেন। কারণ, এটা নির্বাচনের সাথে জড়িত একটা বিষয়। নির্বাচন শেষ হয়ে গেলে ওটা দিয়ে লাভটা কী।’
ডিসেম্বর অথবা জানুয়ারি মধ্যে প্রকল্প অনুমোদন পেতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
ইভিএম প্রকল্প পরিচালক কর্নেল রাকিবুল হাসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ফিজিবিলিটি টেস্ট আমরা করিনি। ব্যয় সংকোচন বলতে যা বোঝায় সে ধরনের কিছু তারা বলে নাই। কিছু ক্ষেত্রে হয়তো আমরা একটু বেশি ধরে রেখেছি, কেন ধরে রেখেছি সেটা আমাদের জানা ছিল না। যেমন গাড়ির সংরক্ষণ ব্যয় কমানো। আমরাও দেখছি দে আর ভেরি লজিক্যাল।’
মধ্য জানুয়ারির মধ্যে কার্যাদেশ দেয়া যাবে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সবকিছু তো নিয়ম অনুযায়ী চলছে। ভালোভাবে হচ্ছে। আমাদের তো কেউ বলেনি এই প্রকল্প হবে না।’
ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি না করার কারণ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি কে করবে কে জানে? হু নোজ! ইভিএমের ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি করার মতো কোনো প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে নেই। ওনারা ইকোনমিক ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি করতে পারেন। ওয়ার হাউজের ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি করতে পারেন।’