বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

জঙ্গিবাদ থেকে ফেরা নারীর তথ্যে তিন জঙ্গি গ্রেপ্তার

  •    
  • ৯ নভেম্বর, ২০২২ ১৫:০৪

র‌্যাব জানায়, জঙ্গিবাদ থেকে ফিরে আসা আম্বিয়া সুলতানা এমিলি স্বনামধন্য এয়ারলাইনসে চাকরি করতেন। আল-আমিন নামের এক শিক্ষক তার ছেলেকে পড়াতেন। সেই আল-আমিনের মাধ্যমেই তিনি ও তার ছেলে আবু বক্কর ২০২১ সালের প্রথম দিকে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ায় যোগ দেন। পরবর্তী সময়ে আবু বক্কর ২০২২ সালের মার্চে আল আমিনের নির্দেশনায় প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে হিজরতের নামে বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফিরে আসেননি।

জঙ্গিবাদে দীক্ষিত হয়ে সে পথ থেকে ফিরে আসা এক নারীর তথ্যের ভিত্তিতে নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার তিন সদস্যকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে র‌্যাব।

নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকা থেকে মঙ্গলবার রাতে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

ওই তিনজন হলেন আবদুল হাদি সুমন ওরফে জন, আবু সাঈদ ওরফে শের মোহাম্মদ এবং রনি মিয়া। তাদের দুজন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার অন্যতম অর্থ সরবরাহকারী বলে দাবি করেছে র‌্যাব।

তিনজনের কাছ থেকে তিনটি উগ্রবাদী বই, ৯টি লিফলেট ও ২টি ব্যাগ উদ্ধারের কথাও জানিয়েছে বাহিনীটি।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে বুধবার দুপুরে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান বাহিনীর আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি জানান, নারায়ণগঞ্জ থেকে চলতি বছরের মার্চে নিরুদ্দেশ হন আবু বক্কর ওরফে রিয়াসাদ রাইয়ান নামের এক তরুণ। এ ঘটনায় তার পরিবার সংশ্লিষ্ট থানায় জিডি করে। নিরুদ্দেশ ৫৫ জনের তালিকায় আবু বক্করের নাম রয়েছে। এর আগের অভিযানে সংগঠনটির মহিলা শাখা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পায় র‌্যাব। বাহিনীটি জানতে পারে, একজন মা উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হন এবং একই ধরনের মতাদর্শে উদ্বুদ্ধ হওয়া নিজ সন্তানকে প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে তথাকথিত হিজরতে পাঠান।

র‌্যাবের এ কর্মকর্তা জানান, নিজ সন্তানকে প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে তথাকথিত হিজরতে পাঠানো মাকে ৫ নভেম্বর থেকে পরিবারের সান্নিধ্যে রেখে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা হয়। এরপর থেকে তিনি তার ভুল বুঝতে পেরে ছেলেকে ফিরে পেতে মরিয়া হয়ে ওঠেন।

র‌্যাব জানায়, আম্বিয়া সুলতানা এমিলি নামের ওই নারী স্বনামধন্য এয়ারলাইনসে চাকরি করতেন। আল-আমিন নামের এক শিক্ষক তার ছেলেকে পড়াতেন। সেই আল-আমিনের মাধ্যমেই তিনি ও তার ছেলে আবু বক্কর ২০২১ সালের প্রথম দিকে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ায় যোগ দেন। পরবর্তী সময়ে আবু বক্কর ২০২২ সালের মার্চে আল আমিনের নির্দেশনায় প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে হিজরতের নামে বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফিরে আসেননি।

অন্যান্য প্রশিক্ষণ শেষে গত সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝিতে আল আমিনের নির্দেশনায় পাহাড়ে প্রশিক্ষণের জন্য আবু বক্করকে বান্দরবানে দিয়ে যান গ্রেপ্তার রনি। আম্বিয়া সুলতানা এমিলি তার ছেলে নিরুদ্দেশ হওয়ার কারণ ও অবস্থান সম্বন্ধে জানলেও পরিবারের অন্য সদস্যদের কাছে তা গোপন রাখেন। পরবর্তী সময়ে নিজ ভুল বুঝতে পেরে এমিলি ছেলেকে ফিরে পেতে রনি সম্পর্কে র‌্যাবের কাছে তথ্য দেন। সে অনুযায়ী গোয়েন্দা নজরদারির মাধ্যমে রনিসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তারদের নিয়ে কী জানা গেল

