বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

জঙ্গি দলে পাঠানো মা এবার ছেলেকে ফিরে পেতে ব্যাকুল

  •    
  • ৯ নভেম্বর, ২০২২ ১৭:৩৮

সুলতানা এমিলি বলেন, ‘চরম ভুল একটি পথকে সঠিক মনে করে আমি ও আমার সন্তান ওই পথে ছিলাম। এ কারণে আমার বুক খালি করে সন্তান আজ বান্দরবানে পাহাড়ে পড়ে আছে। জানি না সে বেঁচে আছে কি না, আর কখনও ওকে দেখতে পাব কি না।’

২০২১ সালে নিজ সন্তানের গৃহশিক্ষকের মাধ্যমে সন্তানসহ জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন আম্বিয়া সুলতানা এমিলি। স্নাতকোত্তর শেষে দুটি এয়ারলাইনসে চাকরিও করেছেন তিনি। ধর্মজ্ঞান না থাকায় সহজেই ওই গৃহশিক্ষকের কথায় প্রলুব্ধ হয়ে সন্তানকে যেতে দিয়েছেন কথিত হিজরতের উদ্দেশে। এমনকি পরিবারের কাছ থেকে এসব তথ্য গোপন রেখেছেন দীর্ঘদিন ধরে।

বিষয়টি জানতে পেরে সুলতানা এমিলিকে তার ভুলটা ধরিয়ে দেয় র‍্যাব। বোধোদয় হওয়ার পর এখন তিনি সন্তানকে ফেরাতে উদগ্রীব। এ জন্য প্রধানমন্ত্রী ও প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছেন এই মা।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে বুধবার দুপুরে র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন সুলতানা এমিলি।

তিনি স্বীকার করেছেন, একাডেমিক শিক্ষিত হলেও কোরআন-হাদিসে দক্ষতা কম থাকায় ব্রেইনওয়াশের শিকার হয়েছেন।

সাংবাদিকদের সুলতানা এমিলি বলেন, ‘আমি মাস্টার্স কমপ্লিট করে ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ইউনাইটেড এয়ারওয়েজে ও পরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসে কেবিন ক্রু হিসেবে কাজ করেছি। অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি যে চরম ভুল একটি পথকে সঠিক মনে করে আমি ও আমার সন্তান ওই পথে ছিলাম। আর এ কারণে আমার বুক খালি করে সন্তান আজ বান্দরবানে পাহাড়ে অর্ধমৃত অবস্থায় আছে। জানি না সে বেঁচে আছে কি না, আর কখনও ওকে দেখতে পাব কি না।

‘মা হিসেবে এটা আমার চরম ব্যর্থতা। কোরআন-হাদিস সম্পর্কে দক্ষতা কম থাকায় বুঝতে পারিনি কোনটা সঠিক আর কোনটা ভুল। আমাকে ও আমার সন্তানকে মিসগাইড করা হয়েছে। জঙ্গিদের গ্রুপ, তাদের সংগঠন, কার্যক্রম সবকিছু আমার কাছে গোপন করা হয়েছিল। কোরআন-হাদিসের রেফারেন্স দিয়ে আমার কাছে ভুলগুলোকে সঠিক হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়েছিল।’

সন্তানের জন্য ব্যাকুল এই মা বলেন, ‘রিয়াসাদ রাইয়্যান আবু বক্কর আমার একমাত্র পুত্র সন্তান। আমার কলিজার টুকরা। সে খুব মেধাবী ও বিনয়ী ছিল। আর এমন মেধাবী ছাত্রদেরই ওরা চুজ করছে জীবন ধ্বংস করে বিপথে নেয়ার জন্য। এর শিকার আজ আমি হয়েছি।

‘এগুলো যে ভুল এ সম্পর্কে আমার আগে জানা ছিল না। ৫ নভেম্বর র‍্যাব আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে। তারা নানা আলোচনা ও ধর্মীয় রেফারেন্স দিয়ে আমাকে বোঝায় যে আমি যা করেছি ভুল করেছি। আমি এখন নিজের ভুল বুঝতে পেরেছি। জঙ্গিদের কর্মকাণ্ড, তারা বাচ্চাদের নিয়ে গিয়ে কী কী করাচ্ছে, দেশের বিরুদ্ধে কী ধরনের ষড়যন্ত্র করছে- এসব কিছু র‍্যাব সদস্যরা আমাকে বুঝিয়ে বলেছেন।’

