সিঙ্গাপুরের সঙ্গে ১৭ কোটি মানুষের দেশ বাংলাদেশের তুলনা চলে না বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।
বুধবার জাতীয় জাদুঘরে কবি সুফিয়া কামাল অডিটরিয়ামে ’৭১-এ গণহত্যার জাতিসংঘের স্বীকৃতি চাই’ আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কথা বলার সময় সিঙ্গাপুর বলি, মালয়েশিয়া বলি আরও অনেক দেশের কথা বলি। সব দেশের সাফল্যই নিশ্চয়ই খুব বড় বিষয়। সেই জাতির জন্য গৌরবজনক।
‘আমরা বাংলাদেশের মানুষ হিসেবে তাদের ভালোবাসা-অভিনন্দন সব দিচ্ছি। কিন্তু এই যে তুলনাগুলো, সেটা কী ঠিক? বাংলাদেশের কোনো কাজের সঙ্গে ওদের কাজের তুলনা চলে না।’
তিনি বলেন, ‘আমদের বিশ্বাসকে, স্বপ্নকে সত্যি করে দিয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার বেআইনি আইন করে বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। ২১ বছরের যত জঞ্জাল তা সরাতে হয়েছে। এখনও হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী একদিকে অতীতের জঞ্জাল সরাচ্ছেন আর একদিকে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিচ্ছেন।’
মন্ত্রী বলনে, ‘এ দেশে ৪০ বছর পরে হলেও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে। এই বাংলাদেশে আর কেউ তা করতে পারেনি, শেখ হাসিনা পেরেছেন। আমাদের অনেক ইচ্ছা ছিল, কিন্তু এটি হবে সে কথা বিশ্বাস করতেও ভয় পেয়েছি।’
দীপু মনি বলেন, ‘৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার প্রকাশ্য ঘোষণা ছাড়া অলিখিত বক্তব্যে সবই বলে দিয়েছিলেন। এই বক্তব্যের মতো পৃথিবীতে আর কোনো বক্তব্য এত বেশি বার শোনা হয়নি। এ দেশকে নব্য পাকিস্তান বানানোর চেষ্টা করা হয়েছে, জয় বাংলা নিষিদ্ধ করার চেষ্টা করে হয়েছে, বঙ্গবন্ধুর ভাষণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পৃথিবীতে এত দাম দিয়ে আর কোনো দেশ স্বাধীন হয়নি।
‘রুয়ান্ডাতে তিন মাসে ১০ লাখ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, আর বাংলাদেশে ৯ মাসে ৩০ লাখ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার পরও তারা কেন এ দেশে রাজনীতিতে থাকবে? স্বাধীনতার পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি কেন এ দেশে থাকবে? স্বাধীন দেশের এত বছর পরও ক্ষমতায় আছে স্বাধীনতার পক্ষ শক্তি আর বিরোধী দলে আছে স্বাধীনতার বিরোধী শক্তি। পরপর তিন মেয়াদে স্বাধীনতার পক্ষ শক্তি আছে।
‘এ দেশে কেউ যা করতে পারেননি, শেখ হাসিনা পেরেছেন। অনেকে চেয়েছিল কিন্তু সেই বিশ্বাস, স্বপ্নকে সত্যি করে করেছেন শেখ হাসিনা। তিনি স্বাধীনতার চার দশক পরে হলেও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে পেরেছেন।’
মন্ত্রী বলেন, ‘পাকিস্তানের কাছে দাবি করেছি আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাইতে হবে। ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। যে দাবিগুলো করা হয়েছে যৌক্তিক। এই দাবি বারবার করে আসছি। পাকিস্তানের ভেতরেও অনেক কন্ঠস্বর আছে যারা এই দাবির পক্ষে। পৃথিবীতে বহুদেশ, গণহত্যার জন্যে ক্ষমা চেয়েছে। পাকিস্তানকে সত্যকে মেনে নেয়া উচিত, ক্ষমা চাওয়া উচিত।’
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ স্বাধীনতা ফাউন্ডেশনের আহ্বায়ক বিচারপতি মোহাম্মদ মমতাজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘পাকিস্তানিরা ৫২-তে মুখের ভাষা কেড়ে নিতে চেয়েছিল, বিহারীদের দিয়ে বাঙালিদেরকে ৫৪ সালে হত্যাযজ্ঞ চালায়, ৬৯ সালে সার্জেন্ট জহুরুল হককে হত্যা করা হয়েছে। একাত্তরে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। ১৬ ডিসেম্বর যুদ্ধ করতে করতে ঢাকা এসে দেখি সাধারণ মানুষের লাশ আর লাশ, চারিদিকে কান্নার রোল। আলবদর, আল-শামসদের সংখ্যা বাড়তে বাড়তে এখন ৪ কোটিতে পৌঁছেছে। এদের বিরুদ্ধে লড়াই চালু রাখতে হবে।’
আলোচনা সভায় ‘১৯৭১-এ গণহত্যার জাতিসংঘের স্বীকৃতি চাই’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ স্বাধীনতা ফাউন্ডেশনের যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক মো. শহীদুল্লাহ সিকদার।
শহীদুল্লাহ্ শিকদার বলেন, ‘যারা নিজেদের একই দেশের নাগরিক মনে করতো তারাই ২৫ মার্চে বাঙালি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী, সেক্যুলার, উদারমনা, হিন্দু জনগোষ্ঠীর ওপর গণহত্যা চালায়।’
পশ্চিমবঙ্গের ইংরেজি পত্রিকা দ্য ওয়াল-এর নির্বাহী সম্পাদক অমল সরকার বলেন, ‘দেশে গণহত্যার স্বীকৃতি দিতে হলে যারা স্বাধীনতার বিরোধীশক্তি; সে যত দুর্বল হোক না কেন তাকে আগে নির্মূল করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা জাগ্রত থাকলে তবেই তা সম্ভব।’
এ সময় বাংলাদেশের স্বাধীনতা, ভারতের স্বাধীনতা, পাকিস্তানের স্বাধীনতা ও দেশ ভাগের বিস্তারিত নিয়ে অমল সরকারের বই ‘আমার দেশ আমার দ্যাশ’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।