গ্রেপ্তার হওয়া তিনজন সম্পর্কে খন্দকার আল মঈন জানান, আবদুল হাদি সুমন ওরফে জন সুনামগঞ্জের একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করতেন। তিনি দেড় বছর আগে শুরা সদস্য সৈয়দ মারুফ ওরফে মানিকের মাধ্যমে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার আদর্শে অনুপ্রাণিত হন। তিনি ছিলেন সংগঠনের ‘ক’ শ্রেণিভুক্ত অর্থদাতা।

র‌্যাবের এ কর্মকর্তা জানান, ৩ মাস আগে সংগঠনের শুরা সদস্য ও অর্থ শাখার প্রধান রাকিবকে সাংগঠনিক কার্যক্রমের জন্য ৯ লাখ টাকা দেন জন। ইংল্যান্ডে অবস্থানরত তার দুই ভাইয়ের কাছ থেকে বিভিন্ন মসজিদ মাদ্রাসায় দান করার কথা বলে এই টাকা সংগ্রহ করেন তিনি। এ ছাড়াও তিনি প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকা সংগঠনে চাঁদা দিতেন।

র‌্যাবের ভাষ্য, জন দুই মাস আগে হিজরতের উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হন এবং অন্যান্য প্রশিক্ষণ নিয়ে পাহাড়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন, কিন্তু পাহাড়ে র‌্যাবের অভিযান চলতে থাকায় তিনি চট্টগ্রামসহ বেশ কয়েকটি জায়গায় কিছুদিন অবস্থান করে নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ডে এসে রনির মাধ্যমে পার্বত্য অঞ্চলে হিজরতে যাওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন। সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর থানায় তার বিরুদ্ধে একটি সন্ত্রাসবিরোধী মামলা রয়েছে। ওই মামলায় তিনি ১০ দিন কারাভোগ করেছেন।

কমান্ডার মঈন জানান, আবু সাঈদ ওরফে শের মোহাম্মদ অনলাইন শরীয়াহ গ্র্যাজুয়েশন ইনস্টিটিউট নামের প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক ও তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। তিনি দেড় বছর আগে শুরা সদস্য ও অর্থ শাখার প্রধান রাকিবের মাধ্যমে উগ্রবাদে অনুপ্রাণিত হয়ে সংগঠনে যোগ দেন। তিনিও সংগঠনের একজন ‘ক’ শ্রেণিভুক্ত অর্থদাতা। তিনি ২ মাস আগে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য রাকিবের কাছে ৭ লাখ টাকা দেন। এ ছাড়াও প্রতি মাসে ৩০ হাজার টাকা চাঁদা দিতেন।

র‌্যাবের ভাষ্য, শের মোহাম্মদ বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে তার শরীয়াহ ইনস্টিটিউট, মসজিদ, মাদ্রাসা ও এতিমখানায় সহায়তার কথা বলে অর্থ সংগ্রহ করতেন। তিনি এক মাস আগে পাহাড়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হন, কিন্তু পাহাড়ে অভিযান চলমান থাকায় তিনি রনির মাধ্যমে বিভিন্ন কৌশলে পার্বত্য অঞ্চলে যাওয়ার জন্য একত্রিত হয়েছিলেন। তার বিরুদ্ধে ২০১৫ সালে চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা রয়েছে।

ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, গ্রেপ্তার রনি মিয়া স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি নারায়ণগঞ্জে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ব্যবসা করতেন।

রনি এক বছর আগে ছোটবেলার বন্ধু আল আমিন ওরফে আবদুল্লাহর মাধ্যমে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার আদর্শে অনুপ্রাণিত হন। এই আল আমিনই আম্বিয়ার সন্তান আবু বক্করের শিক্ষক ছিলেন। আল আমিনের নির্দেশে রনি গত সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে আবু বক্করকে বান্দরবানে পৌঁছে দেন। তিনি সংগঠনের দাওয়াতী কার্যক্রম ও হিজরতকৃত সদস্যদের বান্দরবানসহ বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছে দেয়ার কাজে জড়িত ছিলেন।

পার্বত্য অঞ্চলে র‌্যাবের অভিযান চলমান থাকায় গ্রেপ্তার আবদুল হাদি সুমন ওরফে জন ও আবু সাঈদ ওরফে শের মোহাম্মদ পাহাড়ে যেতে না পারায় বিভিন্ন কৌশলে পার্বত্য অঞ্চলে পৌঁছে দেয়ার জন্য রনির শরণাপন্ন হন। তারা নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় একত্রিত হয়েছিলেন।

এ বিভাগের আরো খবর