সাংবাদিকদের সুলতানা এমিলি বলেন, ‘একজন মা কখনও চাইবেন না তার একমাত্র সন্তান বিপথে যাক। আমার সন্তান বাসা ছেড়েছে ২০২২ সালের ১৫ মার্চ। তার শিক্ষক আল আমিন দেশের বাইরে থাকতেন। তিনি ২০২১ সালে দেশে এসে আবু বক্করকে পড়ানো শুরু করেন। আল আমিন আমাদের এতটাই আস্থা অর্জন করেছিলেন যে তার সব কথা আমরা সরলমনে বিশ্বাস করতাম। আমরা পরিবারের সবাই তাকে খুব পছন্দ করতাম, ভালো জানতাম।

‘এই গৃহশিক্ষক আমাকে ও আমার ছেলেকে মোটিভেটেড করে ফেলেন। তিনি কোরআন-হাদিসের রেফারেন্স দিয়ে আমাদের বুঝিয়েছেন গাজওয়াতুল হিন্দ সম্পর্কে। তার কথা ছিল যে ইসলামবিরোধী কোনো কর্মকাণ্ড হলে এখন থেকেই প্রস্তুত থাকতে হবে।

‘আমি প্রথম দিকে সন্তানকে বলতাম যে তুমি অনেক ছোট। এ বিষয়গুলোর সঙ্গে জড়িও না, তুমি পড়াশোনা করো। কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যেই আল আমিন আমার সন্তানকে তার আয়ত্তে নিয়ে নেয়। প্রথমে আমি আমার সন্তানকে বাধা দিলেও একপর্যায়ে সন্তানের জেদের কাছে হেরে যাই। পরে আমার সন্তানই আমাকে এসব বিষয় বুঝিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আমাকে জানানো হয়েছিল যে আমার সন্তান প্রশিক্ষণের জন্য যাবে এবং সেটা অনেক ভালো প্রশিক্ষণ। এতে সে অনেক কিছুই জানবে। সে আমাদের সঙ্গে নিয়মিত দেখা করতে পারবে, যোগাযোগ করতে পারবে। প্রয়োজনে আমরাও তার সঙ্গে দেখা করতে পারব।

‘কিন্তু এখন তারা যে কর্মকাণ্ড করছে সেসব আমার কাছে গোপন করা হয়েছিল। আমি এর কিছুই জানতাম না। ছেলের সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ হয়নি আমার। ও বেঁচে আছে না মরে গেছে কিছুই জানি না।’

‘আমি দেশবাসীর উদ্দেশে বলতে চাই আমি যে ভুল করেছি, কোনো বাবা-মা যেন এই ভুল না করেন। আমি সমাজ, পরিবার কোথাও মাথা তুলে তাকাতে পারছি না। নিজেকে কোনোভাবেই ক্ষমা করতে পারছি না।’

‘সন্তানের উদ্দেশে বলতে চাই- আব্বু, যদি তুমি আমার মেসেজ পেয়ে থাকো, তোমাকে বলছি যে তুমি চরম একটা ভুল পথে হাঁটছ। তুমি তোমার মাকে বিশ্বাস করতে পারো। কখনো এই মাকে যদি ভালোবেসে থাকো তাহলে ফিরে এসো। কখনোই দেশের জন্য কোনো হুঁমকির কাজ করবে না। কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা, নৃশংসতা, কোনো অন্যায় কাজে শামিল হবে না।

‘আমি তোমাকে রিকোয়েস্ট করছি, আত্মসমর্পণ করো। প্রশাসন তোমাদের প্রতি অনেক সদয়, যেটা তোমরা জানো না এখনও। তোমাদের মতো অল্পবয়সীদের ব্রেইন ওয়াশ করা হয়েছে, তোমরা তা বুঝতে পারছো না। তোমরা যদি আত্মসমর্পণ করো তাহলে তোমাদের ক্ষমা করে দেয়া হবে। তোমাদের সুযোগ দেয়া হবে।’

‘আব্বু, তোমার বাবা অনেক অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তার যদি কিছু হয়ে যায় এই ভয়ে সব গোপন করেছিলাম। তোমার নানা-নানি, চাচা-ফুফু সবাই তোমার জন্য পাগলপ্রায়। তুমি তোমার বাবা-মাকে এভাবে অপমানিত করো না, দেশের ক্ষতি করো না। তুমি এ দেশের নাগরিক, এ দেশে জন্ম নিয়েছ, সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেছ।’

সবশেষে সুলতানা এমিলি বলেন, ‘আমি একজন মা হিসেবে সব বাবা-মাকে অনুরোধ করছি সন্তানকে সময় দেবেন। ভালোবাসবেন, বুকে জড়িয়ে রাখবেন। প্রতিদিন তার মনের কথা শুনবেন। তাকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করবেন না, খারাপ আচরণ করবেন না। সে ছিটকে যেতে পারে যেকোনো সময়। তখন আমার মতো কেঁদে বুক ভাসাতে হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর